সকাল ১০ টা ৪০ মিনিট ৷ সূচি মতো দিল্লি থেকে অযোধ্যায় পৌঁছায় প্রধানমন্ত্রীর বিমান। তাঁকে স্বাগত জানাতে সেখানে উপস্থিত ছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। বিমান থেকে নামেন প্রধানমন্ত্রী ৷ তাঁর পরনে ছিল ঘিয়ে রঙের ধুতি, হালকা হলুদ পাঞ্জাবি ও গেরুয়া উত্তরীয় ৷ সেখান থেকে গাড়িতে করে অযোধ্যা পৌঁছান মোদী ৷ ঘড়িতে সাড়ে ১১টা ৷ ততক্ষণে সেখানে উপস্থিত হয়েছেন সংঘ প্রধান মোহন ভাগবত, উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল আনন্দীবেন প্যাটেল-সহ আমন্ত্রিতরা ৷
এদিন প্রথমেই গাড়ি থেকে নেমে প্রথমেই হনুমানগড়ি মন্দিরে যান প্রধানমন্ত্রী ৷ সারেন আরতি ৷ মন্দিরের তরফে তাঁর হাতে উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হয় বস্ত্র ও রূপোর মুকুট ৷ এরপর সারেন রামলালার দর্শন ৷ করেন সাষ্টাঙ্গে প্রণামও ৷ তারপর অংশ নেন মূল অনুষ্ঠানে ৷ পারিজাত গাছের চারা রোপণ করে শুরু হয় ভূমিপুজো ৷ তার আগে গণেশ বন্দনা ৷ ভূমিপুজোয় প্রধান শিলা-সহ আরও নয়টি শিলা পুজো করেন মোদী ৷ তাঁর সঙ্গে তিন পুরোহিত ছাড়াও দেখা যায় যোগী আদিত্যনাথ, আনন্দীবেন প্যাটেল ও মোহন ভাগবতকে ৷ ১২টা ৫১ মিনিটে শেষ হয় পুজো ৷ করেন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনও ৷ তারপর শুরু হয় বক্তব্য রাখার পালা ৷
প্রথমেই বক্তব্য রাখেন রাম জন্মভূমি ন্যাসের প্রধান নৃত্যগোপাল দাস ৷ বক্তব্য রাখতে গিয়ে খুশি দেখা যায় তাঁক চোখে-মুখে ৷ বলেন, ”দেশে মোদি আর রাজ্যে যোগী ৷ রামমন্দির এখন না হলে আর কবে হবে ৷” রামমন্দিরের দীর্ঘ টানাপোড়েনের ইতিহাসকে বক্তব্যে তুলে ধরেন যোগী ৷ তাঁর কথায়, ৫০০ বছরের দীর্ঘ লড়াইয়ের পর স্বপ্ন আজ সফল হল ৷
সংঘপ্রধান মোহন ভাগবত রাম জন্মভূমি আন্দোলনের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তাঁদের স্মরণ করেন ৷ তুলে ধরেন তাঁদের অবদানের কথা ৷ বলেন, “এই ঘটনায় অনেকেই সেই সময় বলিদান দিয়েছে। প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে লড়েছেন তাঁরা আজ এখানে সশরীরে উপস্থিত নেই । কিন্তু তাঁরা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। যেমন আদবানি’জি ঘরে বসে এই অনুষ্ঠান দেখছেন। এমন পরিস্থিতি আজ যে ইচ্ছে থাকলেও অনেককে ডাকা যায়নি । গোটা দেশে আজ আনন্দের ছবি। আনন্দ আরও এই কারণে যে, আত্মনির্ভর হওয়ার জন্য যে আত্মউপলব্ধির দরকার ছিল তা পূরণ হয়েছে।”
তবে সবার নজর ছিল প্রধানমন্ত্রী কী বলেন তার দিকে ৷ রাম-সীতাকে স্মরণ করে বক্তব্য শুরু করেন তিনি ৷ দর্শকাসনে বসে থাকা ব্যক্তিবর্গের উদ্দেশে বলেন, সমবেত স্বরে বলুন ”জয় শ্রীরাম৷” প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সমস্বরে শোনা যায় জয় শ্রীরাম ধ্বনি ৷ দিনটিকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে বলেন, ”আজ থেকে সরযূ নদীর তীরে সূচনা হল স্বর্ণযুগের ৷ সমগ্র দেশের জন্য আজ এক আবেগঘন দিন ৷”
প্রধানমন্ত্রীর কথায়,”প্রতিটি হৃদয় আজ উদ্বেলিত ৷ এত দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আজকের এই দিন ৷ এখনও হয়ত অনেকে বিশ্বাসই করতে পারছেন না ৷ এতদিন রামলালা অন্তরালে ছিলেন ৷ কিন্তু, আজ তাঁর জন্য মন্দির হচ্ছে ৷ বহু-বছর ধরে যে ভাঙা গড়ার খেলা চলে আসছে তা থেকে মুক্ত হল রামজন্মভূমি ৷”
প্রসঙ্গত, ২৯ বছর পর আজ অযোধ্যায় যান মোদি ৷ দিনটিকে তিনি স্বাধীনতা দিবসের সঙ্গে তুলনা করেন ৷ বলেন, ”এই মন্দিরের জন্য অনেকে জীবন বলিদান দিয়েছেন ৷ আজকের দিন ত্যাগ ও তপস্যার প্রতীক৷ আজ বিশ্বজুড়ে রাম-সীতা নাম ধ্বনিত হচ্ছে ৷ সারা বিশ্বের রামভক্তদের আজকের এই শুভদিনে শুভেচ্ছা জানাই ৷ এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।
তিনি আরও বলেন, “ভারতের আস্থায় রাম, আদর্শে রাম, দিব্যতায় রাম, দর্শনে রাম রয়েছেন ৷ ভারতে এমন কিছু বিষয় নেই যেখানে প্রভু রামের ঝলক দেখতে পাওয়া যায় না ৷ কন্যাকুমারী থেকে কাশিরভবানী, কোটেশ্বর থেকে কামাক্ষা, জগন্নাথ থেকে কেদারনাথ, সোমনাথ থেকে কাশি-বিশ্বনাথ- সারা দেশে আজ রাম নামের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে ৷”
দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে রামচন্দ্রকে একাত্ম করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রাম আমাদের মনে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন ৷ যে রামলালা একদিন তাঁবুতে থাকতেন, তাঁর জন্য বিশাল মন্দির তৈরি করা হবে ৷ বহু বছর ধরে যে ভাঙা-গড়ার খেলা চলে আসছে তা থেকে মুক্ত হল রাম জন্মভূমি ৷ এই রামমন্দির আমাদের সংস্কৃতির প্রতীক হবে ৷ এই মন্দিরের জন্য অনেকে জীবন বলিদান দিয়েছেন ৷ আজকের দিন ত্যাগ ও তপস্যার প্রতীক ৷” এই মন্দির অর্থনীতির চেহারা বদলে দেবে বলেও দাবি করেন তিনি ৷
Be the first to comment