তার মাথার দাম দশ লক্ষ টাকা। সারা দেশের পুলিশ তাকে খুঁজছে। সেই দাগী অপরাধী জয়পাল সিং ভুল্লার কী ভাবে নিউটাউনের সাপুরজি কম্প্লেক্সে নিশ্চিন্তে আত্মগোপন করে থাকেন! বুধবার পাঞ্জাবের কুখ্যাত গ্যাংস্টারের এনকাউন্টারের পর এই তথ্য খুঁজতে নেমে রীতিমতো স্তম্ভিত রাজ্য পুলিশ। দেখা যাচ্ছে রাজ্যে গা ঢাকা দিতে ও অস্ত্রব্যবসা চালাতে চালাতে রীতিমতো ছক কষেই নেমেছিল সে।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত ২৩ মে নিউটাউনের এই আবাসনে ফ্ল্যাট ভাড়া নেয় জয়পাল। কী ভাবে ফ্ল্যাট ভাড়া পেল তারা? দেখা যাচ্ছে ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়েছিলেন সিআইডি রোডের ইন্টেরিয়ার ডিজাইনার। ফ্ল্যাটের সন্ধানে নেমে একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্রোকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জয়পালরা। ব্রোকারকে তারা জানায়. তাদের টুবিএইচকে ফ্লাটই দরকার। আর সাপুরজি আবাসনেই যে তারা ফ্ল্যাট নিতে চায় সেটাও তারা পরিষ্কার করে দেয়। ওই ব্রোকার তখন এই ফ্ল্যাট মালিকের ভাইয়ের ফোন নম্বর দেয় জয়পালদের। এর জন্য কমিশনও পেয়েছিল সেই ব্রোকার। এই আবাসনের বাসিন্দা ২০ হাজার। ভিড়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে সুবিধে হবে, অভিজাত আবাসন হওয়ায় সন্দেহও হবে না। তাছাড়া এত লোকের মধ্যে এনকাউন্টারও কঠিন, এসব সাতপাঁচ ভেবেই শেষ ঠাঁই বেছেছিল ভুল্লার।
পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছে নিউটাউনের এই আবাসনে ফ্ল্যাট ভাড়া মাসে ১০ হাজার টাকা। অগ্রিম ২০ হাজার টাকা দিয়ে তবে ভাড়া এসেছিল জয়পাল। ফ্লাট মালিকের সঙ্গে তার চুক্তি হয়েছিল ১১ মাসের। জয়পালের যাবতীয় গতিবিধি খুঁজতে নেমেও পুলিশ দেখছে কোথাও এতটুকুও প্রস্তুতিতে ফাঁক রাখেনি সে। কোথায় যেত, কাদের সঙ্গে দেখা করত, কখন ফ্ল্যাট থেকে বেরতো, কখন ফ্ল্যাটে ঢুকত, এসব যাবতীয় তথ্য সিসিটিভি ফুটেজ এর মাধ্যমে জোগাড় করেছে পুলিশ। দেখা যাচ্ছে জয়পাল ফ্ল্যাট থেকে বেরোলেও প্রবেশ একপ্রকার নিষিদ্ধই ছিল তাঁর ফ্ল্যাটে। যাতায়াত করতো শুধুমাত্র অনলাইন ডেলিভারি বয়রা। মূলত খাবার পৌঁছে দিতে আসত এরা। জয়পাল তাদের ফ্ল্যাটে উঠতেও দিত না। নিজে নীচে নেমেই খাবার নিয়ে বিদায় দিত। নিরাপত্তা অটুট রাখতে এই সেই স্ট্রাটিজি নিয়েছিল।
কীসের ভিত্তিতে জয়পাল সিং ভুল্লারকে ভাড়া দেওয়া হল তা জানতে ফ্লাটের মালিককে আজকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে বিধাননগর থানার পুলিশ। গতকাল দুপুরে দিনের আলোয় সাপুরজি কমপ্লেক্সে অপারেশন চালায় রাজ্য পুলিশের বিশেষ বাহিনী। পাঞ্জাব পুলিশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেন বিনীত গোয়েল। যশপ্রীতকে নিয়ে নিয়ে কলকাতার যে আবাসনের লুকিয়ে ছিল জয়পাল, সেখানে তল্লাশির নির্দেশ দেন তিনি। এই এনকাউন্টারেই মৃত্যু হয় দাগী আসামী জয়পালের।
Be the first to comment