হার্ট অ্যাটাক নয়, গলা টিপে খুন করা হয়েছিল আইনজীবী রজত দে-কে। সেই চিহ্নও গলায় স্পষ্ট। ময়না তদন্তের রিপোর্টে উঠে আসছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। রিপোর্ট আসতেই রজতের স্ত্রী অনিন্দিতা পাল, তাঁর মা, বাবা ও দাদার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছে নিউটাউন থানার পুলিশ। শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত অনিন্দিতাকে তাঁর নিউটাউনের বাড়িতেই জিজ্ঞাসাবাদ করেন গোয়েন্দারা। তদন্তে গতি আনতে এডিসিপি রাহুল গোস্বামীর নেতৃত্বে তৈরি হয়েছে ৮ জনের বিশেষ কমিটি।
ময়না তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, রজতের গলায় সরু দড়ি পেঁচিয়ে বা গলা টিপে তাঁর শ্বাসরোধ করা হয়। সেই দাগ গলায় স্পষ্ট, রিপোর্টে সেই দাগের কথা উল্লেখ রয়েছে। ছেলেকে খুন করা হয়েছে বলে আগেই অভিযোগ করেছিলেন বাবা সমীর কুমার দে। রজতের স্ত্রী অনিন্দিতার বিরুদ্ধেই খুনের অভিযোগ দায়ের করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ময়না তদন্তের রিপোর্ট না এলে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হবে না বলে জানিয়েছিল পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসতেই খুনের সম্ভাবনাই স্পষ্ট হয়।
ইতিমধ্যেই অনিন্দিতার মোবাইলের কললিস্ট খতিয়ে দেখছে পুলিশ। গোটা ঘটনায় একজন ডাক্তারের নাম উঠে আসছে। যার সঙ্গে অনিন্দিতার প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন রজতের বন্ধুরা। এই ডাক্তারকে নিয়েই অনিন্দিতা-রজতের অশান্তি হতো বলেও জানা যায়। তদন্তের স্বার্থে সেই ডাক্তারের নাম এখনও প্রকাশ্যে আনেনি পুলিশ।
শুক্রবার গোয়েন্দাদের প্রশ্নের মুখে অনেকবার অসংলগ্ন কথা বলে ফেলেন অনিন্দিতা বলে জানা যাচ্ছে। প্রথম বয়ানে অনিন্দিতা জানিয়েছিলেন, রজতকে তিনি অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন। কিন্তু, আজ তিনি বলেন, “আত্মহত্যা করেছেন রজত”। দুটি বয়ানে এত বড় ফারাক রহস্য বাড়াচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
২৬ নভেম্বর রাতে হাইকোর্টের আইনজীবী রজত কুমার দে-র মৃতদেহ তাঁর নিউটাউনের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়। নিউটাউনের ডিবি-৯৭ নম্বর ফ্ল্যাটে স্ত্রী অনিন্দিতা ও দেড় বছরের ছেলেকে নিয়ে খাকতেন রজত। আইনজীবীর মৃত্যু প্রথম থেকেই রহস্যে ঘেরা ছিল। ছেলেকে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে বলে দাবি করেন রজতের বাবা। একই অভিযোগ তোলেন রজতের বন্ধুরাও। নিজের বয়ানে অনিন্দিতাও জানান রজতের মৃত্যু নিছক হার্ট অ্যাটাক বা অন্য কোনও শারীরিক অসুস্থতার কারণে। পুরো বিষয়টিই ময়না তদন্তের রিপোর্টের উপর নির্ভর ছিল।
এবার সেই রিপোর্টই জানাচ্ছে, খুন করা হয়েছে রজতকে। বৃহস্পতিবার রিপোর্ট আসতেই অনিন্দিতা ও তাঁর বাপের বাড়ির লোকেদের থানায় আসতে বলা হয়। যা গ্রাহ্য করেননি অনিন্দিতা বলে জানাচ্ছে নিউটাউন থানার পুলিশ। আপাতত নিউটাউনের ফ্ল্যাট ছেড়ে সল্টলেকে নিজের বাপের বাড়িতে রয়েছেন অনিন্দিতা। শুক্রবার অনিন্দিতাকে তাঁর নিউটাউনের ফ্ল্যাটেই আসতে বলে পুলিশ। সেখানেই তাঁকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করেন গোয়েন্দারা।
Be the first to comment