উপরের রাংতাটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের। আর তার ভিতরেই নাকি আঁকা হয় রাষ্ট্রের কাঠামো গুঁড়িয়ে দেওয়ার নীল নকশা। এ বার সেই এনজিওগুলির উপর নজরদারি চালাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক নির্দেশিকা পাঠালো সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরের যুগ্ম সচিব ড্যানিয়েল ই রিচার্ডস লিখিত আকারে সমস্ত রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসনের কাছে জানিয়েছে সমস্ত এনজিওগুলিকে ‘মনিটরিং’ করতে হবে। ওই নির্দেশিকায় কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, বিদেশের টাকায় এই এনজিওগুলি আসলে রাষ্ট্রবিরোধী কাজেরই আঁতুড়ঘর।
সরকারি আধিকারিকদের মতে, যে কোনও উন্নয়নমূলক কাজে বাধা দেওয়ার আন্দোলনে এই এনজিওগুলিই থাকছে সামনের সারিতে। দৃষ্টান্ত হিসেবে উঠে এসেছে তুতিকোরিনের ঘটনা। তামিলনাড়ুর এই জনপদে সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রাণ গিয়েছিল ১১ জনের। মনে করা হচ্ছে এই গোটা আন্দোলনের পিছনে ছিল একটি এনজিও।
২০১৪ সালে সরকারের কাছে জমা পড়েছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের রিপোর্ট। যাতে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল, বিদেশের টাকায় চলা এনজিও এ দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে পাঁচিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গত চার বছরে প্রায় সাড়ে ছ’হাজার এনজিও-র রেজিস্ট্রেশন বাতিল করেছে কেন্দ্র। নজরদারির তালিকায় রয়েছে বাম বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত তিস্তা শীতলাবাদের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও। ভারভারা রাও, গৌতম নাভালকা, সুধা ভরদ্বাজের মতো সমাজকর্মীদের গ্রেফতারের পর ব্যাপক শোরগোল পড়েছিল জাতীয় রাজনীতিতে। পুনে পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে গ্রেফতার করে এঁদের। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে থাকতে হয় গৃহবন্দি হয়ে। কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রকের একটি সূত্রের দাবি, এঁদের পিছনেও রয়েছে একটি এনজিও।
বিভিন্ন এনজিওতে ২০১৪-১৫ অর্থ বর্ষে মোট যে বিদেশের টাকা এসেছিল তার পরিমাণ প্রায়, ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে সেটা কমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকায়।
এমনিতেই কেন্দ্রীয় সরকার টার্গেট করেছে ২০২১ সালের মধ্যে গোটা দেশকে নকশালমুক্ত করবে। উগ্রবাম শক্তির বিরুদ্ধে সরকার যে কঠোর তা বোঝাতে কয়েক দিন আগেই র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের শৌর্য দিবসে কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছিলেন, “আগে দেশের তিনশোর বেশি জেলা মাওবাদী অধ্যুষিত ছিল। এখন সেটা কমে দাঁড়িয়েছে দশ-পনেরোতে।” বাংলায় এনজিও-র আড়ালে রাষ্ট্রবিরোধী কাজের অভিযোগ নতুন নয়। জঙ্গলমহলে যখন মাওবাদীদের দাপট ছিল তখন এরকম অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নাম উঠে এসেছিল। জঙ্গলমহল এখন আপাত শান্ত হলেও কেন্দ্র চায় সমস্ত রাজ্যই এই সংস্থাগুলির উপর কড়া ‘মনিটরিং’ চালাক।
Be the first to comment