নিমতায় যুবকের রহস্যমৃত্যু, খুনের অভিযোগ পরিবারের

Spread the love

নবমীর রাতে ঠাকুর দেখে বান্ধবীকে ছাড়তে গিয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনার নিমতা এলাকায়। বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় বছর কুড়ির দেবাঞ্জন দাসের। দশমীর ভোরে তার দেহ বিরাটি রেলগেটের সামনে একটি গাড়ির ভিতর থেকে উদ্ধার হয়। প্রাথমিকভাবে পরিবারের সকলে বিষয়টিকে দুর্ঘটনা হিসেবে মেনে নিলেও দেবাঞ্জনের বাবা অরুণ দাস ঘটনাটি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিতে থাকেন। সন্দেহ হওয়ায় ঘটনার তিনদিন পর তিনি নিমতা থানার সামনে দুর্ঘটনাগ্রস্থ গাড়িটি দেখতে যান। গাড়ির ভিতরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে সিটের তলা থেকে বুলেটের ভাঙা অংশ মেলে। তারপরই নিমতা থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করতে যান অরুণবাবু।

তবে, অরুণবাবুর অভিযোগ নিতেই অস্বীকার করেছে নিমতা থানার পুলিশ। ঘটনাটিকে বার বার থানার তরফে দুর্ঘটনা হিসেবেই চালানো হচ্ছিল। অভিযোগ নিতে জোর করায় তাদের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করার হুমকিও দেওয়া হয়। ঘটনায় বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের দারস্থ হয়েছেন অরুণবাবু।

নিমতা থানা এলাকার বাসিন্দা দেবাঞ্জনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল নিমতারই সর্দার পাড়ার বাসিন্দা এক যুবতির। দুর্ঘটনার দিন রাতে তাকে ছেড়েই বাড়ি ফিরছিল দেবাঞ্জন। তারপরই দুর্ঘটনা ঘটে। তবে, খুনের বিষয়টি শোনার পর তার বক্তব্য, দেবাঞ্জন তাকে কোনও হুমকি বা ভয়ের কথা বলেনি কোনওদিন। ঘটনার দিন রাতে তারা সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকে ফিরছিলো। দেবাঞ্জন তাকে বাড়ি নামিয়ে চলে যায়। এরপর দেবাঞ্জনের বেশ কয়েকটা ফোন আসে তার নম্বরে। কিন্তু সে বাথরুমে থাকায় ফোন ধরতে পারেনি। পরে সে দেবাঞ্জনকে ফোন করলে দেবাঞ্জনের ফোন থেকেও কোনও উত্তর আসেনি। এরপরই থানা থেকে দেবাঞ্জনের দুর্ঘটনার কথাটি জানানো হয়।

বয়ানের পর যুবতি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিতে শুরু করে অরুণবাবুও। তিনি জানতে পারেন দেবাঞ্জন ছাড়াও তার আরও কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে। পুলিশেরও প্রাথমিক অনুমান, যদি এটি খুন হয়, তবে ঘটনার পিছনে ত্রিকোণ প্রেমের হাত থাকতে পারে। এখানে দমদমের ছাতাকলের বাসিন্দা প্রিন্স সিং নামে এক যুবকের নাম উঠে আসছে। তবে, প্রিন্সের নামে থানায় অভিযোগ করতে গেলে থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অভিযোগটি নিতে অস্বীকার করেন। উল্টে দেবাঞ্জনের পরিবারকে ভয় দেখায় বলে অভিযোগ ওঠে। এদিকে আজ নিমতা থানায় পৌঁছন ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দেন।

এদিকে, ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে দেবাঞ্জনের ঘাড়ের কাছে ও হাতে দুটো গোল ক্ষত পাওয়া গেছে। এখন ময়নাতদন্তের সম্পূর্ণ রিপোর্ট এলেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তবে এই ঘটনায় পুলিশের প্রতি ক্ষোভ উগড়ে দেয় দেবাঞ্জনের পাড়ার বাসিন্দারা। দেবাঞ্জনের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে এলাকার কাউন্সিলর দেবাশিস ব্যানার্জি। তিনি জানান, সাধারণ ভাবে দেখে বোঝাই যাচ্ছে ওটা নিছক গাড়ি দুর্ঘটনা নয়। তাঁর দাবি, মৃতের পরিবার বারবার থানায় গেলেও তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় মানহানির মামলার ভয় দেখিয়ে। তিনি গোটা ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*