নির্ভয়ার কন্ঠস্বর আজও স্পষ্ট কানে ভাসে মায়ের

Spread the love

২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর। দিনটা মনে করতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। এই দিনেই দিল্লিতে গণধর্ষণ ও অকথ্য অত্যাচারের শিকার হয়েছিল নির্ভয়া। আর তার কিছুদিন পরেই সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে মৃত্যু। মৃত্যুর আগে শুধু একটাই জিনিস চেয়েছিলেন। কঠোর শাস্তি হোক দোষীদের। দীর্ঘ আট বছর কেটে গিয়েছে বিচার পেতে পেতে। কিন্তু দেরিতে হলেও নির্ভয়ার চার দোষীকে ফাঁসি কাঠে ঝোলানো হল।

দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে দাঁতে দাঁত চেপে পড়েছিলেন। অপেক্ষা করেছিলেন মেয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী যারা, তারা কঠোর শাস্তি পাবে। লক্ষ্যভ্রষ্ট হননি। হাল ছেড়ে দেননি। সাহস জুগিয়েছিল নির্ভয়ার একটাই কথা ‘দোষীদের যেন শাস্তি হয়’। সুপ্রিম কোর্টের রায় শুনে বাড়ি ফিরে তবুও মেয়ের মুখটাই ভাসছে মা আশা দেবীর চোখের সামনে। কিন্তু এতো বছরের চেষ্টা সফল। তাই শান্তিতে মেয়ের মুখটা কল্পনা করেছেন বলে জানিয়েছেন আশা দেবী নিজেই। ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পরেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন নির্ভয়ার মা। তিনি বলেন, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট সমস্ত আবেদন খারিজ কইরে দেওয়ার পরেই বাড়িতে এসে আগে মেয়ের ছবি জড়িয়ে ধরি।

অন্যদিকে তাঁর আত্মীয়রা বলছেন, আত্মবিশ্বাসে কোনদিন ঘাটতি পড়েনি আশা দেবীর। জানতেন যে দোষীদের একদিন মৃত্যুদণ্ড হবেই। কিন্তু কীভাবে এত মনের জোর পেয়েছিলেন তিনি। আশা দেবী জানান যে আজও স্পষ্ট মনে আছে সেই দিনের কথা যেদিন নির্ভয়া বাড়িতে থেকে বেরিয়েছিল। “মা আসছি। আমি ২-৩ ঘন্টার মধ্যেই ফিরে আসব”। এই বলে বেরিয়ে গিয়েছিল বাড়ি থেকে নির্ভয়া। ওই কথাটা আজও কানের পাশে স্পষ্ট শুনতে পান আশা দেবী। জানেন, নিজের মেয়েকে কোনদিন দেখতে পাবেন না। তবুও মায়ের কাছে ওই কথা গুলো আজও জীবন্ত।

আশা দেবী এর আগে এক সাক্ষাতকারে জানিয়ে ছিলেন, মৃত্যুর থেকেও যেদিন দেখেছিলেন মেয়ের শরীরে অজস্র নল লাগানো। জলটাও খেতে পারছিল না সে। তখন মায়ের কাছে কয়েক ফোঁটা জল খেতে চেয়েছিল। গলার ভিতরটা পুরো ক্ষতয়ে ভরে গিয়েছিল। চিকিৎসকরা নিষেধ করায় সেদিন জলটাও খাওয়াতে পারেননি মেয়েকে। তাই আজও এক গ্লাস জল খাওয়ার সময়ও সেই দৃশ্যই ফুটে ওঠে নির্ভয়ার মায়ের সামনে। বাড়ির সবার খেয়াল রাখতো নির্ভয়া। কিন্তু সেদিন মেয়ের মুখে জলটাও তুলে দিতে পারেননি বলে আজও মায়ের মনের ক্ষত দগদগ করছে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*