“মেয়েটা সুবিচার পেল”, চোখে জল নির্ভয়ার মায়ের

Spread the love

১৩ দিন সেই লড়াই আজ স্বার্থকতা পেল ! সে-দিন সুবিচারের দাবিতে হাঁড়কাপানো ঠান্ডায় দিল্লির রাজপথ গর্জে উঠেছিল ৷ দাঁত দাঁত চেপে সেই লড়াই যেন সফল হল ৷ চার দোষীর সাজা ঘোষণা করল আদালত ৷ ফাঁসির সাজা ৷ সাত বছর ধরে চেপে রাখা চোখের জল আর বাঁধ মানল না ৷ বলে উঠলেন, মেয়েটা সুবিচার পেল ৷

তিনি আশাদেবী ৷ সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের এক গৃহবধূ ৷ পরিচিতি তেমন ছিল না বললেই চলে ৷ কিন্তু, ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৷ হিসেব-নিকেশ সব পালটে দিয়েছিল সেই রাতটা ৷ ২৩ বছরের মেয়েটাকে ধর্ষণের পর যৌনাঙ্গে লোহার রড ঢুকিয়ে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা ৷ দেহের বাইরে বেরিয়ে এসেছিল জরায়ুর বেশ কিছুটা ৷ জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা ১৩ দিনের মাথায় থমকে গিয়েছিল নির্ভয়ার লড়াই ৷ আর তারপর সুবিচারের দাবিতে শুরু হয়েছিল আর এক লড়াই ৷ সুবিচারের লড়াই ৷ দাবি ছিল একটাই ৷ চরম শাস্তি ৷ অবশেষে দিল্লির পাতিয়ালা হাউজ কোর্ট চার দোষীর ফাঁসির সাজা ঘোষণা করল ৷

ভাঙা ভাঙা গলায় বলে উঠলেন, “মেয়েটা বিচার পেল ৷ আজকের রায়ের ফলে দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা বাড়ল ৷” স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে আদালতে হাজির হয়েছিলেন বদ্রীনাথ সিংও (নির্ভয়ার বাবা) ৷ যারা মেয়েটাকে কেড়ে নিয়েছিল, তাদের চরম শাস্তি কথা শুনে নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি ৷ আদালত কক্ষেই হাউহাউ করে কেঁদে উঠলেন ৷ না৷ ক্ষোভ-ভয়-অপমানের নয়৷ এই কান্না আবেগের ৷ দীর্ঘ লড়াইয়ের পর সাফল্যের ৷ কথায় কথায় বলে ফেললেন, “অনেকগুলো রাত চোখের পাতা এক করতে পারিনি ৷ চোখ বন্ধ করলেই মেয়ের মুখটা ভেসে উঠল ৷ বহুদিন নিজের সঙ্গে লড়াই করেছি ৷ সুবিচারের আশায় আইনের দরজায় দরজায় ঘুরে বেরিয়েছি ৷ আশা ছিল, সুবিচার পাবই ৷”

গত বছর ডিসেম্বরেই আদালত রায় শোনাতে পারে বলে মনে করা হয়েছিল ৷ কিন্তু, নানা কারণে তা পিছিয়ে যায় ৷ সংবাদ মাধ্যম থেকে জেনেছিলেন আজ রায় ঘোষণা হতে পারে ৷ গতকাল সারাটা রাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি তাঁরা, নির্ভয়ার বাবা-মা ৷ বার বার মেয়ের ছবিটা বুকে আঁকড়ে ডুকরে কেঁদে উঠছিল মনটা ৷ একে অপরকে সান্তনা দেওয়া ছাড়া আর কিছুই যেন সম্বল ছিল না তাঁদের ৷ রাতের অন্ধকার গাঢ় হয়েছে, ততই যেন মেয়ের প্রতি বাবা-মায়ের বুক চাপা কান্নাটা তীব্র হয়েছিল ৷

সকাল হতেই তড়িঘড়ি আদালতে চলে যান আশাদেবী-বদ্রীনাথ সিং ৷ বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষাও করেছিলেন ৷ বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ রায় ঘোষণা হতে আর চেপে রাখতে পারেননি আবেগ ৷ সব শেষে, আদালতের বাইরে তাঁরা যখন দাঁড়িয়ে তামাম সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হচ্ছিলেন, তখনও চোখের কোণটা চিকচিক করছে ৷

শুধু নির্ভয়ার বাবা-মা নন, খুশি দেশের প্রতিটি মানুষ ৷ তবে রায় জানাতে অনেক দেরি করল আদালত বলে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন দিল্লির মহিলা কমিশনের প্রধান স্বাতী মালিওয়াল ৷ বলেন, “দেশের প্রতিটি নির্ভয়ার জয় হল আজ ৷ নির্ভয়ার বাবা-মায়ের সাত বছরের লড়াইকে কুর্নিশ জানাই ৷ কিন্তু, কেন সাত বছর সময় লাগল দোষীদের শাস্তি দিতে? কেন এই সময়টা কমিয়ে আনা গেল না?”

দিল্লি আদলতের রায়কে সম্মান জানালেন পঞ্জাব মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন মনীষা গুলাটি ৷ বলেন, “এটা খুবই ভালো সিদ্ধান্ত ৷ আমি এটাকে শ্রদ্ধা করি ৷ এবার নির্ভয়ার আত্মা শান্তি পাবে ৷ দেশের প্রতিটি মেয়ে আজ বিচার পেল ৷”

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*