দক্ষিণ দিনাজপুর
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা। জেলার সদর শহর বালুরঘাট শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে বোল্লা গ্রামে অবস্থিত ঐতিহ্য ও মাহাত্ম্য সমৃদ্ধ রক্ষা কালী মাতা মন্দির। যা উত্তরবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বোল্লা কালী পুজো ও মন্দির। এই মাতা বোল্লা কালী মাতা বলেই সুপ্রসিদ্ধ।
রাসপূর্ণিমার পরবর্তী শুক্রবারে মায়ের বাৎসরিক পুজো অনুষ্ঠিত হয় ও সোমবারে মায়ের বিসর্জন হয়। এই কয়েকদিন যাবত মায়ের পুজোকে ঘিরে বিশাল মেলা হয়। এছাড়াও প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও মঙ্গলবারে মায়ের পুজো হয়। এই মেলা উত্তরবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও ঐতিহ্যপূর্ণ। দুই দিনাজপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলা ও রাজ্য, এমনকি বাংলাদেশ থেকেও বহু মানুষ এই মেলা দেখতে আসেন। কথিত আছে, জনৈক এক ব্যক্তি মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুকুর থেকে মায়ের শিলাময় রূপটি উদ্ধার করেন ও প্রতিষ্ঠা করে নিত্য পূজা শুরু করেন। এই সময়ে মাকে ‘মরকা কালী’ বলে অভিহিত করা হত।
প্রতি জ্যৈষ্ঠ মাসের অমাবস্যায় হত মায়ের বিশেষ পূজা। এরপর ইংরেজ আমলে স্থানীয় জমিদার মুরারিমোহন চৌধুরী ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। ঘটনাক্রমে বহু গ্রামবাসী সহ তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তখন তিনি মড়কা কালী মায়ের কাছে প্রার্থনা করেন। তিনি বেকসুর খালাস পান। জ্যৈষ্ঠ মাস আসতে দেরি থাকায়; সেই সময় তিনি ধার্য করেন যে, রাস পূর্ণিমার পরবর্তী শুক্রবারে মায়ের পুজো করবেন। সেই থেকে দেবীর বাৎসরিক পুজো ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সালটা ১৯২০। মা তখন থেকে রক্ষা কালী নামে পরিচিত হন।
তখন ছোট করে পূজা হলেও কালে কালে পূজার বহর ও কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে সাড়ে সাত হাত মাতৃমূর্তি পূজিত হন। কয়েক হাজার পাঁঠাবলি ও একটি মহিষ বলি হয়। প্রায় ১৪ কেজি সোনার গহনায় মায়ের প্রতিমা সজ্জিত হয়। বহু ভক্ত মানত করা ছোট ছোট কালী মূর্তিতে পূজা দেন ও বাতাসা নৈবেদ্য অর্পণ করেন। স্থানীয় মুসলিমরাও হিন্দুদের সাথে মায়ের উদ্দ্যেশ্যে পুজো দেন। বল্লভ মুখোপাধ্যায় বলে কোনো জমিদারের নাম থেকে অঞ্চলটির নাম হয় বোল্লা। বোল্লা গ্রামে অবস্থিত রক্ষা কালী মাতা ‘বোল্লা রক্ষা কালী’ বা ‘বোল্লা কালী’ নামে ভক্ত মহলে সুপ্রসিদ্ধ। আর সে থেকেই বোল্লা কালী মাতার পুজো হয়ে আসছে ভক্তি ও শ্রদ্ধা সহ। চলতি বছরের নভেম্বর মাসে রাস পূর্ণিমার পরের শুক্রবার বোল্লা পুজো। হবে যাকে ঘীরে এলাকা অল্প সমগ্র দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা উৎসব মুখরিত হয়ে উঠবে ঘিরে বোল্লা মন্দির প্রাঙ্গনে বসবে মেলা। বোল্লা কালীর হাতে থাকছে আড়াই টনের সোনার রামদা, এবং মন্দিরের সমস্ত অলংকার।
এই পুজোকে ঘিরে পুজো প্রাঙ্গণে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সাদা পোশাকের কয়েকশো পুলিশ প্রহরায় থাকবে পাশাপাশি মন্দির ও মেলা চত্বর সিসিটিভির আওতায় থাকছে। হাতে মাত্র আর প্রায় দেড় মাস তার আগে প্রতিবছরের ন্যায় বোল্লা এলাকায় মায়ের পুজো ও মেলাকে ঘীরে যে সম্প্রতির মেলবন্ধন ঘটে তারই অপেক্ষায় অপেক্ষারত এলাকাবাসী সহ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মানুষরা। বোল্লা এলাকায় সকল শ্রেনীর মানুষদের পুজো নিয়ে ব্যাস্ততা এখন তুঙ্গে আর দেড় মাস আগে থেকেই চলছে তা নিয়ে জোর কদমে প্রস্তুতি।
Be the first to comment