ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে নতুন করে আতঙ্ক তৈরি হলেও সার্বিকভাবে দেশে সংক্রমণের সংখ্যা কমেছে। রাজ্যেও দৈনিক সংক্রমণের গ্রাফ নিম্নমুখী। তবে দেশের নিরিখে রাজ্যে নমুনা পরীক্ষার হার অনেকটাই কম। তাই সংক্রমণের দৈনিক হিসেব কতটা স্বস্তিদায়ক, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। একদিকে যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বারবার করোনা পরীক্ষার ওপর জোর দিতে বলছেন, অন্যদিকে তখন রাজ্য নমুনা পরীক্ষায় জায়গা পেয়েছে শেষ পাঁচে। তাই কেন্দ্রের করোনা সংক্রান্ত বৈঠকের পরই নড়েচড়ে বসল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। তড়িঘড়ি বৈঠক বসল স্বাস্থ্য ভবনে। নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে কিট কেনার নির্দেশ দিলেন স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম।
ওমিক্রনের বাড়বাড়ন্তের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সবকটি রাজ্যের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে একটি বৈঠক করে কেন্দ্র। পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টশনের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে, ওমিক্রনের বিপদ ঠিক কতটা। পরিস্থিতির অবনতি হলে প্রস্তুতির নিরিখে কোন রাজ্য কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে তাও দেখানো হয় বলে স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর।
দেখা যাচ্ছে, করোনা পরীক্ষায় দেশের মধ্যে পিছনের সারিতে রয়েছে রাজ্য। প্রতি ১০ লক্ষে কতজনের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে, সেই হিসেব করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, গত দু’সপ্তাহ ধরে পশ্চিমবঙ্গ একেবারে পিছনের সারিতে রয়েছে। সবচেয়ে কম টেস্ট হয়েছে যে পাঁচটি রাজ্যে, পশ্চিমবঙ্গ তার মধ্যে অন্যতম। সেই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া রয়েছে নাগাল্যান্ড (নমুনা পরীক্ষা হয়েছে প্রতি ১০ লক্ষে ১৭৩৪), অরুণাচল প্রদেশ (নমুনা পরীক্ষা হয়েছে প্রতি ১০ লক্ষে ২২৪৭), সিকিম (নমুনা পরীক্ষা হয়েছে প্রতি ১০ লক্ষে ৩৩৯৬) ও রাজস্থান (নমুনা পরীক্ষা হয়েছে প্রতি ১০ লক্ষে ৪৫০৬)। আর রাজ্যে প্রতি ১০ লক্ষে ৪৯৫২ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
আর দ্বিতীয় ডোজের নিরিখে প্রথম পাঁচেও নেই বাংলা। বাংলা রয়েছে একাদশ স্থানে। প্রথম অরুণাচল প্রদেশ। এরপর অসম, রাজস্থান, তেলঙ্গনা, হরিয়ানা, ওডিশা, ছত্তীসঢ়, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ।
এই অবস্থায় দ্রুত পরীক্ষা বাড়তে উদ্যোগী হল স্বাস্থ্য ভবন। শুক্রবারের বৈঠকে স্বাস্থ্য সচিব নির্দেশ দিয়েছেন যাতে টেস্টের সংখ্যা বাড়াতে কিট কেনা হয়, মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া কিট রয়েছে কি না, তাও দেখতে বলা হয়েছে। এ দিন আধিকারিকদের কাছে স্বাস্থ্য সচিব জানতে চান, ওষুধের মজুত কেমন রয়েছে রাজ্যে। পর্যাপ্ত ওষুধের জোগান রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
স্বাস্থ্য সচিব উল্লেখ করেছেন, দ্বিতীয় ডোজে়র সংখ্যা বাড়াতেই হবে। টিকাকরণ সংক্রান্ত প্রচারে জোর দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন, অনেক সময় বিদেশ ফেরৎ যাত্রীদের একাংশ দেশে ফেরার সপ্তাহখানেক পরে পজিটিভ হচ্ছেন। তাই নজরদারি বাড়াতে হবে। ওমিক্রনের নিরিখে হোম আইসোলেশনে গুরুত্ব দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
অ্যাডমিশন সেল চালুর নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব। অনেক হাসপাতালে কোভিড ওয়ার্ডে নন কোভিড পরিষেবা চালু হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে সেই সকল ওয়ার্ডে যাতে পুনরায় কোভিড পরিষেবা চালু করা যায় তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এ দিন মূলত কোভিড পরীক্ষা, আইসোলেশন পরিকাঠামো, সেফ হোম, কন্টেনমেন্ট জোনের চিহ্নিতকরণ, কোভিড পজিটিভ রোগীদের ভর্তি, ওষুধের জোগান, ক্রিটিক্যাল কেয়ার পরিকাঠামো, অক্সিজেন সরবরাহ, অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা, পেডিয়াট্রিক চিকিৎসা পরিকাঠামো ও টিকাকরণ নিয়ে আলোচনা হয়।
Be the first to comment