সাসপেনশনের বিরুদ্ধে রাতভর ধরনায় সাংসদরা, বিরোধীদের পাল্টা প্যাঁচে চাপে কেন্দ্র

Spread the love

মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনার দাবি তুলে রাজ্যসভা থেকে সাসপেন্ড বিরোধী দলের সাংসদরা সংসদ চত্বরে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে একটানা পঞ্চাশ ঘণ্টার ‘শান্তিপূর্ণ সত্যাগ্রহ’ নাম দিয়ে রিলে অবস্থান শুরু করেছেন বুধবার সকাল ১১টা থেকে। রাতেও সংসদ চত্বরে চলে ধরনা। জোটবদ্ধ বিরোধীদের চাপের মুখে পড়ে সরকারপক্ষ আলোচনায় রাজি হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। বিরোধী শিবিরকে একজোট করে সরকার তথা বিজেপিকে চাপের মুখে ফেলার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসই।

সরকার পক্ষের উপর চাপ বাড়িয়ে বিরোধী শিবিরের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আগে বিরোধী দলের সাংসদদের সাসপেনশন প্রত্যাহার করা হোক, তারপরেই আলোচনার রাস্তা খুলবে। তাতে পালটা সরকারের তরফে বলা হয়েছে, সাসপেন্ড হওয়া সাংসদদের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়া হলে সাসপেনশন প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। যা খারিজ করে দিয়েছে বিরোধীরা।

এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন টুইট করে বলেছেন, সরকার চাইছে সাসপেন্ড হওয়া ১৯ জন সাংসদের পক্ষ থেকে বিরোধী দলগুলি দুঃখপ্রকাশ করুক। আমরা সরকারকে বলেছি, সরকারের দুঃখপ্রকাশ করা উচিত যে, তারা মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সংসদে আলোচনা হতে দিচ্ছে না। সাধারণ মানুষের বিষয় নিয়ে পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিরোধীদের ক্ষমা চাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।

সংসদের বাদল অধিবেশনে যোগ দিয়েই বিরোধী শিবিরের রাশ তৃণমূল হাতে নিয়ে নিয়েছে। বাদল অধিবেশনের প্রথম সপ্তাহে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কংগ্রেসই মূলত সরব হলেও দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এক্ষেত্রে সামনের সারিতে চলে এসেছে তৃণমূলই। বর্তমানে তারাই সাসপেন্ড হওয়া বিরোধী সাংসদদের নিয়ে পঞ্চাশ ঘণ্টার ম‌্যারাথন অবস্থানের আয়োজন করার পাশাপাশি বিরোধী শিবিরের প্রত্যেকেই যাতে অবস্থানে এসে কিছুক্ষণ কাটান, সেই ব্যবস্থাও করেছে। রাজ‌্যসভার সব বিরোধীদলের নেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধি ইস্যুকে সামনে রেখে বিরোধী জোটের রাশ তৃণমূল নিজেদের হাতে নিয়ে নেওয়ায় খানিকটা হলেও অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে কংগ্রেস।

আবার রাজ্যসভা থেকে একসঙ্গে কুড়ি জন সাংসদকে সাসপেন্ড করে বিপাকে পড়েছে সরকারপক্ষ তথা বিজেপি। বিষয়টা জনমানসে ভাল প্রভাব ফেলছে না, সেই বিষয়টি বুঝতে পেরেই পরিস্থিতি থেকে তারা বের হতে চাইছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এদিন সকালেই রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডুর ঘরে একপ্রস্থ বৈঠকের পরে রাজ্যসভার নেতা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল আলাদাভাবে বিরোধী নেতাদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। গোয়েলের সঙ্গে বৈঠকে রাজি না হওয়ায় ঘরোয়াভাবেই সেই আলোচনা হয়েছে। সেখানেই বিরোধীরা তাঁদের অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে দিয়েছেন।

এদিকে মুড়ির থালা, চিড়ের বাটি, দইয়ের হাঁড়ি নিয়ে বুধবার সকালে অধিবেশেন শুরুর আগেই গান্ধীমূর্তির সামনে ধরনা প্রদর্শন করেছেন তৃণমূল সাংসদরা। তার পাশেই মূল্যবৃদ্ধি—সহ একাধিক ইস্যু নিয়ে আলাদাভাবে ধরনা দিয়েছে কংগ্রেসও। সেখানেও অভিনবত্বে কংগ্রেসকে যে তৃণমূল টেক্কা দিয়েছে তা বললে অত্যুক্তি হবে না।

এদিন লোকসভাতেও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনার দাবিতে তৃণমূল যে সামনের সারিতেই থাকবে তা দলীয় সাংসদদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করেন লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধীদের সত্যাগ্রহ কর্মসূচিতে সাসপেন্ড হওয়া সাংসদরা দিনে দু’ঘণ্টা এবং রাতে চার ঘণ্টা পালা করে দুই থেকে চারজন অবস্থান স্থলে হাজির থাকবেন। রোস্টার তৈরির দায়িত্ব তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেব, মৌসম নুর ও ডিএমকে সাংসদ সমু কানিমোঝিকে দেওয়া হয়। আবার তাঁদের আহারের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন দলের মধ্যে।

বুধবারের মধ্যাহ্ণভোজনে দই-ভাতের ব্যবস্থা করেছিল ডিএমকে। দিনভর জুস, ফল, জলের ব্যবস্থা ও রাতের খাবারে রুটি, ডাল, পনির, তন্দুরি চিকেনের ব্যবস্থা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আবার বৃহস্পতিবার প্রাতরাশে ইডলি, দোসার ব্যবস্থা ডিএমকে করে। দিনভর চা—কফির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বামেদের। বিরোধীদের অবস্থানে সবার চোখে পড়েছেন তৃণমূল সাংসদ দোলা সেন। ‘অংসদীয়’ শব্দের তালিকা সম্বলিত নামাবলি গায়ে দিয়ে এবং সংসদে তিনবার সাসপেন্ড হওয়ার প্রতীক স্বরূপ তিনটি কালো ব্যাজ পড়ে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে চড়া রোদের মধ্যে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*