তপন মল্লিক চৌধুরী
রাজস্থানের পর এবার হিমাচল প্রদেশে নিষিদ্ধ হলো সঞ্জয় লীলা বানসালির পদ্মাবত । ওই রাজ্যের বিজেপি সরকার এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, পদ্মাবত ছবিটি হিমাচল প্রদেশের কোথাও মুক্তি দেওয়া হবে না । ছবিটি নিয়ে রাজ্যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি যাতে না হয় সেই কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে হিমাচল প্রদেশের রাজ্য সরকার।
আগেই জানানো হয়েছে, সঞ্জয় লীলা বানসালির পদ্মাবত ছবি দেশব্যাপী মুক্তি পাচ্ছে ২৫ জানুয়ারি । কিন্তু যে অঞ্চলের গল্প নিয়ে ছবির কাহিনি, সেই রাজস্থানেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে ছবিটি । এই রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গুলাব চাঁদ কাটারিয়া জানিয়েছেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের নির্দেশে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । ছবিটি নিয়ে রাজ্যে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হোক, তা তাঁরা চান না।
এদিকে রাজ্যের কট্টরপন্থী রাজনৈতিক দল করণি সেনা নতুন করে হুমকি দিয়েছে, দলটি দাবি করেছে, পদ্মাবত ছবির মূল চরিত্র বদল করতে হবে, তবেই ছবিটি রাজস্থানে মুক্তি দেওয়া হবে, তা না হলে বাধা দেওয়া হবে । করণি সেনার নেতা লোকেন্দ্র সিং কালভি ঘোষণা করেছেন, ২৭ জানুয়ারি চিতোরগড়ে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়েছে । যারা এই ছবির বিরুদ্ধে, তাদের ওই সভায় অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে । অন্যদিকে করণি সেনার সভাপতি সুখদেব সিং গোগামেদি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ছবিটি মুক্তি পেলে তার পরিণতির জন্য দায়ী থাকবে চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড ও বিজেপি সরকার।
আগেই জানানো হয়েছে পদ্মাবতী নামে নয়, সঞ্জয় লীলা বানসালির ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে পদ্মাবত নামে । সেই সঙ্গে ভারতের সেন্সর বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশনের (সিবিএফসি) নির্দেশ অনুযায়ী ছবিতে পাঁচটি পরিবর্তন করেছেন পরিচালক সঞ্জয় লীলা বানসালি । এদিকে ছবিটি মুক্তির প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজস্থানের করণি সেনা । সংগঠনটি ঘোষণা করেছে, কোনোভাবেই এই ছবির মুক্তি তারা মেনে নেবে না । সংগঠনটি সিবিএফসির চেয়ারম্যান প্রসূন যোশি, ভারতের কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, প্রতিমন্ত্রী রাজ বর্ধন সিং রাঠোরের পদত্যাগ দাবি করেছে।
গত ২৮ ডিসেম্বর সিবিএফসির প্রধান প্রসূন যোশি সংবাদমাধ্যমকে জানান, ছবিতে পাঁচটি পরিবর্তন করতে হবে । ১. ছবিতে অবশ্যই লিখতে হবে–এই ছবির সঙ্গে ঐতিহাসিক ঘটনার কোনো মিল নেই । ২. ছবির নাম পাল্টে পদ্মাবত করতে হবে । কারণ, ছবির চিত্রনাট্যে পরিচালকের শৈল্পিক নিদর্শন রয়েছে । আর ছবিটি তৈরি হয়েছে পদ্মাবত নামের একটি কাল্পনিক কবিতাকে অবলম্বন করে । ৩. ‘ঘুমার’ গানের কিছু পরিবর্তন করতে হবে । ৪. ঐতিহাসিক স্থান ও কাল নিয়ে কিছু তথ্য দেখাতে হবে । ৫. ছবিতে অবশ্যই লিখতে হবে– ভারত সতীদাহ প্রথাকে সমর্থন করে না । তাকে কোনোভাবে প্রচার বা গৌরবান্বিত করছে না । সিবিএফসির বিশেষ প্যানেলের বৈঠক শেষে প্রসূন যোশি জানিয়ে দেন, এই শর্তগুলো মানলে তবেই ছবিটি প্রদর্শনের অনুমতি দেওয়া হবে । এরপর গত ৩০ ডিসেম্বর প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনের অনুমতি পায় পদ্মাবতী ।
কিন্তু সিবিএফসির সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হতে পারেনি রাজস্থানের মেওয়ারের রাজপরিবার । এই রাজপরিবারের তিন সদস্য ভারতের কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচারমন্ত্রী এবং তথ্য প্রতিমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়ে বলেছেন, সিবিএফসির তাঁদের কোনো মতামত নেয়নি; বরং রাজপরিবারের তীব্র আপত্তি অগ্রাহ্য করে প্রদর্শনের ছাড়পত্র দিয়েছে চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড । রাজপরিবারের সদস্য মহেন্দ্র সিং কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি এবং প্রতিমন্ত্রী রাজ বর্ধন সিং রাঠোরকে চিঠি দিয়ে বলেছেন, বানসালি তাঁর ছবিতে ঐতিহাসিক চরিত্রগুলোকে যেভাবে তুলে ধরেছেন, তা সম্পূর্ণ ভুল । এর ফলে রাজপুত সমাজে ভুল বার্তা পৌঁছে যাবে।
এর আগে চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড ছবিটি দেখার জন্য দুটি প্যানেল তৈরি করে । এই প্যানেলে ওই রাজপরিবারের সদস্যও ছিলেন । মহেন্দ্র সিং অভিযোগ করে বলেন, দুটি প্যানেলকে ছবিটির বিশেষ প্রদর্শনী দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় । কিন্তু গোপনে ছবিটি দেখানো হয় একটি প্যানেলকে । পরে চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড এমনভাবে ঘোষণা দিয়েছে, যা দেখে মনে হবে, প্যানেলে থাকা সব সদস্য ওই সামান্য পরিবর্তন এনে ছবিটি প্রদর্শনের অনুমতি দিয়েছেন ।
মহেন্দ্র সিং বলেন, ‘বানসালি দাবি করেছেন, ছবিটি তিনি মহম্মদ জয়সীর কবিতা পদ্মাবত অবলম্বনে বানিয়েছেন । কিন্তু ছবির সঙ্গে ওই কবিতার বিষয়বস্তুর পার্থক্য রয়েছে । এ ক্ষেত্রে পরিচালক আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতিকেই শুধু বিকৃতই করেননি, কবিতাটিরও ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন ।’
মহেন্দ্র সিংয়ের ছেলে বিশ্বরাজ সিং এর আগে চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডকে চিঠি দিয়ে বলেন, ‘নাম পাল্টানোর মতো সামান্য কিছু বদল করলে ছবিটি বদলে যাবে না।’ তবে বিশ্বরাজ সিংয়ের সেই চিঠির কোনো জবাব দেয়নি চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড। রাজপরিবারের আরেক সদস্য অরবিন্দ সিং তথ্যমন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে লেখা এক চিঠিতে চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রসূন যোশির পদত্যাগ দাবি করেন ।
Be the first to comment