তপন মল্লিক চৌধুরী
ঝামেলা আর পিছু ছাড়ছে না পদ্মাবতীর থুড়ি পদ্মাবত-এর। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে যদি বা শেষ পর্যন্ত সঞ্জয় লীলা বানসালির ছবি সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়েছে। তবে, মুক্তির জন্য বানসালিকে ছবির নামইপাল্টে ফেলতে হয়েছে। দীপিকা পাড়ুকোন অভিনীত পদ্মাবতী নাম বদলে এখন হয়ে গেছে পদ্মাবত। তবু কি ঝামেলা থেকে রেহাই মিলছে? পদ্মাবতীর কপালে যেন শান্তি লেখা নেই। সম্প্রতি ভারতের মধ্যপ্রদেশের একটিস্কুলের শিক্ষার্থীরা এই ছবির ঘুমর গানের সঙ্গে নাচ পরিবেশন করে। খবর পেয়ে রাজস্থানের করনি সেনার সদস্যরা স্কুল পর্যন্ত ছুটে এসে হামলা চালিয়ে গেছে।
মধ্যপ্রদেশের রতলম শহরের সেন্ট পলস কনভেন্ট স্কুলে গত রবিবার ছিল বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে স্কুলের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পদ্মাবত ছবির বিতর্কিত গান ঘুমর-এর সঙ্গে নাচপরিবেশন করে। এই খবর করনি সেনা সদস্যদের কানে পৌঁছালে তাঁরা স্কুলে এসে ভাঙচুর চালায়। টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকায় প্রকাশিত কয়েকটি ছবিতে দেখা যায় করনি সেনার সদস্যরা স্কুলের চেয়ার ও সাউন্ড বক্সভাঙচুর করে চারপাশে ফেলে রেখে গেছে। এমন ভাঙচুর দেখে স্কুলের শিক্ষার্থীরা স্বভাবতই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। পরে স্কুল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার পর পরিস্থিতি আপাতত শান্ত। কিন্তু পদ্মাবতী বা পদ্মাবত নিয়ে করনি সেনাদের ক্ষোভ মিটছে না সেকথা তো সত্যি কিন্তু তারা যখন তখন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে আইন আদালতের তোয়াক্কা না করেই।
পদ্মাবত ছবির শুটিং করতে গিয়েও বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়েছে নির্মাতাকে। সঞ্জয় লীলা বানসালির এই ছবিটি শুরু থেকেই ভালোভাবে নিতে পারছেন না রাজপুত করনি সেনাসদস্যরা। প্রথমে গুজব রটে, এই ছবিতে না কি দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির সঙ্গে রানি পদ্মাবতীর একটি স্বপ্নের দৃশ্য আছে। সেই দৃশ্যে দুজনকে শোয়ার ঘরে দেখাগেছে। এ খবর ছড়ানোমাত্রই উগ্রবাদীরা হামলা চালায় পদ্মাবত ছবির সেটে, বহু মূল্যবান সেট তারা ভাংচুড় করে, আগুন পর্যন্ত ধরায়, এরপর কিছুদিনের জন্য ছবির শুটিং স্থগিত ঘোষণা করা হয়। জয়পুরে তাঁদের শুটিং করতে না দেওয়ায় কোলহাপুরে শুটিং শুরু হয়। সেখানেও ঘটে বিপত্তি। মাঝে কিছুদিন উগ্রবাদীরা চুপ ছিল। কিন্তু গতসেপ্টেম্বরে পদ্মাবতীর পোস্টার প্রকাশিত হওয়ার পর ছবিটি ঘিরে নতুন উত্তেজনা তৈরি হয়। রাজস্থানের জয়পুরের রাজ মন্দিরের সামনে পোড়ানো হয় এই ছবির পোস্টার। এই উত্তেজনা ছড়িয়ে যেতে থাকে সারা ভারতে। প্রথম গান ঘুমর প্রকাশের পরও বানসালি ও দিপীকাকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। বলা হয়, এখানে রানি পদ্মিনীকে অপমান করা হয়েছে।
ইতিহাসবিদ ও রাজপরিবারের সদস্যদের নিয়ে গঠিত সেন্সর বোর্ডের প্রিভিউ কমিটি কিছুদিন আগে পদ্মাবতী ছবিটিকে কিছু দৃশ্য পরিবর্তন করে মুক্তির ছাড়পত্র দিয়েছে। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল গত বছরের ১ ডিসেম্বর। আর নতুন করে মুক্তির তারিখ ঠিক হয় ২৫ জানুয়ারি। কিন্তু চিতরগড়ের ক্ষত্রিয় সমাজের ১০০ জন নারী ঘোষণাদিয়েছেন, পদ্মাবত মুক্তি পেলে তাঁরা রানি পদ্মাবতীর মতো সবাই একসঙ্গে আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করবেন। ইতিহাস নির্ভর বা ঐতিহাসিক কাহিনি ভিত্তিক ছবি এই প্রথম তো নয়, কিন্তু দেখা যাচ্ছে ইতিহাসবিদ কিংবা সমাজতত্ত্ববিদদের থেকে এ বিষয়ে অনেক বেশি মাথা ঘামিয়ে ফেলছেন এমন লোকজন যাদের সঙ্গে ইতিহাসের সত্যি কোনো সম্পর্ক বা যোগাযোগ নেই ।
Be the first to comment