সরকার তেলের দাম বাড়ানোয় বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল ১৭ নভেম্বর। প্রায় এক মাস কেটে গেলেও কমেনি জনরোষ। শনিবার প্যারিসের রাস্তায় নেমেছেন ৩১ হাজার মানুষ। ক্রিসমাসের মরসুমে দোকানপাট বন্ধ। বিক্ষোভ সামলাতে পথে টহল দিচ্ছে ৮ হাজার পুলিশ। গ্রেফতার হয়েছে ৭০০ জন।
বিক্ষোভকারীরা পথে নেমেছে হলুদ গেঞ্জি গায়ে দিয়ে। তাদের স্লোগান, প্রেসিডেন্ট মাক্রঁ গদি ছাড়। প্যারিসের বিখ্যাত সাঁজে লিজেতে জড়ো হয়েছে বিপুল সংখ্যক মানুষ। তারা প্রেসিডেন্টের বাড়ির দিকে যেতে চেষ্টা করেছিল। অতি কষ্টে তাদের থামিয়েছে পুলিশ। গত কয়েক দশকে ফ্রান্সে এত বড় বিক্ষোভ হয়নি।
বিক্ষোভকারীদের একজন জানিয়েছেন, তিনি পেশায় ট্রাক ড্রাইভার। নাম ডেনিস। তাঁর মতে, মাক্রঁ এমন এক নেতা যিনি শুধু ধনীদের স্বার্থ দেখেন। তাঁর কথায়, আমার সন্তান যাতে ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারে, সেজন্য রাস্তায় নেমেছি। আমি চাই না, ফ্রান্সে গরীবরা শোষিত হোক।
শনিবার প্যারিস বাদে ফ্রান্সের অন্যান্য প্রান্তেও বিক্ষোভ দেখিয়েছে হলুদ গেঞ্জি পরা বিক্ষোভকারীরা। তাদের ভিড়ে অচল হয়ে পড়েছে ফ্রান্সের বহু রাস্তা। ট্রেনে চড়ে দূরদূরান্ত থেকে অনেকে প্যারিসে বিক্ষোভ দেখাতে আসছে। রেলস্টেশনগুলিতে কড়া নজর রেখেছে পুলিশ। সাঁজে লিজে বা ব্যাস্তিল মনুমেন্ট, যেখানে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়, সেখানেও নজর রাখা হয়েছে। সবসময় লক্ষ রাখা হচ্ছে, বিক্ষোভকারীদের কারও কাছে মখোশ, হাতুড়ি, গুলতি বা পাথর আছে কিনা। কারও কাছে ওই জিনিসগুলি পেলে সঙ্গে সঙ্গে অ্যারেস্ট করা হচ্ছে।
লুটপাট, ভাঙচুরের ভয়ে দোকানপাট বন্ধ তো বটেই, এমনকী অনেক মেট্রো স্টেশন, মিউজিয়াম এবং আইফেল টাওয়ার বন্ধ রয়েছে। বাতিল করে দেওয়া হয়েছে একাধিক ফুটবল ম্যাচ ও কনসার্ট।
গত সপ্তাহে বিক্ষোভকারীরা ২০০-র বেশি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কাস্টানের বলেছেন, গত কয়েক সপ্তাহে একটা দৈত্যের জন্ম হয়েছে। তাকে আর নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। যারা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করতে চাইবে, তাদের প্রতি জিরো টলারেন্সের নীতি নিয়েছি আমরা।
ফ্রান্সে মাক্রঁ সরকার এখন গভীর সংকটে পড়েছে। বিশ্বের বিখ্যাত শহরগুলির অন্যতম প্যারিসে অশান্তির দিকে নজর রাখছে বিদেশীরাও। প্যারিসে আমেরিকার যে নাগরিকরা রয়েছেন, তাঁদের উদ্দেশে দূতাবাস থেকে বলা হয়েছে, ভিড় এড়িয়ে চলুন। বেলজিয়াম, পর্তুগাল এবং চেক সাধারণতন্ত্র থেকে নাগরিকদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, এখন প্যারিসে যাবেন না। মাক্রঁর দলের এমপি বেনো পতেরিকে একটি খামে ভরে বুলেট পাঠিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। তার সঙ্গে একলাইন চিঠি লিখেছে, কিছুদিনের মধ্যে এমন একটি বুলেট বিদ্ধ হবে তোমার দুই ভ্রুর মধ্যিখানে।
Be the first to comment