লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা তারপর কাউন্সেলিং—শিক্ষক নিয়োগের এই ‘দীর্ঘ’ প্রক্রিয়া কি অতীত হতে চলেছে? শনিবার তেমনই ইঙ্গিত দিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়েছে। শুধু লিখিত পরীক্ষার উপর ভিত্তি করেই শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা সম্পন্ন করা যায় কিনা সে ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে এ দিনের বৈঠকে।
এ দিন শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “পুরোটাই এখন প্রাথমিক পর্যায়ে আলোচনার স্তরে রয়েছে। শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের বলা হয়েছে, এই মর্মে তাঁরা আগে একটি খসড়া তৈরি করবেন। তারপর তা বাস্তবায়িত করতে যা যা পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া আছে, সেগুলি করা হবে।” পার্থবাবু আরও জানিয়েছেন, যে পরীক্ষাগুলি হয়ে গিয়েছে বা ইতিমধ্যেই বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে, সেগুলি হবে পুরনো নিয়মেই। অর্থাৎ লিখিত, মৌখিক এবং কাউন্সেলিং-এর মাধ্যমেই হবে নিয়োগ প্রক্রিয়া।
পার্থবাবু এ দিন আরও বলেন, “এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ার জন্যই নিয়োগে বিঘ্ন হচ্ছে।” আদালত, মামলা ইত্যাদি, প্রভৃতির কথা উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এই প্রক্রিয়া দীর্ঘ সময় সাপেক্ষ। তাই সেই সুযোগে কেউ কেউ কোর্ট কাছারি করছেন। ফলে পুরো বিষয়টি বিলম্বিত হচ্ছে। সেই ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষা থেকে শিক্ষা দফতরকে বারবার আদালতের চৌকাঠে হোঁচট খেতে হয়েছে। প্রাথমিক টেট পরীক্ষা নিয়ে হাইকোর্টের পর সুপ্রিম কোর্টেও ধাক্কা খেতে হয় প্রাথমিক শিক্ষা সংসদকে। এবং গত কয়েক বছরে বিরোধীরা বারবার শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে। বিজেপি, বাম-কংগ্রেসের বক্তব্য, “বেছে বেছে শাসক দলের লোককে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্যই এমন বন্দোবস্ত করেছে সরকার।” অনেকের মতে, লিখিত পরীক্ষার ভিত্তিতে নিয়োগ হলে মৌখিকে নম্বর বাড়িয়ে-কমিয়ে দেওয়া বা কাউন্সেলিং-এ সুপারিশ দেখে ভর্তির সুযোগ থাকবে না। সরকার হয়তো দুর্নীতির ধুলো ঝাড়তেই এই চিন্তা ভাবনার দিকে এগোচ্ছে।
যদিও শিক্ষামন্ত্রী এ দিন বারবার বলেছেন, গোটা ব্যাপারটা এখনও আলোচনা স্তরে রয়েছে। কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। নিয়ম বদল হলে, তাতে কী বদল হল না হল সবটা সময় মতো জানানো হবে। তবে শিক্ষামন্ত্রী এ কথা শুনে অনেকেই বলছেন, পার্থবাবু ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন। এ থেকেই গোটাটা পরিষ্কার। একটু আধটু এ দিক ও দিক হতে পারে। তবে সামগ্রিক পরীক্ষা প্রক্রিয়াকে আরও ছোট করতে চাইছে বিকাশ ভবন।
Be the first to comment