কলেজের পরিচালন সমিতির বৈঠকে অধ্যাপিকা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে “করোনা ভাইরাসের” সঙ্গে তুলনা করে চূড়ান্ত অপমান করলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী। এরপরই কাঁদতে কাঁদতে বৈঠক ছেড়ে বেড়িয়ে গেলেন প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী৷ হঠাৎ এমন ঘটনায় রাজ্য-রাজনীতিতে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ৷
কদিন আগেও সম্পর্কটা ঠিকঠাক ছিল। শোভনের সক্রিয় রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেই একাধিকবার বৈঠক করতে দেখা গিয়েছে বৈশাখীকে। সেই একান্তে বৈঠকের পর হাসিমুখেই বেরোতে দেখা গিয়েছে বৈশাখীকে ৷ কিন্তু বুধবার হঠাৎই ছবিটা বদলে গেল ৷
মিল্লি আল আমিন কলেজের অভ্যন্তরীণ সমস্যা বেশ পুরনো। এদিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পরিচালন সমিতির সদস্যদের বিকাশ ভবনে বৈঠকে ডাকেন শিক্ষামন্ত্রী। সূত্রের খবর, এই ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের শুরুতেই পার্থবাবু বলেন, “করোনা ভাইরাস যেমন পশ্চিমবঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে, তেমনি মিল্লি আল আমিন কলেজের ভাইরাস হচ্ছেন বৈশাখী।”
এমনকি বিকাশ ভবনে উচ্চশিক্ষা দফতরের বৈঠকে সবাইকে চা দিলেও প্রথমে বৈশাখীকে তা দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ। এমনকি নির্দিষ্ট যে শিক্ষক বৈশাখীকে লাগাতার অপমান করেন, তাঁকে শিক্ষা দফতরের একটি উঁচু পদে বসানো হবে বলেও জানানো হয়। এই পদক্ষেপের প্রতিবাদ করেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা। তিনি শিক্ষামন্ত্রীকে জানিয়ে দেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)-র নিয়ম মেনে যা করার করতে হবে। জানা গিয়েছে, শিক্ষামন্ত্রী বৈশাখীকে জানান, তাঁর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
শোনা যাচ্ছে, শিক্ষামন্ত্রীর এই মন্তব্যের পরই হাসিতে ফেটে পড়েন পরিচালন সমিতির সদস্যরা। ওই সদস্যরাই বৈশাখী-সহ কলেজের কয়েকজনকে কার্যত ছাঁটাই করতে চান বলে অভিযোগ।
কদিন আগেই বেহালায় শোভনের জায়গায় তাঁর স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়কে প্রচারের মুখ করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু নবান্নে মমতার সঙ্গে বৈশাখীর বৈঠকের পরই বদলে যায় চিত্র। ওই পদ থেকে সরে যেতে হয় রত্নাকে। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, তাঁকে এড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈশাখীর বৈঠক ভাল চোখে দেখেননি শিক্ষামন্ত্রী। যার প্রতিফলন ঘটেছে এই বৈঠকে ৷
এদিন অপমানিত বৈশাখী বৈঠক ছেড়ে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে আসেন। জানা গিয়েছে, পার্থবাবু তখন উপস্থিত পরিচালন সমিতির সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, “এবার চললো নবান্নে আমার নামে অভিযোগ করতে।”
বৈশাখী শুধু বলেন, “আমার অনেক বকেয়া রয়েছে। তা কোনদিনও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে পাওয়ার জন্য তদ্বির করিনি। আমি কলেজের শিক্ষক, কর্মী এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ভালোবাসি। তাদের সমস্যা নিয়েই বারবার শিক্ষামন্ত্রীর কাছে যাই। কেন উনি আজ এমন অসৌজন্য দেখালেন তা বলতে পারব না।”
Be the first to comment