ইউজিসির ক্লাস শুরুর গাইডলাইন নিয়ে আপাতত কোনও দ্বন্দ্বে যেতে চাইছে না রাজ্য বরং উপাচার্যদের মতামতকেই অগ্রাধিকার দিতে চলেছে রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতর। অন্তত বুধবার সেই ইঙ্গিতই দিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ইউজিসির ক্লাস শুরু এবং শিক্ষাবর্ষ শুরু করা নিয়ে প্রস্তাবিত গাইডলাইন নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন ” ইউজিসির শিক্ষাবর্ষ শুরু নিয়ে গাইডলাইন দেখেছি। উপাচার্যদের মতামত চাওয়া হবে। উপাচার্যদের মতামত শুনেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত আমরা নেব।”
ইউজিসি-র তরফে পরীক্ষা সূচি সংক্রান্ত গাইডলাইন নিয়ে ইউজিসির সঙ্গে বিরোধে গিয়েছিল রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর তথা রাজ্য সরকারের। এমনকী, বর্তমান পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয় তা পিছনোর আর্জি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি পর্যন্ত লিখেছিলেন। শেষ পর্যন্ত এই মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। যদিও সুপ্রিম কোর্ট পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে।
ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার ও ইউজিসির পরীক্ষা সংক্রান্ত গাইডলাইন মেনে অক্টোবর মাসেই পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সেই মোতাবেক অক্টোবর মাসেই পরীক্ষা এবং অক্টোবর মাসেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র-ছাত্রীদের ফলাফল প্রকাশ করবে। কিন্তু এবার ইউজিসির তরফে শিক্ষাবর্ষ শুরু নিয়ে গাইডলাইন জারি করার প্রেক্ষিতে রাজ্য অবশ্য দ্বন্দ্বের বদলে ধীরে চলার নীতি কার্যত নিতে চলেছে বলেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
তবে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী মঙ্গলবার ইউজিসি শিক্ষাবর্ষ শুরু সংক্রান্ত যে গাইডলাইন ট্যুইট করেছেন তা নিয়ে অবশ্য উপাচার্য, সহ-উপাচার্য দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন “১৯৫৬ সালে ইউজিসি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আমরা অবশ্য কোনওদিন দেখিনি ইউজিসি শিক্ষাবর্ষ শুরু নিয়ে গাইডলাইন দিয়ে দিচ্ছে। সাধারণত এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপরেই ছেড়ে দেওয়া উচিত। যদি এই ভাবেই গাইডলাইন জারি হয় সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা ও ওপর হস্তক্ষেপ কিছুটা হলেও করা হয়। যদিও মঙ্গলবার যে গাইডলাইন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে তা এখনও পর্যন্ত সরকারিভাবে ইউজিসি জানায়নি।”
তবে ইউজিসির তরফে শিক্ষাবর্ষ শুরু নিয়ে যে গাইডলাইন জারি করা হয়েছে তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। এ রাজ্যের বিভিন্ন অধ্যাপক সংগঠনগুলি ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে এই ভাবে ইউজিসি শিক্ষাবর্ষ শুরু নিয়ে সরাসরি দিনক্ষণ বলে গাইড লাইন তৈরি করতে পারে নাকি। তবে যেহেতু সরকারিভাবে ইউজিসি এখনও পর্যন্ত এই গাইডলাইন বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কে পাঠায়নি তাই আপাতত বিশ্ববিদ্যালয়গুলি অপেক্ষা করছে গাইডলাইনের।
তবে রাজ্যের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় দাবি অক্টোবর মাসের মধ্যে স্নাতক স্তরের ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করা গেলেও স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তি প্রক্রিয়া কার্যত শেষ করা অসম্ভব। কারণ অক্টোবর মাসেই পরীক্ষা নিতে হবে এবং অক্টোবর মাসেই ফল প্রকাশ করতে হবে স্নাতক স্তরের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র ছাত্রীদের। সে ক্ষেত্রে স্নাতকোত্তর স্তরের প্রথম বর্ষের ছাত্র ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করতে করতে নভেম্বর মাস পর্যন্ত পেরিয়ে যাবে। তাই ইউজিসি শিক্ষাবর্ষ শুরুর গাইডলাইন নিয়ে রাজ্যের মতামত নিতে চায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। তাই আপাতত উপাচার্য রাজ্যকে কি মতামত দেন সেদিকেই তাকিয়ে উচ্চ শিক্ষা দফতর।
Be the first to comment