বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার বৈঠকের দিকে নজর ছিল গোটা রাজ্যের। এসএসসি দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হয়ে ইডি হেফাজতে থাকা পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে কি মন্ত্রিসভা থেকে সরাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? না কি রেখে দেবেন? প্রথমটাই সত্যি হলো। পার্থকে সরকার থেকে সরিয়েই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শিল্প বাণিজ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, পরিষদীয় দফতরের মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পার্থ চট্টাপাধ্যায়কে সরিয়ে দিল রাজ্য সরকার। আদেশনামা প্রকাশ করে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী জানান, এই সব দফতরগুলি এখন থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই দেখবেন। ফলে মমতার হাতে থাকল স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য, ভূমি ও ভূমি সংস্কার, ত্রাণ-উদ্বাস্ত পুনর্বাসন, তথ্যপ্রযুক্তি, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন, পরিকল্পনা রূপায়ন, শিল্প বাণিজ্য, পরিষদীয় দফতর এবং শিল্প পুনর্গঠন দফতর।
গত শুক্রবার (২২ জুলাই) সকালে পার্থর বাড়িতে হানা দিয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ইডি ওই দিনই অভিযান চালায় একাধিক জেলার আরও ১৪টি জায়গায়। কোথাও কয়েক ঘণ্টা, কোথাও আরও দীর্ঘ ক্ষণ ধরে তল্লাশি, জিজ্ঞাসাবাদ চলতে থাকে। সন্ধ্যার পর আচমকাই শোরগোল পড়ে যায় পার্থ-ঘনিষ্ঠ অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের পর। ইডি সেই ছবি টুইট করে। পরদিন পার্থ এবং অর্পিতাকে এক সূত্রে গেঁথেই গ্রেফতার করা হয়।
পার্থকে গ্রেফতারের দিনেই সাংবাদিক সম্মেলন করে তৃণমূল জানিয়ে দেয়, আদালতে দোষী প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে দল। দু’দিন পর স্বয়ং মমতাও, বঙ্গসম্মানের অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় প্রায় একই কথা বলেন। মমতা এবং তাঁর দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বুঝিয়ে দেন, আপাতত পার্থকে দলীয় পদ বা মন্ত্রিত্ব থেকে সরানো হচ্ছে না।
বিরোধীরা অবশ্য পার্থকে মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কারের দাবিতে সরব হন। এমনকি তাঁরা মুখ্যন্ত্রীরও ইস্তফার দাবি তোলেন। তৃণমূলের অন্দরেও, পার্থর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠছিল। কিন্তু কেউই এ নিয়ে প্রকাশ্যে নিজেদের মতামত জানাননি বৃহস্পতিবারের আগে পর্যন্ত। এর আগের দিন, অর্থাৎ বুধবারই ঘটে গেল আর এক প্রস্থ নাটকীয় ইডি অভিযান।
অন্যদিকে বিকেল ৫টায় তৃণমূল ভবনে বসছে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠক। ঘটনাচক্রে এই কমিটির মাথায় রয়েছেন পার্থ স্বয়ং। এই সভায় পার্থর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সম্ভাবনা যথেষ্ট। তবে দলের কমিটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই, দলনেত্রী মমতা সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন, পার্থ আর তাঁর মন্ত্রিসভায় নেই। দলে কি থাকবেন পার্থ? থাকলেও কী ভাবে? উত্তর আসার কথা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই।
Be the first to comment