পিয়ালি আচার্য ।।
‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’ নতুন স্লোগান দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ২০২১-এ নির্বাচনের মুখে এই স্লোগান ঘিরে প্রচারও শুরু হয়েছে। নির্বাচন ঘোষণা মার্চের প্রথম সপ্তাহেই হতে পারে। তার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর বাংলা সফরে দেখালেন বাংলার মেয়েরা কতটা কষ্টে আছে। বললেন, বাংলার মেয়েদের সঙ্গে অন্যায়কারীদের কি মাফ করা যায়? হুগলির সাহাগঞ্জে ডানলপ মাঠে এক জনসভায় এই মন্তব্য করেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলছিলেন জল জীবন মিশন প্রকল্প নিয়ে। বললেন, মা-বোনেদের বিশুদ্ধ জল পেতে যাতে অসুবিধা না হয় তার জন্যই এই প্রকল্প। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার এই প্রকল্পের দেয় ১৭০০ কোটি টাকার মধ্যে ৬০৯ কোটি টাকা খরচ করেছে। বাকিটা বেপাত্তা। এই প্রসঙ্গেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, গরিবের ঘরে জল পৌঁছোনো উচিত ছিল কি না? গ্রামে জল পাওয়া উচিত ছিল। মহিলাদের দূরে জল আনতে যাতে না যেতে হয় তার জন্যই এই ব্যবস্থা। প্রধানমন্ত্রী তাই যুক্তি দিয়ে বলেন, বাংলার মেয়েদের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। এই অন্যায়কারীদের ক্ষমা করা যায় না।
এতদিন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ, জে পি নাড্ডা থেকে শুরু করে বিজেপির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ সোনার বাংলার কথা বলছিলেন। ২২ ফেব্রুয়ারি ডানলপ মাঠে বিজেপিরও একটি নতুন স্লোগান শোনা গেল। প্রধানমন্ত্রী বারবার বললেন, আসল পরিবর্তন চাই। আর আসল পরিবর্তনের রাজ্যে পদ্মফুল ফোটাতে হবে। তিনি বললেন, এই হুগলি নদীর দুই ধারে পাট শিল্প, লৌহ আকরিক শিল্প সব কিছু ছিল। আজ কি অবস্থা হুগলির। বাংলায় শিল্পের যে ক্রমশ অবনতি হয়েছে, সেই দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, শহরতলির লোকেরা আগে কলকাতা গেলে তাদের পরিবারের লোকেরা বলত, কলকাতা থেকে এই এই উপহার নিয়ে আসবে। কিন্তু আজ আর সেই কলকাতাও নেই। আজ কলকাতার ছেলে-মেয়েরা ভিন রাজ্যে চলে যাচ্ছে। বিজেপি রাজ্যে সরকারে এলে যে শিল্পের উপর জোর দেওয়া হবে, তা বারবার বলেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার পাট চাষিদের জন্য বিশেষ চিন্তাভাবনা করেছে। গম ও আটা প্যাকেজিং-এ পাটের ব্যাগ ব্যবহার করা হয়, তেমনি চিনি প্যাকেজিং-এও তা করা হবে। হুগলির প্রসিদ্ধ আলু এবং আলুচাষিদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানা তৈরি করতে হবে। বাংলায় উৎসাহ কম নেই। সবকিছু আছে এখানে। কিন্তু কাটমানি, সিন্ডিকেট এই সংস্কৃতি পুরো পরিস্থিতিটাকেই বদলে দিয়েছে। এখানে ভাড়াবাড়ি নিতে গেলেও কাটমানি দিতে হয়। বিনা সিন্ডিকেটে একটা বাড়ি ভাড়াও জোটে না। আমি যখন বিদেশে গিয়ে প্রবাসী বাঙালিদের সঙ্গে মিলি, তখন তাঁরাও এই কথা বলেন। এই ধারণা বদলাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আবারও বলেন, সিন্ডিকেট, তোলাবাজি, কাটমানি এবং প্রশাসনের গুণ্ডাদের আশ্রয় দেওয়া যতদিন না বন্ধ হবে, ততদিন বাংলার উন্নয়ন সম্ভব নয়। আবারও বলেন, আমরা আসল পরিবর্তন চাই। আর এই নতুন বাংলায় পরিকাঠামো বিশেষভাবে গুরুত্ব পাবে। আধুনিক হাইওয়ে, রেলওয়ে, এয়ারওয়ে তৈরি হবে। এগুলিই হল যে কোন দেশ তথা রাজ্যের উন্নয়নের মাপকাঠি। পরিকাঠামো উন্নয়ন হলেই বিনিয়োগ আসবে। তাই রাজ্যের উন্নয়ন তথা দেশের উন্নয়নের জন্য পরিকাঠামোর উন্নয়ন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি রেললাইনের আধুনিকীকরণ, বৈদ্যুতিকরণ, কিষান রেল প্রভৃতি বিভিন্ন যোজনার কথা উল্লেখ করে বলেন, এর সুফল পাচ্ছেন বাংলার মানুষ। পাশাপাশি নোয়াপাড়া-দক্ষিণেশ্বর মেট্রো রেলের ফলে কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি-সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের নতুন দিগন্ত খুলে যাওয়ার কথাও বলেন তিনি। তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের সমালোচনা করে বলেন, এখানে অহেতুক রাজনীতি হয়। দেশভক্তির জায়গায় ভোটব্যাঙ্কের কথা ভাবা হয়। সবকা বিকাশ-এর জায়গায় তোষণ হয়। মা দুর্গার পুজো বিসর্জন রুখে দেয় ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য। যারা এসব করেন, তাদের বাংলার মানুষ ক্ষমা করবেন না। যখন বাংলায় বিজেপি সরকার হবে, তখন কোনও ভয় দেখানোর বা জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার পরিবেশ থাকবে না। বিজেপি সোনার বাংলা নির্মাণের জন্য কাজ করবে। এমন সরকার হবে যা এখানকার ইতিহাস, সংস্কৃতিকে মজবুত করবে। নরেন্দ্র মোদি হুগলির ঐতিহ্যের কথা বলতে গিয়ে হুগলির তারকেশ্বর ও মাহেশের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এমন বাংলা হবে যাতে সবার বিকাশ হবে, সবার সম্মান থাকবে। বাংলা তোলাবাজি থেকে মুক্ত হবে। স্বাধীনতার আগে বা তার কিছু পরেও বাংলার যে গৌরব ছিল তা ফিরে আসবে। মা-মাটি-মানুষের কথা যারা বলতেন, তারা বাংলার বিকাশের জন্য কি করেছেন। কিষান সম্মান নিধি গরিবের কাছে পৌঁছোতে দেননি। তৃণমূল কংগ্রেসের তোলাবাজির জন্য গ্রাম-গ্রামান্তরে তৃণমূল নেতাদের বাড়ি বড় হচ্ছে। আর সাধারণ মানুষের প্রাপ্য টাকা তারা পাচ্ছে না। আয়ুষ্মান ভারত-কে রুখে দেওয়া হয়েছে। জনসভা ঘিরে মানুষের উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। চারিদিকে শুধু কালো মাথার ভিড়। মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ততা দেখে বিজেপির নেতৃত্বের মুখে চওড়া হাসি।
এদিন এই জনসভার পরে একটি কেন্দ্রীয় সরকারি অনুষ্ঠানে নোয়াপাড়া-দক্ষিণেশ্বর মেট্রো-সহ একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়, রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Be the first to comment