পিয়ালি আচার্য:
প্রেস ক্লাব কথাটার সঙ্গে প্রায় সমার্থক ছিল অনিন্দ্য সেনগুপ্ত’র নাম। প্রেস ক্লাবের সবচেয়ে বেশিবার সেক্রেটারি ছিলেন অনিন্দ্য দা। শুধু চেয়ারে বসাই নয়, দুপুরে প্রেস ক্লাব খোলা থেকে রাত্রি অবধি অনিন্দ্য দা- অনিন্দ্য দা- অনিন্দ্য দা।
দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকা তাঁর মতো সাংবাদিক পেয়ে ধন্য ছিল কী না জানি না। তবে মানুষ হিসেবে, সাংবাদিক হিসেবে অনিন্দ্য দা ছিলো খুব উঁচু দরের। অর্থনীতির ছাত্র- মেধাবী, বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি তিনটি ভাষাতেই সমান দক্ষ। প্রায় সব রাজনৈতিক নেতারই প্রিয় ব্যক্তি অনিন্দ্য সেনগুপ্ত, সৎ, নির্লোভ, ভদ্র, ডাউন টু আর্থ।
মানুষ চলে গেলে আমাদের স্বভাব আছে সব ভালো কথা বলা, অনিন্দ্য দা থাকলেও এই কথাগুলোই বলতাম। খারাপ দিক হলো প্রচণ্ড মাদকাসক্ত ছিলেন। প্রায় জলের মতো মদ খেতো। কিন্তু এর মধ্যে ভালো দিক হলো কখনও মাতলামি করতে দেখিনি, কখনও দেখিনি কোনও অসংলগ্ন কথা বলতে, কাউকে অসম্মান করতে।
খুব স্নেহশীল ছিলো অনিন্দ্য দা, খুব ভালো বাবা। স্ত্রী কলকাতার নামী স্কুলের শিক্ষিকা, মেয়ে কলকাতার বিখ্যাত কলেজে পড়ে। বিষয় অর্থনীতি, কিছু ব্যক্তিগত ঘটনা শেয়ার করলে বুঝতে পারবেন কতটা ভালো মানুষ ছিলেন অনিন্দ্য সেনগুপ্ত। কখনও মন খারাপ হলে অনিন্দ্য দা কে বলতাম একটু শিশির অধিকারী বা সৌগত রায়কে নকল করো। যতই ব্যস্ততা থাক না কেন অনিন্দ্য দা কখনও ফেরাত না।
২০০৬ সালে আমি প্রেস ক্লাবে এক্সিকিউটিভ কমিটিতে নির্বাচিত হই। সেবারেও সর্বসম্মতিক্রমে সেক্রেটারি অনিন্দ্য দা। খুব ভালো ক্যাপ্টেন, ভালো টিম ম্যান, বিভিন্ন কাজে আমাদের ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দিত। ক্লাবের বিভিন্ন সাব কমিটিতে বেশী লোককে ইনভলভ করা অনিন্দ্য দার সময়ে শুরু হয়। সবাইকে বলত পিয়ালি খুব ভালো মেয়ে। আসলে একজন ভালো মানুষই অন্য একজন ভালো মানুষকে সার্টিফাই করতে পারে। ১৫ আগস্ট হোক বা পিকনিক প্রেস ক্লাবে সব প্রোগ্রামেও হাজির হতো কখনও সপরিবারে, কখনও একা। আর আমাদের একা করে দিয়ে চলে গেছে অনিন্দ্য দা। বাড়ির লোকেদের ক্ষতি, শূন্যস্থান ভরাবার ক্ষমতা আমাদের নেই। তবে এতটুকু বলতে পারি, আবার দেখা হবে অনিন্দ্য দা। হেথা নয় হেথা নয় অন্য কোথা অন্য কোনও খানে।
Be the first to comment