আরজি করে তরুণী চিকিৎসকে শ্বাসরোধ করে খুন, যৌন হেনস্থারও প্রমাণ মেলে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে

Spread the love

চিরন্তন ব্যানার্জি :-

গত ৯ আগষ্ট আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চার তলার সেমিনার হলে তরুণী চিকিৎসকের মরদেহ মিলেছিল। সেদিনই তাঁর মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। পরিবার ও চিকিৎসকদের দাবি মতো একজন বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত করা হয়েছিল। সেই তদন্তেরই রিপোর্ট এখন পাওয়া গিয়েছে। সেই রিপোর্টে নিহত চিকিৎসক পড়ুয়ার দেহে ছিল একাধিক আঘাতের চিহ্ন। তাঁর দেহে ‘যৌন হেনস্থা’র প্রমাণও মিলেছে।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, ওই চিকিৎসককে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছিল। এমনকি, তাঁর যৌনাঙ্গে যে জোরপূর্বক কিছু প্রবেশ করানো হয়েছিল তারও উল্লেখ রয়েছে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে। উল্লেখ্য, নারকীয় অত্যাচার চালানো হয়েছিল, তা স্পষ্ট ধরা পড়ল ময়নাতদন্তের রিপোর্টে।


কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল আগেই জানিয়েছিলেন, গোটা ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়ার ভিডিও গ্রাফি করা হয়েছে। সেই ভিডিগ্রাফারের নামও রয়েছে রিপোর্টে। বিস্তারিত রিপোর্টের উপসংহারে পরিষ্কার বলা হয়েছে, শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে চিকিৎসককে। তা ছাড়া জোর করে তাঁর যৌনাঙ্গে কিছু ঢোকানো হয়েছিল, যা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে যৌন নির্যাতন করা হয়েছিল।
বিস্তারিত ময়নাতদন্ত রিপোর্টে এও বলা হয়েছে, নিহত চিকিৎসক পড়ুয়ার দেহে একাধিক ক্ষতচিহ্ন ছিল। মাথা, গাল, ঠোঁট, নাক, ডান চোয়াল, চিবুক, গলা, বাঁ হাত, বাঁ কাঁধ, বাঁ হাঁটু, গোড়ালি এবং যৌনাঙ্গে ক্ষতচিহ্ন মিলেছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, চিকিৎসকের ফুসফুসে রক্ত জমাট (হেমারেজ) বেঁধেছিল। শরীরে আরও কিছু অংশেও জমাট বেঁধে ছিল রক্ত। বড়ো ছোটো সব মিলিয়ে ২৫টি ক্ষত ছিল। এই সব ক্ষতচিহ্নগুলোর কোনওটি ০.৩ X ০.১ ইঞ্চি মাপের তো কোনওটি ০.২ X ০.১ ইঞ্চি মাপের। বাম কাঁধের উপর ২ ইঞ্চি x ২ ইঞ্চি মাপের ক্ষত দেখা গিয়েছে। পাশাপাশি, নীচের ঠোঁটের মাঝখানে একটি ক্ষতচিহ্ন রয়েছে, যার দৈর্ঘ্য ১ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ০.৪ ইঞ্চি। ওষ্ঠ এবং অধরের ভিতরের অংশেও ক্ষতচিহ্ন মিলেছে, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ০.২ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ০.২ ইঞ্চি। নাকের বাঁ দিকে একটি ক্ষতচিহ্ন রয়েছে, যার দৈর্ঘ্য ০.৩ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ০.১ ইঞ্চি। ঠোঁটের উপরেও দু’টি রয়েছে ক্ষতচিহ্ন, যার দৈর্ঘ্য ০.৪ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ০.১ ইঞ্চি। ডান চোয়ালে বড়সড় ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। গলার বাঁ দিকে রয়েছে একাধিক ক্ষতচিহ্ন, যেগুলির দৈর্ঘ্য প্রায় ০.৫ ইঞ্চি। ডান চোয়াল এবং গলার ডান দিকের মাঝামাঝি প্রায় এক ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। বাঁ হাতে তিনটি ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। হাইমেনের ডান দিকে রয়েছে ক্ষতচিহ্ন। ঘড়িতে ১০টা বাজলে কাঁটা যেমন থাকে, ক্ষতচিহ্ন দেখতে তেমনই বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই রিপোর্টে।
একাধিক মহল থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছিল, নির্যাতিতার দেহে ‘১৫০ গ্রাম সিমেন’ মিলেছে। কলকাতা হাই কোর্টে তাঁর পরিবার যে পিটিশন দায়ের করেছে, সেখানেও এই বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ‘সিমেন’ সংক্রান্ত কোনও উল্লেখ নেই। রিপোর্টে লেখা হয়েছে, নির্যাতিতার ‘এন্ডোসার্ভিক্যাল ক্যানাল’ থেকে ‘সাদা ঘন চটচটে তরল’ সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে সেই তরল কী, তার উল্লেখ নেই রিপোর্টে। রিপোর্টে ‘এক্সটারনাল ও ইন্টারনাল জেনিটালিয়া’ কলমে লেখা হয়েছে, ওজন ‘১৫১ গ্রাম’।
প্রসঙ্গত, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে নিয়ম মেনে মৃতদেহের বিভিন্ন অংশের ওজন উল্লেখ করা হয়। এ ক্ষেত্রেও তা-ই করা হয়েছে। এক ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘যে সাদা চটচটে তরলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেটা কী বস্তু তা ফরেন্সিক রিপোর্ট থেকে জানা যাবে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে এমন কিছু লেখা যায় না। কারণ, সেটা পরীক্ষাসাপেক্ষ বিষয়।’’
পাশাপাশি, বিভিন্ন মহল থেকে নির্যাতিতার শরীরের একাধিক হাড় ভাঙার যে সব কথা উঠে আসছিল, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে তেমন হাড় ভাঙার কোনও উল্লেখ নেই। রিপোর্টে লেখা হয়েছে, ‘‘শ্বাসরোধ করার কারণে মৃত্যু। মৃত্যুর ধরন খুন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*