বৃহস্পতিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে ৩০ জন সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিক রক্তদান করলেন। বর্তমান সংকটজনক পরিস্থিতিতে রক্তের চাহিদার কথা মাথায় রেখে এবং সংবাদকর্মীদের সামাজিক দায়িত্বের কথা মাথায় রেখে প্রেস ক্লাবে এই রক্তদানের আয়োজন করা হয়েছে বলে ক্লাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এদিন রাজ্য সরকারের দ্বিতীয় ভ্রাম্যমান রক্ত সংগ্রহ- বাসের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের রাষ্টমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার এই রকম দশটি বাস পথে নামাবে এবং কয়েকটিকে জেলাতেও পাঠানো হবে। প্রতিটি বাসের জন্য ৫৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে।
এদিন মন্ত্রীর হাতে প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারের বিশেষ আপতকালীন ত্রাণ তহবিলে এক লক্ষ টাকার একটি চেক তুলে দেওয়া হয়। ক্লাবের সদস্যদের ব্যক্তিগত অনুদান ও ক্লাবের পক্ষ থেকে এই অর্থ দেওয়া হয়।
এছাড়া প্রেস ক্লাব কলকাতার উদোগে এবং রাজ্য সরকারের ব্যবস্থাপনায় কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনে সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিকদের করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় একশ জন সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিক এই পরীক্ষা করিয়েছেন।
দেখে নিন এক নজরে!
সাংবাদিকদের বিশেষ রক্তদান শিবির।
রাজ্য সরকারের দ্বিতীয় ভ্রাম্যমান রক্ত সংগ্রহ বাসের যাত্রা শুরু।
করোনা ত্রাণ তহবিলে প্রেস ক্লাবের এক লক্ষ টাকা অর্থ সাহায্য।
১) রক্তদান শিবিরঃ করোনার লকডাউনে প্রেস ক্লাব, কলকাতায় রক্তদান করলেন ৩০জন সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিক। বৃহস্পতিবার এই শিবিরের মধ্যে দিয়েই সূচনা হল রাজ্য সরকারের দ্বিতীয় ভ্রাম্যমাণ রক্ত সংগ্রহকারী বাসের। উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। এই অতিমারির সময় যখন সাধারণ ভাবে স্বেচ্ছা রক্তদান ব্যাহত তখন সাংবাদকর্মীদের সামাজিক দায়িত্বের কথা মাথায় রেখেই প্রেস ক্লাব এই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে।
২) করোনার ত্রাণ তহবিলে প্রেস ক্লাবের এক লক্ষ টাকা অর্থসাহায্যঃ
রাজ্যের আপৎকালীন বিশেষ ত্রাণ তহবিলে(মুখ্যমন্ত্রীর করোনা ত্রাণ তথবিলে) প্রেস ক্লাব, কলকাতার পক্ষ থেকে এক লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার প্রেস ক্লাবে আয়োজিত রক্তদান শিবিরে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের হাতে প্রেস ক্লাবের পক্ষে চেকটি তুলে দেওয়া হয়। করোনা ত্রাণে ক্লাবের বিশেষ অর্থ সংগ্রহ অভিযানে ক্লাবের সদস্যদের দেওয়া অর্থ এবং ক্লাবের পক্ষ থেকে বরাদ্দ অর্থ একসঙ্গে করে এই অর্থ দেওয়া হয়।
৩) সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিকদের কোভিড সংক্রমণ পরীক্ষাঃ
প্রেস ক্লাব, কলকাতার উদ্যোগে এবং তত্বাবধানে রাজ্য সরকারের সহায়তায় কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনে সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিকদের করোনা সংক্রমণ পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়েছে। প্রতি কাজের দিন প্রেস ক্লাবের মাধ্যমে ১৫ জন করে সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিকের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রায় ১০০ জন সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিকের লালারস পরীক্ষা হয়েছে। গত সপ্তাহ পর্যন্ত যে ৭৫ জনের রিপোর্ট এসেছে তাদের কারোর সংক্রমণ পাওয়া যায় নি। যেসব সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিকরা এই সংক্রমণের সময়ে খবর ও ছবির জন্য অকুস্থলে যাচ্ছেন তাদের এই পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছিল।
৪) প্রেস ক্লাবে বিপন্ন স্থানীয় মানুষদের মধ্যে রান্না খাবার বিতরণঃ
গত ১লা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষের দিন থেকে প্রেস ক্লাবের ময়দান তাঁবুতে সপ্তাহে দুদিন করে স্থানীয় বিপন্ন মানুষদের মধ্যে রান্না খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সহায়তায় এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় দেড় হাজার দুস্থ মানুষকে ক্লাব থেকে খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
৫) ফেক নিউজ বা অসত্য খবর ও ছবি চিহ্নিত করনের প্রশিক্ষণ পত্র ( Tip Sheet) বিতরণঃ অতিমারির সময়ে পেশাদার সাংবাদিকদের সামনে চলে আসে অনেক অসত্য তথ্য, খবর ছবি। সেগুলো যাতে প্রকাশিত বা প্রচারিত না হয় তারজন্য ইন্ডিয়ান ইন্সিটিউট অফ মাস কমিউনিকেশন, ঢেনকানল, ওডিশার সহায়তায় একটি সচেতনতা পত্র বা টিপস শিট তৈরি করে প্রেস ক্লাব, কলকাতা সদস্য ও কর্তব্যরত সাংবাদিকদের মধ্যে বিতরণ করে। এই সংকটের সময় সাংবাদিকদের পেশাগত কাজে এই সহায়তা দিতে এগিয়ে আসে প্রেস ক্লাব কলকাতা।
৬) সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিকদের নিরাপত্তার বিষয় সচেতনতাঃ কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস অত্যন্ত ছোঁয়াচে। অথচ সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিকদের অকুস্থলে গিয়ে খবর ও ছবি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এটা অত্যন্ত ঝুঁকির বিষয়। তাই নিজেদের নিরাপত্তার জন্য এবং তাদের ক্যামেরা ও অনান্য যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত রাখার জন্য তাদের অবশ্য পালনীয় কর্তব্যের তালিকা লিপিবদ্ধ করে প্রেস ক্লাব, কলকাতার পক্ষে সকল সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিকদের সচেতন করা হয়। সাংবাদিকতা সংক্রান্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত মান অনুযায়ী এটি প্রস্তুত করা হয় এবং চেন্নাই প্রেস ক্লাব, উনিসেফসহ বহু প্রতিষ্ঠান এটি গ্রহণ করে ও এই নিরাপত্তা বিধিটি পুনঃ প্রকাশ করে।
৭) লকডাউনে প্রেস ক্লাব, কলকাতা এখন সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিকদের কাজের জায়গাঃ লকডাউনে অনেক সংবাদ মাধ্যমই সংবাদ কর্মীদের দপ্তরের বাইরে থেকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু তাদের একটা কাজের কেন্দ্র দরকার নানান প্রয়োজনে। তাই প্রেস ক্লাব, কলকাতা, ক্লাব-প্রাঙ্গন, কম্পিউটার কেন্দ্রসহ বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবার ব্যবস্থা করেছে। ক্লাব-কে জীবাণু মুক্ত করা হচ্ছে দমকল বিভাগের সহয়তায়।
৮) সাংবাদিক পেনশনের লাইফ সার্টিফিকেটঃ যেসব সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিক রাজ্য সরকারের পেনশন পান তাদের লাইফ সার্টিফিকেট প্রেস ক্লাব, কলকাতার পক্ষ থেকে মার্চ মাসের মধ্যেই রাজ্য সরকারের কাছে পোঁছে দেওয়া হয়। ফলে তারা রাজ্য সরকারের বিশেষ ঘোষণা মত মার্চ, এপ্রিল এবং মে – এই তিন মাসের পেনশন ইতি মধ্যেই পেয়ে গেছেন। এই সংকটের সময় অবসরপ্রাপ্ত বয়স্ক সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিকদের বিশেষ সুবিধা হয়েছে।
Be the first to comment