হাজার চাপের মধ্যে নিজেকে শান্ত রাখা

Spread the love

ব্রততী ঘোষ

ব্যস্ত জীবনের যান্ত্রিকতায় চাপ জড়িয়ে আছে প্রতিটি মুহূর্তের সঙ্গে। লেখাপড়া হোক বা চাকরি, প্রেম হোক বা সংসার, পরিবার হোক বা সম্পর্ক, চাপ নেই কোথায়? সমাজে বাস করতে গেলে সামাজিক হাজার চাপ আমাদের নিত্যসঙ্গী। প্রতিযোগিতার এই পৃথিবীতে আজকাল সবাই যেন অদৃশ্য এক ইঁদুর দৌড়ে সামিল। তবে এ থেকে মুক্তির পথও আছে।

রাতে কি ঘুম কম হচ্ছে, আজেবাজে দুঃস্বপ্ন দেখছেন প্রায়ই? দুশ্চিন্তার কালো ছায়া কি আচ্ছন্ন করে রেখেছে আপনার মনকে? বিষণ্নতা আর মন খারাপ কি নিত্যসঙ্গী? প্রশ্নগুলোর উত্তর ‘হ্যাঁ’ হলে চাপের সঙ্গে লড়াইয়ের সময় এখনই। নিজের মানসিক স্থিতিতে ভারসাম্য বজায় রাখতে এই লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে। পাঁচটি বিষয় মেনে চললে, তা হয়ে যাবে অনেকটা সহজ।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম থেকে দূরে থাকা। এই ভুল ধারণা অনেকেরই আছে যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একাকিত্ব দূর করে, চাপ কমায়। বাস্তব পরিস্থিতি কিন্তু একদম উল্টো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের বাস্তব জীবন থেকে ক্রমশ দূরে সরিয়ে দেয়, একাকিত্ব বাড়িয়ে তোলে। আর সবচাইতে খারাপ যেটা, তা হলো হীনমন্যতায় ভোগা। সহজ একটি উদাহরণ দিই। ধরুন, একজন মানুষের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেছে, ব্যাপারটি নিয়ে তিনি খুবই ব্যথিত। ফেসবুক, টুইটার বা ইনস্টাগ্রামে যখন তিনি কোনো দম্পতির সুখের ছবি দেখবেন, স্বভাবতই তার মন খারাপ হবে। বিষণ্নতা এসে গ্রাস করবে, আফসোসের অনুভূতি হবে। নিজেকে ভাগ্যহত মনে হওয়াও বিচিত্র নয়। ফলাফল স্বাভাবিক, বাড়বে বিষণ্নতা। চাপের এই ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরতে হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের লাগাম টানতে হবে আগে। অসুন্দর, কুৎসিত সবকিছুর সংস্পর্শ ত্যাগ করতে হবে, গুজবে গা ভাসানোর স্বভাব ছাড়তে হবে। কারো সাথে আপনার মতের মিল না-ও হতে পারে। নিজের পছন্দের কিছু বন্ধুর সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পরিসর শেয়ার করুন, অহেতুক সব পেজ-গ্রুপ পরিহার করুন। এতে চাপ অনেক কমে যাবে।

 অন্যকে নিয়ে ভাবা বন্ধ করুন

অন্যের সঙ্গে নিজের তুলনা কেন করতে হবে? হয়তো বন্ধুর বাড়ি আপনার চাইতে বড়, বন্ধুর গাড়ি আপনার চাইতে দামি, হয়তো অন্য কারো যা আছে, সেটা আপনার বহুদিনের পাওয়ার ইচ্ছা। অমুকের কেন এত টাকা, আমার কেন নেই-এই আক্ষেপে প্রতিনিয়ত ভুগে থাকে মানুষ। এটা না জেনেই করে যে, অন্যের সঙ্গে তুলনা করতে গেলে কেবল চাপই বাড়বে। প্রতিটি মানুষ পরস্পর থেকে আলাদা, প্রতিটি মানুষের জীবন ভিন্ন। আরেকজনের অর্জন হিসাব করে নিজেকে ব্যর্থ রায় দিয়ে দেওয়াটা বড় ধরনের বোকামি।

কারো কথায় কিছু করতে যাবেন না

জীবন আপনার, নিজের জন্য কোনটা ভালো, সেটা আপনি ছাড়া আর কেউ জানে না। এই কথাটি সবসময় মনে রাখবেন ও মেনে চলবেন। এটাও মনে রাখবেন যে, সর্বদা সবার কথা মেনে চলা সম্ভব নয়, সবার মন জুগিয়ে চলাও সম্ভব না। নিন্দুকেরা বলবে, তাদের কাজ বলা। ঈর্ষান্বিত মানুষ নিন্দা করে, যেন জীবনে চলার পথে কোনো না কোনো প্রতিপক্ষ করেই বসে। আর তাই, অন্যের কথা শুনতে গিয়ে চাপের বোঝা বাড়াবেন না।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন

বিশ্রাম দরকার শরীরের ও মনের। শরীরটাকে ছেড়ে দিন, রুটিন বাঁধা ছকে আঁকা জীবন থেকে মুক্ত হন।  কিছুদিন কাটুক অবসরের আলসেমিতে। আর ঠিক তখনই মন একটু আরাম পাবে, রোজকার দৌড়ঝাঁপের জীবন থেকে একটু স্বস্তি পাবে। নিজের শখের কাজ করুন, সিনেমা দেখুন, বই পড়ুন, প্রিয়জনদের সঙ্গে  সময় কাটান। শরীর ও মনের এই যুগপৎ বিশ্রাম চাপকে নিয়ে যাবে অনেক অনেক দূরে।

 মন নয়, মস্তিষ্ক খাটান

মাঝে মাঝে আবেগকে পাশে ঠেলে যুক্তি দিয়ে কাজ করাটা জরুরি হয়ে পড়ে। আর তাই, নিজের মস্তিষ্ককে পরিশ্রম করতে দেওয়াটা একান্ত জরুরি।  জীবনের ইতিবাচক ব্যাপারগুলো নিয়ে রোজ ভাবুন, নিজের স্বপ্নগুলোকে রোজ নতুন করে সাজান। দেখবেন, ভবিষ্যতের পথটি আস্তে আস্তে চোখের সামনে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।

 যেকোনো বিপদে বা সমস্যায় প্রথমেই ভেঙে পড়বেন না, চট করে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবেন না। পরিস্থিতির প্রতিটি দিক খুব ঠান্ডা মাথায় যাচাই করুন। আবেগ এক পাশে সরিয়ে ভাবতে পারলে বেশির ভাগ সমস্যারই একটি সহজ সমাধান নিশ্চিত বেরিয়ে আসে। জীবন আপনার। এই জীবন কীভাবে সুন্দর হয়ে উঠবে, সেটা আপনিই সবচাইতে ভালো জানেন। পৃথিবী যা-ই বলুক, নিজের ওপর কখনো আস্থা হারাবেন না। জীবন কঠিন, এই সত্যটি মেনে নিন। চাপমুক্ত থাকার জন্য এটিই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।  

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*