চিরন্তন ব্যানার্জি:-
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে অবশেষে কাটলো জট। ১৪ হাজারের বেশি শূন্যপদে নিয়োগের জন্য নতুন করে মেধা তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে মেধাতালিকা প্রকাশ করতে বলা হয়েছে এসএসসিকে। তার পরের চার সপ্তাহের মধ্যে কাউন্সেলিং করতে হবে। এমনটাই নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ।
২০১৪ সালের আপার প্রাইমারি শূন্যপদ নিয়োগ নিয়ে বুধবার চূড়ান্ত রায় জানাল কলকাতা হাইকোর্ট। অর্থাৎ প্রায় ৮ বছর পর কাটল উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগ জট। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এদিন জানিয়েছে, আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে ১৪ হাজার ০৫২ জনের মেধা তালিকা প্রকাশ করতে হবে। পরের ৪সপ্তাহের মধ্যে কাউন্সিলিং প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। চূড়ান্ত মেধা তালিকায় ১৪০৫ জনকে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশও দিয়েছে আদালত। অভিযোগ, এই ১৪০৫ জনকে মেধা তালিকা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে আপার প্রাইমারির জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। মোট শূন্যপদের সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ৩৩৯টি। ২০১৯ সালে ভেরিফিকেশন হয় এবং সে সময় ১৩ হাজার ৩৩৩ জনের মেধাতলিকা তৈরি হয়। তাদের মধ্যে ৮ হাজার ৯০০ জন চাকরিপ্রার্থীকে কাউনসেলিংয়ের পর প্যানেলভুক্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, ওই নিয়োগ প্রক্রিয়াতেই বিস্তর অসঙ্গতির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, ফর্ম ফিলাপ করেনি এমন প্রার্থীদেরও ইন্টারভিউতে ডাকা হযেছিল। অভিযোগ, টেটের নম্বর বাড়িয়ে তাদের ইন্টারভিউতে ডাকা হয়েছিল এবং কারচুপি ধামা চাপা দিতে প্রকাশিত তালিকায় কে কত নম্বর পেয়েছে তাও উল্লেখ করা হয়নি। এই অভিযোগেই কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হয়েছিল মামলা।
ওই মামলার ২০২০ সালে বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্য পুরো তালিকা বাতিলের নির্দেশ দেন। নতুন করে ভেরিফিকেশন করার পাশাপাশি নির্দেশে এও বলা হয় নম্বর বিভাজন করে নতুন করে তালিকা প্রকাশ করতে হবে। পরে চার বার তা খতিয়ে দেখে এসএসসি। শেষে ইন্টারভিউ থেকে বাদ পড়েন ৭৪ জন। সে ক্ষেত্রেও সঠিক নিয়ম মানা হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। পরবর্তীকালে ওই মামলা গড়ায় বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ। তবে ভেরিফিকেশন চালু রাখতে বলা হয়। অন্যদিকে এসএসসির নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ ছিল, সংরক্ষণ নীতি মানা হয়নি কাউন্সেলিংয়ের সময়। তফসিলি জাতি এবং জনজাতিদের সংরক্ষণ নিয়ে একাধিক প্রশ্ন ওঠে। এমনকি, সেখানে মহিলাদের সংরক্ষণ নিয়েও ত্রুটি ছিল বলে আদালতে জানান মামলাকারীদের আইনজীবী। ওএমআর শিটেও গোলমালের আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল আদালতে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, এরপরই ১ হাজার ৪৪৩ জন প্রার্থীর ভুল ধরা পরে। ওই মামলায় ২০২৩ সালে বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিসন বেঞ্চে ফের মামলা হয় যে যোগ্যরা চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, যে নিয়োগ তালিকা বন্ধ থাকবে তবে কাউনসেলিং এর কাজ চালাতে পারবে এসএসসি। পরবর্তীতে ওই মামলা বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চে যায়। এদিন ওই মামলার চূড়ান্ত রায়দান প্রকাশ করল বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতের নির্দেশে শীঘ্র নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে, আশাবাদী চাকরিপ্রার্থীরা।
Be the first to comment