প্রিয়াঙ্কা গান্ধী প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে এলেন। এখন তাঁর বয়স ৪৭। অনেক আগে থেকেই তাঁকে ঘিরে কংগ্রেস নেতা, কর্মী, সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা। তাঁরা প্রিয়াঙ্কার মধ্যেই ইন্দিরা গান্ধীকে দেখতে পান বা দেখতে চান।
কোন ইন্দিরা গান্ধী? যিনি দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী, আয়রন লেডি। যিনি জরুরি অবস্থার মতো বিতর্কিত বিষয়ের হোতা। আবার ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ, বীমা জাতীয়করণের মতো কল্যাণকর ভূমিকা গ্রহণে অগ্রনী। দেশ ছাড়িয়ে ইন্দিরা তৃতীয় বিশ্বের জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের নেত্রী। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ভূমিকা আজও দুই বাংলা তথা দুই দেশের মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
দেশের মানুষ এই ইন্দিরাকেই দেখতে চান প্রিয়াঙ্কার মধ্যে। অথচ, রাজনীতিতে আসার পরই তাঁকে যেমন ব্যক্তি আক্রমণের সম্মুখীন হতে হচ্ছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা সুশীল মোদী তাঁর বৈবাহিক জীবন নিয়ে কটাক্ষ করে বলেছেন, “A lady with tainted life partner”। জাতীয় রাজনীতিতে পরিচিত মুখ বিজেপির এই বর্ষীয়ান নেতার মুখে এরকম ধরনের কথা মানায় না। বিহারেরই ওপর এক বিজেপি নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী বিনোদ নারায়ণ ঝা সরাসরি প্রিয়াঙ্কার দৈহিক সৌন্দর্য নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। এটা একজন মহিলার পক্ষে নিতান্তই অপমানের। প্রিয়াঙ্কা সুন্দর। কিন্তু তাঁর সৌন্দর্যকে অবলম্বন করে বাড়তি সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা তিনি নিশ্চই করেন নি। যদি তা করতেন তাহলে নিজেকে পরিবারের গণ্ডির মধ্যে আটকে রাখতেন না।
.নিজেকে অন্তরালে রেখে দলের ওয়ার রুম সামলানোয় তাঁর ভূমিকা কংগ্রেস দল তো বটেই দেশের অনান্য মানুষের কাছে আজ অজানা নয়। গত উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টির অখিলেশের সঙ্গে কংগ্রেসের যে জোট হয়েছিলো এবং তার পিছনে যে মাথা কাজ করেছিলো তাঁর নাম প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। কংগ্রেসের হয়ে সেবার প্রচারেও নেমেছিলো প্রিয়াঙ্কা। এই প্রতিবেদকের সুযোগ হয়েছিলো রায়বরেলিতে দলীয় প্রার্থীর হয়ে প্রচারে প্রিয়াঙ্কাকে আসতে দেখা। সঙ্গে ছিলেন দাদা রাহুল। রায়বরেলিতে দুটি জনসভা করে আবার তিনি চলে গেলেন অন্তরালে। তার কারন তার ছেলে রাইহানের খেলতে গিয়ে চোট লাগা। এভাবেই আদ্যোপান্ত সংসারি প্রিয়াঙ্কা বারবার দাদা রাহুল অথবা কংগ্রেসের অনান্য নেতা-কর্মীদের অনুরোধ, উপরোধকে অবলীলায় নাকচ করেছেন। তাঁর কাছে বড় হয়ে উঠেছে তার পরিবার ও সন্তান, সন্ততি।গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনেও তাঁর তীক্ষ্ণ বুদ্ধি দাদা রাহুলকে অনেক সাহায্য করেছে। পতিদার সমাজের নেতা হার্দিক প্যাটেলের সঙ্গে জোট তৈরি করা বা জিগনেশ মেবনীর সঙ্গে থাকা এগুলি সবই তাঁর পরিণত বুদ্ধির ফসল। এমনকি কর্ণাটকে কুমারস্বামীকে মুখ্যমন্ত্রী করে জোট বজায় রাখা সেখানেও রাহুলের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করেছিলেন প্রিয়াঙ্কা। মা এবং দাদার নির্বাচনী কেন্দ্র রায়বরেলি ও আমেথীর বাইরে তিনি প্রচারে যেতে না। কিন্তু বহু সিদ্ধান্তে মাস্টারমাইন্ড ছিলেন তিনি। দীর্ঘ দুই দশকের বেশী সময় ধরে এভাবেই কংগ্রেস দলে সাইলেন্ট লিডার হিসাবে কাজ করে গেছেন তিনি। তাই তো তাঁর মধ্যে ঠাকুমা ইন্দিরাকে দেখেন অনেকে। যদিও তিনি নিজেকে অতটা কঠিন, কঠোর মানতে নারাজ। বরং বাবা রাজীব গান্ধীর মতো নিজেকে নরম মনের মানুষ হিসাবে পরিচয় দিতে চান। অবশ্য তাঁর জীবনে ঠাকুমা ইন্দিরার প্রভাব অস্বীকার করেন না তিনি। উদার মনের প্রিয়াঙ্কা বাবা রাজীবের হত্যাকারীদের কঠোরতম শাস্তি মুকুবের পক্ষে থাকেন তখনই বোঝা যায় তাঁর প্রশস্ত হৃদয়ের কথা। এখানেই প্রিয়াঙ্কা সবার থেকে আলাদা।
এহেন প্রিয়াঙ্কা রাজনীতিতে এলেন অবশেষে। অনেকে বলছেন কংগ্রেস মোদী হঠানোর জন্য প্রয়োগ করলো তার ব্রহ্মাস্ত্র। আস্তিনের ভিতরে রাখা তুরুপের তাস বিজেপি বিদায়ের মোক্ষম চাল হিসাবে কাজ করবে; এমন মত অনেকের। কিন্তু, সেটা প্রিয়াঙ্কার ক্ষুরধার বুদ্ধি, তাঁর ব্যক্তিত্ব, তার উদার হৃদয় এসবের সংমিশ্রণ বর্তমান দেশের রাজনীতিতে বিশেষত উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে কংগ্রেসকে যে একটা বাড়তি আডভান্টেজ দেবে তা বলাই বাহুল্য। তিনি তাঁর ঠাকুমার মতো বা নিজের মতো দেশনেত্রী হতে পারেন কী না, তা ভবিষ্যতই বলবে। কিন্তু তার আগে তাঁকে ব্যক্তি আক্রমণ করে কখনও বা তাঁর সৌন্দর্যকে ব্যবহার করে কংগ্রেস ভোটে ফায়দা তুলতে চাইছে এরকম কুরুচিকর চিন্তা ভাবনা দূরে সরিয়ে রাখা প্রয়োজন। প্রিয়াঙ্কা সুন্দর, তাঁর সুন্দর হওয়া অপরাধ নয়। কিন্তু তাঁর এই সৌন্দর্যকে মূলধন করে ভোটের রাজনীতিতে বাড়তি সুযোগ পাওয়া- এটা অত্যন্ত নিম্ন মানসিকতার পরিচয়বাহী। এটা যেকোনো মহিলার পক্ষেই অপমানের। প্রিয়াঙ্কা তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সফল হবেন কী না তা ভবিষ্যৎ বলবে কিন্তু রাজনীতির ময়দানে ওপেনিং করার সময়েই ব্যক্তি কুৎসা দিয়ে তাঁকে আউট করার চেষ্টা হবে ভুল নীতি।
Be the first to comment