গৌতম চট্টোপাধ্যায়ঃ
আকাশের বরণডালায় টুকরো এক ফালি মেঘ,
সীমাহীন মরু দিগন্তে শুধু রূপরেখার খেলা;
“ও মাধুকরী, ও অনামিকা, ও প্রাণের তিলোত্তমা…
ডুবিয়ে দাও আমায় বুদ্ধিলোপ মাদকতায়।
ও নির্ঝরিণী,তলিয়ে দাও স্রোতের অচেনা ঠিকানায়,
ও হেমাঙ্গিনী, পাগল করো চটুল রূপের টানে।
এ সংসার নয়, বরং গুচ্ছ যান্ত্রিক কোলাহল,
এ দেহ নয়, বরং মনের একাকীত্বে ছেড়া তানপুরা।”
ঠিক এভাবেই গঙ্গার পাড়ে বসে ভাবে সায়ন,
ওকে প্রতিদিন নতুন ভাবনা পায় তবে লেখার শক্তি নেই,
চোখ চিকচিক করে চুমকি মাখা স্বপ্নে যা বাস্তবে পুরো অক্ষম,
প্রতিনিয়ত জীবন যুদ্ধে হারতে থাকা সে এক ব্যর্থ কবি।
একদিন জলরেখায় সে দেখতে পেল নিজেকে,
পাগলাটে চুল, মুখে এক গোছা সাদা দাড়ি,
শীর্ণ গড়নে জামা কাপড় পরিপাটি নেই আগেরমত।
হঠাৎ সে খেয়াল করলো, তার ঠিক পাশেই…
ওই যেখানে ফেরী ঘাটে জন সমাগম…
এক তরুণী কেঁদে চলেছে অঝোরে।
গোলাপি চুরিদার, উজ্জ্বল হাতে তার সারা মুখ ঢাকা,
কালো রেশম কাঁধ বেয়ে নেমে এসেছে বক্ষস্থলে।
সহসা কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো সায়ন, “কাঁদছো কেন?”
মেয়েটি স্নিগ্ধ মুখে তার দিকে ঘুরে তাকালো,
এমন রূপ সে কোনকাল দেখেনি,
ওই নীলাভ মণির গরিমায় এভাবেই হারাতে চেয়েছে সে।
শান্ত গলায় সে উত্তর দিলো, “আমি তোমার মৃত্যু দেখেছি।”
চমকে ওঠে সায়ন; প্রতিধ্বনিত হচ্ছে মৃত্যু চারিদিকে,
পরের পর গাছে ঝড় উঠেছে, পাখিদের চিৎকার,
অন্ধকার ঢেউ আছড়ে পড়ছে বুকে।
কাপা স্বরে সায়ন জিজ্ঞেস করলো, “তুমি কে!! কি চাও!!”
সেই শান্ত স্বরেই প্রত্যুত্তর দিলো মেয়েটা,
“নাম জেনে কি হবে? বরং চলো আমার সাথে।”
এই প্রথম নিজের হাতে কোন মেয়ের স্পর্শ পেলো সায়ন,
নিজের অজান্তেই যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল তার শরীরে,
মন্ত্রমুগ্ধের মতই সে এগিয়ে চললো দেখিয়ে দেওয়া রাস্তায়।
এখানে কোন জীবিত গাছ নেই, পায়ের ঘাসগুলো সব শুকনো,
এই সোঁদা বাড়ি সে কোনদিন দেখেনি, শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়।
ঠিক এক কোণে সাদা কাপড়ে ঢাকা আছে দেহ,
এক দৌড়ে টান মেরে সেটা সরিয়ে দিলো সায়ন,
দৃশ্য দেখে চমকে পিছিয়ে গেলো দু’পা,
নিজেই নিজের মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে আজ।
সাদা শরীরে কোথাও বিন্দু রক্ত নেই,
কোথাও স্টিচ, কোথাও বা কাটার দগদগে ঘা,
পচনের গন্ধে ঘরে টেকা দায়।
সে প্রাণপণে চিৎকার করলো, “কুহেলিকা!! কুহেলিকা!!”
কোন জনমানব সেখানে নেই আর।
এক কাপড়ে আজও চেয়ে আছে, জীবিকা।।
Be the first to comment