নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে পুজো কমিটিগুলিকে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ কীভাবে আয়োজন করা হবে এ বারের দুর্গাপুজোর? প্যান্ডেলের ভিতরে, বাইরে কী কী গাইডলাইন মানতে হবে? পুজো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠকে সেই নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
সামাজিক দূরত্ব মানা থেকো শুরু করে মাস্ক পড়ার মতো করোনার স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি পুজো মণ্ডপে যে কোনও মূল্যে ভিড় এড়াতে হবে বলেও এ দিন নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
পাশাপাশি এমন সংক্রমণের আবহে পুজোর উদ্যোক্তাদের কথা মাথায় রেখে বড় ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর ৷ তিনি বলেন, এবছর দুর্গাপুজোর জন্য পুজো কমিটিগুলির থেকে কোনও ট্যাক্স নেবে না পুরসভা এবং পঞ্চায়েত ৷ এমনকী পুজো কমিটিগুলিকে দমকলকেও কোনও ফি দিতে হবে না বলে জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরে করোনা পরিস্থিতি পুজোর গাইডলাইন নিয়ে পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসেন মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ মমতা বলেন, চলতি বছর মহামারী এবং করোনা রুখতে লকডাউনের কারণে প্রভাব পড়েছে মানুষের আয়ে ৷ সেজন্য এবছর তেমনভাবে বিজ্ঞাপনও তুলতে পাবেন না পুজো কমিটিগুলি ৷ তাই সেই কথা ভেবেই রাজ্যসরকারের তরফে এই কর ছাড়ের ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর ৷
এখানেই শেষ নয়, একইসঙ্গে পুজোর আয়োজন সুষ্ঠভাবে সম্পন্নের জন্য তিনি প্রত্যেক পুজো কমিটিকে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন ৷ উল্লেখ্য, চলতি বছর রাজ্যে আবাসন, পাড়া, ক্লাব মিলিয়ে ৩৭ হাজারেরও বেশি পুজো হচ্ছে।
একনজরে দেখে নিন এদিন ঠিক কি কি নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-
১. প্যান্ডেল খোলামেলা করেত হবে ৷ মণ্ডপের চারপাশ খোলা রাখতে হবে ৷ চারপাশ ঘেরা থাকলে মণ্ডপের ছাদ খোলা রাখতে হবে যাতে হাওয়া চলাচল করতে পারে এবং সংক্রমণের আশঙ্কা কমে ৷
২. দর্শনার্থীদের এবং মণ্ডপ চত্বরে থাকা প্রত্যেকের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক ৷ মাস্ক না পরলেও নাক, মুখ ঢেকে রাখতে হবে ৷ পুজো উদ্যোক্তা এবং পুলিশের উদ্যোগে মণ্ডপে মাস্ক রাখতে হবে, যাতে কারও কাছে মাস্ক না থাকলে তাঁকে মাস্ক দেওয়া যায় ৷
৩. মণ্ডপের অনেকটা আগে থেকেই দর্শনার্থীদের স্যানিটাইজার দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে ৷ মণ্ডপের ভিতরে ভিড় এড়াতে প্রবেশ এবং বেরনোর আলাদা পথ রাখতে হবে ৷ ভিড় এড়াতে ব্যারিকেড, দাগ দিয়ে মানুষ দাঁড়ানোর জায়গা চিহ্নিকরণের ব্যবস্থা করে দিতে হবে ৷
৪. বেশি সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক রাখতে হবে ৷ এদের জন্য মাস্ক, স্যানিটাইজার, ফেস শিল্ড দিতে হবে ৷ পুলিশকর্মী যাঁরা পুজোর সময় দায়িত্বে থাকবেন, তাঁদেরকেও পর্যাপ্ত সংখ্যক মাস্ক, স্যানিটাইজার এবং সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
৫. অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ এবং সিঁদুরখেলাতেও ভিড় এড়াতে অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ ছোট ছোট দলে ভাগ করে অঞ্জলির আয়োজন করার অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ ফুল, বেল পাতা বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
৬. প্রসাদ বিতরণে ভিড় এড়াতে হবে ৷ আবাসনের পুজোতেও এই নির্দেশিকা মানতে হবে ৷ একই সময়ে সবাই সিঁদুরখেলায় অংশ না নিয়ে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে সিঁদুরখেলার অনুরোধ করেন মমতা।
৭. বিসর্জনেও বেশি মানুষ নিয়ে যাওয়া যাবে না৷ পাশাপাশি একই এলাকার সব পুজোর বিসর্জনও একদিনে হবে না ৷ ঘাটগুলিকেও স্যানিটাইজ করার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ উদ্বোধন অনুষ্ঠানও ছোট করে করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
৮. পুজোর সময় আলাদা করে কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যাবে না ৷ অতিরিক্ত ভিড় এড়ানোর জন্যই এই নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
৯. উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও সংক্ষিপ্ত রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
১০. মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, পুরস্কার দেওয়ার জন্য যে বিচারক বা প্রতিনিধি দল মণ্ডপে মণ্ডপে আসেন, তাঁদের একসঙ্গে দু’টির বেশি গাড়ি যেন মণ্ডপ চত্বরে প্রবেশ না করে৷ ভার্চুয়াল মাধ্যমে মণ্ডপ দেখে পুরস্কার দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি৷ এ বার বিশ্ব বাংলা পুরস্কারও ভার্চুয়ালি দেওয়া হবে৷ পুরস্কার দেওয়ার জন্য বিচারকরা সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টের মধ্যে মণ্ডপগুলিতে যাবেন৷ যে কোনও মূল্যে যাতে ভিড় এড়ানো যায়, সেই অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
Be the first to comment