বছর দেড়েক আগের ঘটনা। পরিবারের সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিল বছর তিনেকের এক খুদে। ভয়াবহ এক গাড়ি দুর্ঘটনার মুখে পড়ে মাথায় ভয়াবহ চোট পায় সে। দু’টি জটিল অপারেশন করা হলেও, ফাঁকা থেকে গিয়েছিল মাথার খুলির প্রায় ৬০ শতাংশ।
পুণের এই ঘটনায় মেয়ের বাঁচার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিল পরিবার। কিন্তু খেলা ঘুরে গেল, এ বছরের মে মাসে। ঘোরালেন পুণের ভারতী হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। কৃত্রিম উপায়ে তৈরি খুলি শিশুটির মাথায় প্রতিস্থাপন করে নতুন রেকর্ড গড়ে ফেললেন তাঁরা। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ভারতে এই প্রথম সফল ভাবে মাথার খুলি প্রতিস্থাপিত হল চার বছরের ওই শিশুর। একই সঙ্গে, বিশ্ব-চিকিৎসার দরবারে আরও এক পা এগিয়ে গেল দেশ।
পুণের কোথরুড এলাকায় এখন বেশ আনন্দেই আছে শিশুটি৷ পরিবার সূত্রের খবর, স্কুলেও যেতে শুরু করেছে সে। বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলোও চলছে৷ মেয়েকে সুস্থ জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ভারতী হাসপাতালের চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছেন বাবা-মা৷ বলছেন, “ভগবানের দূত হয়ে এসেছিলেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা৷”
অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক জিতেন্দ্র অসওয়াল জানান, “অজ্ঞান অবস্থায় মেয়েটিকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল গত বছর৷ মাথা থেকে ভয়ঙ্কর রক্ত পড়ছিল৷ সঙ্গে সঙ্গে ভেন্টিলেশনে রাখতে হয়৷ পরে সিটি স্ক্যান করে দেখা যায়, মাথার খুলির পিছনের হাড় ভেঙে গেছে৷ সেটিই চাপ দিচ্ছে মস্তিষ্কে, যার ফলে ফ্লুইড জমছে মাথায়। যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলে, ম্যালিগনেন্ট সেরেব্রাল এডেমা৷ ”
তখনই একটি অত্যন্ত জটিল অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু তেমন একটা উন্নতি হয় না তার অবস্থার৷ ৪৮ ঘণ্টা পরে ফের সিটি স্ক্যান করে জানা যায়, গুরুতর আঘাতে মন্তিষ্ক সরে গিয়েছে নির্দিষ্ট জায়গা থেকে। ফের আরও একটি বড় অস্ত্রোপচার করে বাদ দিতে হয় খুলির অনেকটা অংশ। তা না করলে, মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে মেয়েটির চিন্তাশক্তিই বিলুপ্ত হয়েছিল৷ এই অবস্থায় খুলির ওই অংশটি প্রতিস্থাপন করা ছাড়া অন্য উপায় ছিল না বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। নইলে মেয়েটি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলত। তাই কার্যত অসম্ভব এই প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা।
একটি মার্কিন সংস্থার কাছে মাপ পাঠিয়ে তৈরি করানো হয় বিশেষ ‘থ্রি ডাইমেনশনাল ইন্ডিভিজুয়ালাইজ়ড পলিথাইলিন হাড়’। সেটিই মেয়েটির মাথায় অস্ত্রোপচার করে বসিয়ে দেন চিকিৎসকেরা। অস্ত্রোপচার সফল হয়। নতুন জীবন ফিরে পায় খুদে।
Be the first to comment