কেন্দ্রীয় সরকারি বা ব্যক্তি মালিকাধীন জমিতে গড়ে ওঠা উদ্বাস্তু কলোনির বাসিন্দাদের জমির সত্ত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য মন্ত্রীসভা। সোমবারই মন্ত্রীসভার ক্যাবিনেট বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। যা এনআরসি বিরোধীতায় মমতা সরকারের কৌশলী পদক্ষেপ হিসাবেই মনে করা হচ্ছে। তবে নবান্নের এই পদক্ষেপকে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে দাবি করছে বিজেপি। ‘কেন্দ্রের জমি কীভাবে রাজ্য সরকার উদ্বাস্তুদের হস্তান্তর করতে পারে?’ তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই রাজ্য সরকারের জমির উপর গড়ে ওঠা ৯৪টি উদ্বাস্তু কলোনিকে জমির মালিকানা হস্তান্তর করা হয়েছিল। সেই সময় প্রতিশ্রুতি ছিল, কেন্দ্র ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির উপর গড়ে ওঠা ২৩৭টি উদ্বাস্তু কলোনির জমির সত্ত্বও একই প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর করা হবে। সোমবার রাজ্য মন্ত্রিসভার ক্যাবিনেট বৈঠকের সিদ্ধান্ত নবান্নের সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা বলে মনে করা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রীরর ঘোষণা, ‘আমি মনে করি উদ্বাস্তুদের অধিকার রয়েছে। ১৯৭১ সালের পর প্রায় ৪৮ বছর কেটে গিয়েছে। উদ্বাস্তুরা ভোট দেন, দেশের নাগরিক হিসাবে বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু এখনও কেন্দ্র বা ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির উপর গড়ে ওঠা উদ্বাস্তু কলোনির বাসিন্দাদের জমির সত্ত্ব,পাট্টা মেলেনি। এবার ধীরে ধীরে সেই সমস্যার সমাধান করা হবে।’ রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন্ধ হওয়া বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থার জমিতে দীর্ঘদিন ধরে যে উদ্বাস্তুরা বসবাস করছেন তাঁদের তিন একর পর্যন্ত জমির সত্ত্ব প্রদান করা হবে।
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে মমতা বলেন, ‘আমরা বহুবার কেন্দ্রকে এই সমস্যা সমাধানের কথা বলেছি। কিন্তু, তারা কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। উলটে ওই জমি থেকে উদ্বাস্তুদের উচ্ছেদের জন্য মাঝেমধ্যেই নোটিস পাঠায়। উদ্বাস্তুদের অধিকার কথা বিবেচনা করে তাই রাজ্য সরকারের তরফে যেখানে তাঁরা বসবাস করেন সেই জমির সত্ত্বাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ রাজ্যের এই পদক্ষেপে প্রায় ২৫ হাজার উদ্বাস্তু পরিবার উপকৃত হবে বলে নবান্ন সূত্রে খবর।
মমতা সরকারের ঘোষণা ঘিরে ইতিমধ্যেই বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে জানিয়েছেন দেশজুড়ে এনআরসি হবে। শীতকালীন অধিবেশনেই কেন্দ্র নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংসদে পেশ করতে পারে। এরপরই এনআরসি বিরোধী সুর চড়া করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। অমিত শাহের ঘোষণার দিন তিনেকের ভেতর, সোমবার উদ্বাস্তুদের জমির সত্ত্ব দেওয়ার ঘোষণা করেন তিনি। কেন্দ্র ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির উপর গড়ে ওঠা উদ্বাস্তু কলোনিগুলি রেগুলারাইজ সিদ্ধান্ত হয়। এই পদক্ষেপ রাজনৈতির স্বার্থে ‘বিভ্রান্তিমূলক’ ঘোষণা বলে দাবি করছে গেরুয়া শিবির।
বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহার কথায়, ‘প্রথমত, কেন্দ্রের জমি অন্য কাউকে হস্তান্তরের কোনও ক্ষমতাই নেই রাজ্য সরকারের।’ উদ্বাস্তুদের মন জয় করতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যের এই ঘোষণা বলে অভিযোগ রাহুলবাবুর। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র নাগরিকত্ত্ব সংশোধনী বিল আনছে। তার মাধ্যমেই উদ্বাস্তুরা এদেশের প্রকৃত নাগরিক হয়ে উঠবেন। তখন তারা জমির পাট্টা, সত্ত্বও পাবেন। ফলে স্পষ্ট মমতা সরকারের পদক্ষেপ উদ্বাস্তুদের মন জয়ের মরিয়া চেষ্টা ছাড়া অন্য কিছু নয়।’ তৃণমূল ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি করতে গিয়ে অনুপ্রবেশকারী ও উদ্বাস্তুদের সঙ্গা গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে দাবি পদ্ম শিবিরের কেন্দ্রীয় সম্পাদকের।
Be the first to comment