শতাব্দী প্রাচীন কংগ্রেসে এমন ঘটনা বেনজির তো বটেই, সর্বভারতীয় রাজনীতিতেও বিরল! মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগড় ও রাজস্থানে বিজেপি-কে ধরাশায়ী করে ভোটে জিতেছে কংগ্রেস। তার পর চব্বিশ ঘন্টাও কাটেনি। হিন্দিবলয়ের এই তিন রাজ্যে কংগ্রেস কর্মীদের কাছে অডিও মেসেজ পাঠিয়ে রাহুল জানতে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী পদে তাঁদের পছন্দ কে? উদ্দেশ্য এই, যাঁর পক্ষে বেশি সংখ্যক কংগ্রেংস কর্মী মত দেবেন, তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী পদে মনোনীত করবেন কংগ্রেস সভাপতি। যার অর্থ, হাইকম্যান্ডের তরফ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বাছাই করে তা চাপিয়ে দেওয়া হবে না। মুখ্যমন্ত্রীও মনোনীত হবেন এক্কেবারে গণতান্ত্রিক উপায়ে।কী ভাবে তা করছেন রাহুল? অডিও মেসেজেই বা কী বলছেন তিনি?
তিন রাজ্যের প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ কংগ্রেস কর্মীর কাছে বুধবার সন্ধ্যায় সেই অডিও মেসেজ পৌঁছেছে। মেসেজে শোনা যাচ্ছে, কর্মীদের উদ্দেশে রাহুল বলছেন, “তিন রাজ্যের জয়ের জন্য আপনাদের অনেক অভিনন্দন। আপনারা বুথ আগলে দাঁড়িয়েছেন, কংগ্রেসের মতাদর্শের জন্য লড়েছেন এবং জিতেছেন। এ জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। এখন একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করতে চাই। মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য যোগ্যতম কে? শুধু এক জনের নাম বলুন। আমি ছাড়া আর কেউ জানতে পারবেন না।”
এ কথার বলার পরেই রাহুল মেসেজে বলেছেন, আমার কথা শেষ হলেই একটা ‘বিপ’ শব্দ হবে। তার পরেই নামটি বলুন।কংগ্রেস সূত্রের খবর, এ ভাবে ভোটাভুটি করে যে তথ্য পাওয়া যাবে তাতে মুখ্যমন্ত্রী পদে যোগ্য ও জনপ্রিয় নেতা বেছে নেওয়া সহজ হবে বলেই মনে করেন রাহুল। এবং ঘটনা হল, এখনও পর্যন্ত কর্মীদের থেকে যে জবাব পাওয়া গিয়েছে তাতে তিনটি রাজ্যেই এক জন করে নেতার নামে অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি ভোট পড়েছে।
গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ এক প্রবীণ কংগ্রেস নেতার কথায়, “বাস্তবে এমনটা ভাবা কেবল রাহুলের পক্ষেই সম্ভব! পোড় খাওয়া আবহমানের চিরাচরিত রাজনীতি তাঁর কোনও কালেই ধাতে নেই। বরং বরাবরই নিজস্ব একটা রোম্যান্টিসিজম রয়েছে আবহমানের অনিয়ম বদলের জন্য। বস্তুত সে কথা কংগ্রেসের সহ সভাপতি পদের দায়িত্ব নেওয়ার সময় রাহুল নিজেও বলেছিলেন। জানিয়েছিলেন, কংগ্রেস এতদিনের পুরনো একটি দল যে তাতে পরিবর্তন ঘটানো একদিনের কাজ নয়। কিন্তু দলের পরিবর্তন ঘটাবোই। স্বজনপোষণের রাজনীতির পরিবর্তে গণতন্ত্র ফেরাবো।সর্বভারতীয় কংগ্রেসের মূল সংগঠনে না হোক, যুব কংগ্রেসে গণতন্ত্র ফেরানোর চেষ্টা অনেক আগেই শুরু করেছেন রাহুল। তাতে অনেকাংশে সফলও হয়েছেন তিনি।
এমনকী যুব কংগ্রেসে সভাপতি নির্বাচনের জন্য এক সময়ে অবসরপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনার কে জে রাওকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন রাহুল।তবে অডিও মেসেজ পাঠিয়ে ভোটাভুটি করে মুখ্যমন্ত্রী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া একেবারেই অভিনব।
রাহুলের আস্থাভাজন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির এক সদস্য এ ব্যাপারে বলেন, মঙ্গলবার ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর রাহুল কিন্তু এ ধরনের একটা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, নরেন্দ্র মোদীর সমস্যা হল, তিনি কারও মনের কথা শোনেন না। শুধু নিজের কথা বলেন। কিন্তু কংগ্রেসের কাজ হবে, আমার কাজ হবে দেশের মানুষের মনের কথা শোনা, কংগ্রেস কর্মীদের মনের কথা শোনা। সেই প্রক্রিয়াই শুরু হয়ে গেল।এবং এই প্রক্রিয়া কংগ্রেসের বৃদ্ধতন্ত্রে আরও একবার যে জোরালো আঘাত হানল তা নিয়েও কোনও সংশয় নেই।
Be the first to comment