আর কোনও রকম ইনিয়ে বিনিয়ে বলা নয়। সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকার ব্যাঙ্ক জালিয়াতি কাণ্ডের সঙ্গে এ বার খোদ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির নাম জড়িয়ে দিতে চাইলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। তাঁর অভিযোগ, জালিয়াতি করা সত্ত্বেও নীরব মোদী ও তাঁর কাকা মেহুল চোকসিকে পালাতে দিয়েছেন জেটলি। অথচ ওঁদের জালিয়াতির খবর অর্থমন্ত্রী আগেই জানতেন। কেন না তাঁর কাছে আয়কর দফতরের রিপোর্ট ছিল। কিন্তু যেহেতু জেটলির মেয়ে সোনালী জেটলি মেহুল চোকসির আইনজীবী ছিলেন, তাই চোখ বুজেছিলেন তিনি। মোদী-চোকসির জালিয়াতি নিয়ে আয়কর দফতরের দশ হাজার পৃষ্ঠার রিপোর্ট জেটলি চেপে দিয়েছেন বলেও সোমবার অভিযোগ করেছে কংগ্রেস।
বস্তুত সোমবার একটি সংবাদপত্রে প্রকাশ হয়েছে যে, নীরব মোদী ও মেহুল চোকসি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার আট মাস আগেই তাঁদের কেলেঙ্কারি ধরে ফেলেছিলেন আয়কর দফতরের কর্তারা। এ ব্যাপারে ২০১৭ সালের জুন মাসের আগেই তাঁরা দশ হাজার পৃষ্ঠার তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করেন। কিন্তু সেই রিপোর্ট সিবিআই, ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স, সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেশন অফিসের মতো অন্য কোনও এজেন্সিকে দিয়ে আর তদন্ত করানো হয়নি। তাদের কাছে ওই রিপোর্ট পাঠানোও হয়নি। এমনকী আয়কর দফতরের উর্ধ্বতন কর্তার কাছেও সেই রিপোর্ট না পাঠিয়ে আট মাস ধরে চেপে বসে থাকা হয়। রাহুল গান্ধীর অভিযোগ, এই সময়ের মধ্যেই মোদী-চোকসিকে সেফ রুট দেওয়া হয়েছে। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে পালিয়ে গেছেন মোদী ও চোকসি।
আয়কর দফতর অর্থমন্ত্রকের অধীনেই পড়ে। কিন্তু সচিন পাইলটের মতো কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, চোকসি জেটলির মেয়ে সোনালি ও জামাই জয়েশ বক্সিকে তাঁর আইনজীবী হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি জেটলির মেয়ে-জামাইয়ের ফার্মকে ২৪ লক্ষ টাকা ফি দিয়েছিলেন। পরে মোদী-চোকসি পালিয়ে যাওয়ার পর বিতর্ক ঢাকা দিতে ওই টাকা চোকসির অ্যাকাউন্টে ফেরত দিয়ে দেন সোনালি। এই তথ্যই এখন হাতিয়ার রাহুলের। তাঁর অভিযোগ গোটা কেলেঙ্কারিতে সরাসরি জড়িত অর্থমন্ত্রী। এক দণ্ডও তাঁর নর্থ ব্লকে থাকা উচিত নয়।
যদিও বিজেপি এই অভিযোগ ও দাবি খারিজ করতে চেয়েছে। দলের মুখপাত্ররা এ দিন বলেন, পেশাগত কারণে অর্থমন্ত্রীর মেয়ের ল’ফার্মকে পরামর্শদাতা হিসাবে নিয়োগ করেছিল চোকসির প্রতিষ্ঠান। এর সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর কোনও সম্পর্ক নেই। যদিও আয়কর দফতরের রিপোর্ট কেন গোপন করে রাখা হল, কেন সে ব্যাপারে অর্থমন্ত্রক বা সরকার কোনও পদক্ষেপ করেনি সে প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তাঁরা।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, পাঁচ বছর আগে দুর্নীতির প্রশ্নে কেন্দ্রে মনমোহন সিংহ সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে সফল হয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী বাহিনী। সেই সঙ্গে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা কায়েম করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু উনিশের ভোটের আগে রাহুল গান্ধী ও তাঁর টিম মোদীর সেই মূর্তিই ভেঙে চুরমার করে দিতে চাইছেন। রাফাল কেলেঙ্কারি, ব্যাঙ্ক জালিয়াতির মতো ঘটনায় তাঁরা যেমন সরাসরি মোদী-অমিত শাহ-জেটলিকে দায়ী করছেন। এবং দেখাতে চাইছেন এক শ্রেণির মুনাফাভোগী ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাঁদের কেমন যোগসাজস ছিল। আর তার পাশাপাশিই কৃষকদের ক্ষেপিয়ে তুলতে চাইছেন। বলছেন, তোমাদের ঋণ মকুব করছে না সরকার, কিন্তু বড় শিল্পপতিদের সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছে, হাজার হাজার কোটি টাকা লুঠ করে বিজেপি সরকারের প্রশ্রয়ে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন বিজয় মালিয়া-নীরব মোদীরা। এ পরিস্থিতিতে দৃশ্যতই চাপে রয়েছে বিজেপি। দৃষ্টি ঘোরাতে তাই কখনও প্রধানমন্ত্রীকে রাম মন্দিরের কথা বলতে হচ্ছে, কখনও বা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ আনতে হচ্ছে। তবে মোদী-শাহদের সে কৌশল আদৌ কাজে আসবে কিনা তার ইঙ্গিত পাওয়া যাবে ১১ ডিসেম্বর। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণা হবে ওই দিন।
Be the first to comment