বেলা তখন প্রায় দুটো। মহারাষ্ট্রের ওয়ার্ধার উপকন্ঠে মহাত্মা গান্ধীর সেবাগ্রাম আশ্রমে তখন কংগ্রেস নেতাদের নিরামিষ মধ্যাহ্নভোজ সবে শেষ হয়েছে। দেখা গেল, ট্যাপের তলায় স্টিলের থালা রেখে ঘষে ঘষে ধুচ্ছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। তাঁর ঠিক পাশেই প্রাক্তন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী। খাদির কাপড় পরা। তিনিও খাবারের থালা ধুতে শুরু করলেন ট্যাপের তলায়।
তার পর যা হয়। মধ্যাহ্নভোজের পর খাবারের এঁটো থালা কেউ ফেলে রাখলেন না। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বর্ষীয়াণ সব সদস্যই একে একে নিজের এঁটো থালা নিজেই ধুলেন। তার পর সাজিয়ে রেখে এলেন খাবার ঘরে।
বেনজির গান্ধীগিরি! মঙ্গলবার সকালেই দেখা গিয়েছে, পুদুচেরির মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রবীণ কংগ্রেস নেতা নারায়ণস্বামী নর্দমার মধ্যে নেমে তা পরিষ্কার করছেন। মহাত্মা গান্ধীর ছবিকে সামনে রেখে, বিজেপি তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন ‘স্বচ্ছতাই সেবা’ প্রচারে নেমেছেন। তখন মহাত্মা গান্ধীর ১৪৯ তম জন্মদিনে পিছিয়ে থাকল না কংগ্রেসও।
চব্বিশ নম্বর আকবর রোডের নেতারা বলছেন, রাহুল গান্ধী কোনও কাজই লোক দেখিয়ে করেন না। যা করার স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই করেন। রাহুলের আচার আচরণের মধ্যেও সেটা রয়েছে। রাজনৈতিক নেতা হিসাবে কোনও ভরং নেই। সেবাগ্রামে নিজের থালা নিজে মাজার চল রয়েছে অনেক দিন ধরে। আশ্রমের আবাসিকরা রোজ সেই নিয়মই মেনে চলেন। রাহুল গান্ধীও সেটাই করেছেন।
আগামী এক বছর ধরে গান্ধীজির দেড়শতম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের সংকল্প নিয়েছে কংগ্রেস। মঙ্গলবার মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিনে সে কারণেই ওয়ার্ধায় সেবাগ্রাম আশ্রমে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকেছিলেন রাহুল। সেবাগ্রাম আশ্রমে একটি গাছের চারাও পোঁতেন রাহুল। ঠিক যেখানে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী তিন দশক আগে ১৯৮৬ সালে একটি গাছের চারা পুঁতেছিলেন, তার পাশেই।
প্রসঙ্গত, জীবনের শেষ দিকে গান্ধীজি সেবাগ্রাম আশ্রমে বেশ কয়েক বছর কাটিয়েছিলেন। গান্ধীজির স্মৃতি মাখা বাপু কুঠিতে এদিন শ্রদ্ধা জানান প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও।
এর আগে ওয়ার্ধায় গান্ধীজি-কে স্মরণ করে রাহুলের নেতৃত্বে পদযাত্রাও করেন কংগ্রেস নেতা কর্মীরা। পরে রাহুল বলেন, দেশ জুড়ে ঘৃণা ও ভয়ের পরিবেশ কাটাতেই এই পদযাত্রা করা হল। গান্ধীজিকে স্মরণ করা কংগ্রেসের কাছে নতুন নয়। বরং বিজেপি-ই এতোদিন পর গান্ধীজি-সর্দার পটেলকে সম্মান জানাতে নেমেছে।
Be the first to comment