করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেশের বড় অংশের মানুষের মনে ইতিমধ্যেই ভালরকম আতঙ্ক তৈরি করেছে। এই সংক্রমণে বিশ্বজুড়ে যে মৃত্যুমিছিল চলছে তাও মর্মান্তিক, অতীব বেদনার। তবে এও বাস্তব যে এই ভাইরাসের সংক্রমণে পশ্চিমবঙ্গে এখনও পর্যন্ত কতজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
কিন্তু শনিবার সন্ধ্যায় নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা বলেছেন, “অনেকে অনেক রকম সংখ্যা বলছেন। কিন্তু আমি স্পষ্ট করতে চাই, পশ্চিমবঙ্গে এখনও কোভিডে মারা গিয়েছেন পাঁচ জন।”
মুখ্যসচিবের কথায়, “কেউ কেউ কলকাতা কর্পোরেশনের তথ্য দিয়ে রাজ্যে করোনা-মৃত্যু নিয়ে নানারকম পরিসংখ্যান দিচ্ছেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে কলকাতা কর্পোরেশনের এ ব্যাপারে কোনও এক্তিয়ার নেই। কী কারণে মৃত্যু হয়েছে তথা ‘cause of death’ নথিভুক্ত করার কোনও অধিকার নেই’।
নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যসচিব আরও বোঝাতে চেয়েছেন, কারও কারও শরীরে মৃত্যুর আগে বা পরে করোনাভাইরাস পজিটিভ পাওয়া গেলেও তাঁদের শরীরের অন্য রোগভোগের উপসর্গ ছিল। মৃত্যুর কারণ, করোনার সংক্রমণ না কি অন্য রোগের কারণেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। মুখ্য সচিবের কথায়, ওই অডিট কমিটিই জানিয়েছে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে পাঁচ জনের।
এদিকে করোনা সংক্রমণে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, এমনকি স্বাস্থ্য দফতরের দাবি অনুযায়ী যে সব করোনা পজিটিভ রোগীর অন্য রোগভোগের কারণে মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের সৎকারের কাজ ধাপার কাছে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় হচ্ছে। তার দায়িত্বে কলকাতা পুরসভা রয়েছে বলে খবর। ফলে সেখানে যতজন মানুষের সৎকার হচ্ছে, আর সরকার করোনায় মৃতের যে সংখ্যা জানাচ্ছে তার মধ্যে ফারাক রয়েছে। কিন্তু সে ব্যাপারে মুখ্যসচিব এদিন জানিয়ে দিয়েছেন যে, কী কারণে মৃত্যু হয়েছে তা নথিভুক্ত করা পুরসভার এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, যাঁদের ইমিউনিটি তথা প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি তাঁদের করোনা সংক্রমণে মৃত্যুর আশঙ্কা কম। বয়স্ক মানুষ যাঁদের হৃদরোগ রয়েছে বা ডায়াবেটিস, কিডনি সমস্যা, হাঁপানির মতো ক্রনিক রোগ রয়েছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে তাঁদের ঝুঁকি বেশি। হিসাব মতো দেখা যাচ্ছে, গোটা দেশে এখনও পর্যন্ত করোনা সংক্রমণে যাঁরা মারা গিয়েছেন তাঁদের অনেকের মধ্যেই এ ধরনের কোনও ক্রনিক রোগ ছিল। বিভিন্ন রাজ্যে করোনা পজিটিভ এ ধরনের রোগীর মৃত্যুর ঘটনাকে করোনাভাইরাসে মৃত্যু বলেই গণ্য করা হয়েছে। তবে এও ঠিক, পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিশেষজ্ঞ কমিটি বা অডিট কমিটি গঠন করে যেভাবে মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করছে, সেই প্রক্রিয়া নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রক এখনও প্রশ্ন তোলেনি।
Be the first to comment