অবশেষে সমস্ত জল্পনার আবসান। তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন হল রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে ফিরলেন তিনি। তাঁকে পুনরায় দলে স্বাগত জানালেন দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড। ত্রিপুরাতে সভামঞ্চে দাঁড়িয়েই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি ভুল করেছিলাম, স্বীকার করছি। আজ আমি লজ্জিত, অনুতপ্ত।’ পাশাপাশি, তাঁর আরও মন্তব্য, ‘আমি সেদিন যা ভুল করেছিলাম, সেই ভুল যেন সারা ভারত না করে।’
রবিবার ত্রিপুরার মেগা সভামঞ্চ থেকে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতের মা। দেবীরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। এ কথা বলতে কোনও দ্বিধা নেই। তাঁকে চিনতে আমার ভুল হয়েছিল। কিন্তু, তাঁর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এখানে এসে বিজেপি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকল্পগুলিকে নকল করে নিজেদের রাজ্যে রোল মডেল করতে চেয়েছে। এই যে ত্রিপুরা, এখানে কোনও গণতন্ত্র নেই। সন্ত্রাস এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে, মানুষ হারে হারে টের পাচ্ছে। মুখে ভয়ে বলতে পারছেন না মানুষ।’
পাশাপাশি তাঁর স্বীকারোক্তি, ‘আমি সেই সময় অভিমান করে ভুল করেছিলাম। আমাকে ভুল বোঝানো হয়েছিল। মিথ্যা স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল আমায়। মিথ্যা বলব না, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমায় আধঘণ্টা বুঝিয়েছিলেন দল ছাড়ার আগে। কিন্তু, বিজেপি আমাকে ভুল বুঝিয়েছিল।’ এদিন রাজীব আরও বলেন, ‘আমার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর আমার নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কথা দিচ্ছি, একজন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী হিসেবে, আগামীদিনে যে দায়িত্ব দেওয়া হবে, সেটাই পালন করব। তৃণমূল যাতে সমস্ত রাজ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে, তার জন্য সমস্ত দায়িত্ব পালন করব। আর ত্রিপুরার মানুষকে বলব, আমি যে ভুল করেছি, আপনারা সেই ভুল করবেন না। বিজেপি-কে বিশ্বাস করে আমি যে ভুল করেছি, আপনারা তা করবেন না।’
যোগদানের পরই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায় শোনা গেল নয়া স্লোগান, ‘অভিষেক আসছে আর বিপ্লব দেব কাঁপছে। ত্রিপুরায় গদি টলমল হয়ে গিয়েছে তাই বিজেপির এত ভয়।’
প্রসঙ্গত, একুশের বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগদান করেছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর জন্য দিল্লি থেকে চার্টার্ড ফ্লাইটও পাঠানো হয়েছিল। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, ‘অমিত শাহ বলেছেন, স্পেশাল বিমান পাঠাচ্ছি, এসো। আমার ভিশন-মিশন একটাই বাংলার মানুষের স্বার্থে কীভাবে কাজ করব। আমি মনে করি, কেন্দ্র-রাজ্যের সম্পর্ক না থাকলে বাংলার মানুষের জন্য উন্নয়ন করা যায় না। মেহনতি মানুষের স্বার্থে, উন্নয়নের স্বার্থে, বেকারদের কর্মসংস্থানের স্বার্থে কীভাবে কাজ করা যায় তা নিয়েই অমিত শাহের সঙ্গে আলোচনা করব।
সেই ব্যাপারে আশ্বাস পেলেই ওই দলে যোগ দেব।’ এরপর তিনি যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রতীকে ডোমজুড় কেন্দ্র থেকে লড়াই করেছিলেন তিনি। কিন্তু, ভোটে পরাজিত হন রাজীব। এরপর বিভিন্ন সময় বিজেপির বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। এরপরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, তবে কি তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। সম্প্রতি, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে জাতীয় কর্মসমিতিতে বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য করা হয়েছে বিজেপির তরফে।
Be the first to comment