৫৫ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী রশিদ খান। মঙ্গলবার দুপুর ৩ টে ৪৫ নাগাদ প্রয়াত হন তিনি। উত্তরপ্রদেশের হলেও বাংলাকে ভালোবেসে এখানেই থেকেছেন তিনি। আজ রাতে পিস ওয়ার্ল্ডে রাখা থাকবে তাঁর দেহ। কাল সকাল ৯ টার সময় তাঁর দেহ পিস ওয়ার্ল্ড থেকে রবীন্দ্র সদনে নিয়ে যাওয়া হবে। ৯ টা ৩০ মিনিট থেকে দেহ শায়িত থাকবে রবীন্দ্র সদনে। কাল গান স্যালুটের পর দেহ যাবে বাড়িতে।
রামপুর-সাসওয়ান ঘরানার প্রতিষ্ঠাতা ইনায়েত হুসেন খাঁ-সাহিবের প্রপৌত্র উস্তাদ রশিদ খান। এই ঘরানার অন্যতম জনপ্রিয় ও বিখ্যাত শিল্পী। উত্তরপ্রদেশের বদায়ূঁতে জন্ম তাঁর। রশিদ তালিম নিয়েছেন এই ঘরানারই আর এক দিকপাল উস্তাদ নিসার হুসেন খাঁ-সাহিবের কাছ থেকে, যিনি সম্পর্কে তাঁর দাদু। তবে শুধু দাদুর কাছেই নয়, গোয়ালিয়র ঘরানার উস্তাদ গুলাম মুস্তাফা খাঁ-সাহিবের থেকেও তালিম নিয়েছেন তিনি, যিনি সম্পর্কে রশিদের মামা।
শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অন্যতম দিকপাল রশিদ কিন্তু শুধুমাত্র শাস্ত্রীয় সঙ্গীতেই আটকে থাকেননি। হিন্দি ও বাংলা ছবিতেও গান গেয়েছেন তিনি। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও কনটেম্পোরারি সুরের মিশেলে সেই সব গান নতুন জেনারেশেনের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। একবার পন্ডিত ভীমসেন যোশী রশিদ খান সম্পর্কে বলেছিলেন যে, ভারতীয় সঙ্গীতের ভবিষ্যৎ রশিদ খানের হাতে নিশ্চিন্ত। সঙ্গীতের জগতে পন্ডিতজীর মানও রেখেছেন উস্তাদ রশিদ খান। ২০০৬ সালে একই বছরে তিনি ‘পদ্মশ্রী’ ও ‘সংগীত নাটক অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড’ সম্মানে ভূষিত হন। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ‘পদ্মভূষণ’ সম্মানে সম্মানিত হন শিল্পী। তাঁর অসুস্থতার খবরে চিন্তিত ছিলেন অনুরাগীরা।
প্রায় একমাস ধরে বাইপাসের ধারের হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন উস্তাদ রশিদ খান। প্রস্টেট ক্যানসারে ভুগছেন রামপুর-সাসওয়ান ঘরানার এই শিল্পী। তারই চিকিৎসা চলছিল, চিকিৎসায় ভালোই সাড়া দিচ্ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী, কিন্তু আচমকাই ছন্দপতন হয় ডিসেম্বরের শেষে। হঠাৎই সেরিব্রাল অ্যাটাক হয় তাঁর। তারপরেই ভেন্টিলেশনে স্থানান্তরিত করা হয় ৫৫ বছর বয়সী সঙ্গীতশিল্পীকে। মঙ্গলবার জানা যায় যে অতিসংকটজনক হয়েছে তাঁর শারীরিক অবস্থা।
উস্তাদ রাশিদ খান আর নেই, ‘‘কথাটা ভেবেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে’’ বললেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পিয়ারলেস হাসপাতালের সামনে আবেগপ্রবণ মুখ্যমন্ত্রী এ-ও জানালেন যে, শিল্পী রাশিদ তাঁকে মা বলে ডাকতেন। মঙ্গলবার দুপুর ৩টে বেজে ৪৫ মিনিটে পিয়ারলেস হাসপাতালে প্রয়াত হন রাশিদ। সেই সময়ে প্রশাসনিক কাজে জয়নগরে ছিলেন মমতা। গঙ্গাসাগর থেকে জয়নগর হয়ে তাঁর ফেরার কথা ছিল নবান্নে। কিন্তু পথেই শিল্পী রাশিদের শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর পান মুখ্যমন্ত্রী। কোনও রকমে সেখান থেকে নবান্নে গিয়ে কাজ সামলেই ছুটে আসেন হাসপাতালে। যেখানে রাশিদের চিকিৎসা চলছিল। হাসপাতালে পৌঁছেই রাশিদের মৃত্যুসংবাদ পান। মমতা বলেন, ‘‘আমাকে কথাগুলো বলতে হচ্ছে বলতে হবে বলে। কিন্তু বলতে কষ্ট হচ্ছে। কী করব বলুন সবটাই সামলাতে হয়।’’ প্রশাসনিক দায়িত্ব কাঁধে থাকলে অনেক পরিস্থিতিতেই আবেগ প্রকাশ করা যায় না, সে কথাই বলতে চাইছিলেন মমতা। যদিও একটু পরেই তাঁকে আবেগপ্রবণ শোনায়। মমতা বলেন, ‘‘রাশিদ ছিল আমার ভাইয়ের মতো। খুব ভাল সম্পর্ক ছিল আমাদের। বাংলা উর্দু মিশিয়ে মিষ্টি করে কথা বলত। ও আমাকে বলত, ‘তুমি আমার মা আছে’।’’
এদিকে বিশিষ্ট শিল্পীর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও।
Be the first to comment