‘মনে রাখবেন, আহত বাঘ আরও ভয়ঙ্কর’, নেতাজি ইনডোর থেকে বিরোধীদের নিশানা করে বললেন মমতা

Spread the love

রোজদিন ডেস্ক, কলকাতা:- ‘মনে রাখবেন, আহত বাঘ আরও ভয়ঙ্কর’, নেতাজি ইনডোর থেকে বিরোধীদের নিশানা করে বললেন মমতা। এদিন মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, “আপনারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কুৎসা করতে যোগ্যদের চাকরি কেড়ে নেবেন না। মনে রাখবেন, আহত বাঘ আরও ভয়ঙ্কর। (সুপ্রিম কোর্টের রায়) আমায় মানসিকভাবে আহত করেছে। আমাদের সরকারেক আঘাত করেছে। এই আঘাত আমরা আমাদের কাজের মাধ্যমে ফিরিয়ে দেব।”
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ২৬ হাজার শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মীদের চাকরি বাতিলের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি জানিয়েছিলেন ৭ এপ্রিল তিনি চাকরিহারাদের সঙ্গে কথা বলবেন। সেই কথা মতোই সোমবার নেতাজি ইনডোরে হাজির হয়েছিলেন মমতা। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বিরোধীদের নিশানা করে বলেন, ‘মমতা ব্যানার্জিকে হাজারবার আপনারা মিথ্যেবাদী বলতে পারেন, কুৎসা করতে পারেন, চক্রান্ত করতে পারেন। কিন্তু মনে রাখবেন সুস্থ বাঘের থেকে আহত বাঘ আরও ভয়ংকর। এ আঘাত আপনাদের আঘাত নয়, এ আঘাত আমার উপর মানসিকভাবে আঘাত। আমাদের সরকারকে আঘাত করেছেন। এ আঘাতের প্রত্যুত্তর আমরা ফিরিয়ে দেব কাজের মধ্যে দিয়ে, সম্মানের মধ্যে দিয়ে, জীবন জীবিকার মধ্যে দিয়ে।’
সোমবার বিকালে বক্তব্যের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এখানে উপস্থিত সমস্ত বঞ্চিত, যাঁরা একটি কলমের খোঁচায় জীবনটাকে সঙ্কটের মুখে দাঁড় করিয়েছেন, ভাববেন না আমরা এটাকে ভালভাবে মেনে নিয়েছি। আপনাদের শোকে আমাদের হৃদয় পাথর হয়ে গিয়েছে। আমরা মানবিক মানুষ। আমাদের হৃদয়ে পাথর নেই। একথা বলার জন্য আমায় জেলেও ভরে দেওয়া যেতে পারে। ‘আই ডোন্ট কেয়ার।’ আমি মনে করি মানুষ বিপদে পড়লে সে লাল, সাদা, হলুদ দেখার দরকার নেই। তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের মর্যাদা, সম্মান, অস্মিতা ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমরা অস্বীকার করতে পারি না।”
এর পরেই বিরোধীদের মমতার আক্রমণ, “চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা নেই, চাকরি কাড়ার ক্ষমতা আছে। তাঁদের ধিক্কার জানাই। যাত্রাপালার মাধ্যমে আপনাদের ভুল বোঝাচ্ছে। রাজ্য সরকার অনেক চেষ্টা করেছিল। ২০২২ থেকে নোংরা খেলা শুরু করেছে।” তিনি আরও বলেন, “যে মানুষটা জানে না কী হয়েছে। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি জেনেশুনে কাউকে শাস্তি দিইনি। আমি জেনেশুনে কারও চাকরি খাইনি। তাই অনেক বদহজম হওয়া সত্ত্বেও সিপিএমের কারও চাকরি খাইনি।”
এর পরেই আইজীবি তথা সিপিআইএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে মুখ্যমন্ত্রীর তোপ, ”কেন উনি মামলা করলেন। সিপিএমকে জবাব দিতে হবে। কেন উনি সব তালিকা বাতিল করালেন।” তিনি আরও বলেন, “আমি তো চাকরি দিয়েছিলাম। আমার সরকার চাকরি দিয়েছিল। ভুল শুধরে নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে সময় দাও। তোমরা সেই সময় দাওনি।”
এর পরে তিনি বলেন, “আমায় যদি কেউ চ্যালেঞ্জ করেন আমি সেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে জানি। আমি বেঁচে থাকাকালীন যোগ্যদের চাকরি যেতে দেব না। এটা আমার কমিটমেন্ট। শিক্ষাব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলার জন্য একটা চক্রান্ত চলছে একটি পরিকল্পনা চলছে, নাইন টেনের শিক্ষকরা গেটওয়ে অফ হায়ার এডুকেশন। অনেকে গোল্ড মেডালিস্ট। তাঁদের চোর বলছেন। এই অধিকার কে দিল আপনাদের। এই রায়ের পিছনে কোনও খেলা নেই তো? সেই রাজনৈতিক খেলা চলছে কে খেলছেন।” তিনি আরও বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট বলেনি কে যোগ্য বা অযোগ্য। তাঁদের বাছাই করার সুযোগ আদালত দেয়নি। সিবিআই যা যা কাগজ চেয়েছিল এসএসসি সেই সব দিয়েছিল।” আদালতে রিভিউ পিটিশন দাখিল করতে রাজ্যের হয়ে যে সব আইনজীবীরা লড়বেন তাঁদের নাম বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “কপিল সিব্বল, অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি, রাকেশ দ্বিবেদী, প্রশান্ত ভূষণ, কল্যাণ ব্যানার্জি ছাড়াও আরও অনেকে থাকবেন যাঁরা রাজ্যের হয়ে যোগ্যদের জন্য আইনি লড়াই করবেন।”
মমতার আশ্বাস, “যাঁরা যোগ্য তাঁদের চাকরির নিশ্চিন্ত করার দায়িত্ব সরকারে। পরিষ্কার বলছি কোনও রাখঢাক নেই। সুপ্রিম কোর্টের আইন অনুযায়ী করব। আমাদের এ, বি, সি, ডি, ই প্ল্যান রেডি। ” শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের চাকরি কেউ টার্মিনেট করেনি এখনও। কোনও নোটিশ পেয়েছেন? আপনাকে কেউ বারণ করেছে? আপনি আপনার কাজ করুন না। কেউ বারণ করেননি। আপনারা বাচ্চাদের পড়াবেন না? চাকরি করুন না। স্বেচ্ছায় সকলেই কাজ করতে পারেন।” মমতা বলেন, “যদি কোর্ট বলে দেয় যে এভাবে হবে না। তাহলে শিক্ষাদফতরকে আবেদন করতে পারি। আদালত বলেছে, তিন মাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। আপনারা যাতে আবার চাকরি ফিরে পান সেই ব্যবস্থা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দু’মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে। কারও চাকরিজীবনে ছেদ পড়বে না। মমতা বলেন, “মানবিকতার খাতিরে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে বলুন কার যোগ্য এবং অযোগ্য সেই তালিকা তুলে দিক। শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার অধিকার কারও নেই।”
এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী ফের মধ্যপ্রদেশের ব্যাপম কেলেঙ্কারির কথা তুলে ধরে বিজেপিকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, ”৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। নিট নিয়েও অভিযোগ ছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট নিট বাতিল করেনি। বাংলাকে টার্গেট করা হচ্ছে কেন। সিপিএমের আমলে চিরকুট দিয়ে চাকরি হয়েছে। বাংলার ট্যালেন্টকে আপনারা ভয় পান। সুপ্রিম কোর্ট ব্যাখ্যা দিলেই আমরা কৃতজ্ঞ থাকব। যোগ্যদের চাকরি যাতে যোগ্যরা সম্মানের সঙ্গে ফিরে পায়। কোর্ট ব্যাখ্যা না দিলে আমরা রাস্তা খুঁজে নেব। আপনাদের পাশে দাঁড়াব। দু’মাস ভুগলে ২০ বছর ভুগতে হবে। সেই দুই মাসও পুষিয়ে দেব।”
যোগ্য প্রার্থীদের মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, “যাঁরা যোগ্য তাঁরা নিশ্চিন্তে থাকুন ভরসা রাখুন। চিন্তা করবেন না। আপনারা বাচ্চাদের মানুষ করুন। আমরা চাই আইন আপনাদের সুরাহা করুক। আগে আমাকে যোগ্যদেরটা ঠিক করতে দিন। যাঁরা বাকি থাকবেন, যাঁদের অযোগ্য বলা হচ্ছে তাঁদের বিরুদ্ধে কী প্রমাণ আছে খতিয়ে দেখব। প্রমাণিত হলে কিছু করার থাকবে না। কিন্তু কাকে কেন অযোগ্য বলা হয়েছে, কে তদন্ত করেছে, আলাদা করে সেটা দেখতে হবে। আলাদা করে সেটা নিয়ে আমি কথা বলব। সকলে নিশ্চিন্তে থাকুন। সেটা নিয়ে পড়ে আলোচনা করব। প্রথমে যোগ্যদের সবকিছু খতিয়ে দেখতে হবে। যোগ্য-অযোগ্যদের মধ্যে ঝামেলা লাগাবেন না। নিশ্চিন্তভাবে বাচ্চাদের শিক্ষা দিন। বাকিদের সঙ্গে সুযোগ মতো কথা বলব। প্রথমে আমাদের তদন্ত করতে দিন।”
এদিন মমতার সঙ্গে নেতাজি ইন্ডোরের বৈঠকে ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, সাহিত্যিক আবুল বাশার, কবি সুবোধ সরকার। উপস্থিত ছিলেন আরও কয়েকজন সরকারি কর্তা, আইনজ্ঞরা। প্রথমে চাকরিহারাদের প্রতিনিধিরা মুখ্যমন্ত্রীর সামনে তাঁদের দাবিগুলি তুলে ধরেন। এরপরেই তাঁদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*