চিরন্তন ব্যানার্জি:-
আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে আলবিদা ভারতীয় দলের বাঁহাতি ভারতীয় ওপেনার ‘গব্বর’ শিখর ধাওয়ান। শনিবার সকালে তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে এক ভিডিয়ো বার্তা শেয়ার করে অবসরের কথা ঘোষণা করেছেন।
৩৮ বছরের শিখরের ভারতীয় দলে অভিষেক হয়েছিল ২০১০ সালে। বিশাখাপত্তনমে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অভিষেকে ২ বলে শূন্য রানে বোল্ড হন। তবে টেস্ট অভিষেকে তিনি গড়েন রেকর্ড।
২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেই টেস্ট অভিষেকে দ্রুততম শতরান হাঁকিয়ে রেকর্ড বুকে নাম তুলে নেন ‘গব্বর’। ১৮৭ রান করে ম্যাচের সেরাও হন। ২০১৮ সালে ভারতের হয়ে শেষ টেস্ট খেলেছেন। ২০১১ সালে টি২০ আন্তর্জাতিকে অভিষেক হয়। দেশের হয়ে শেষ টি২০ খেলেন কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ২০২১ সালে।
শিখর প্রথম নজরে পড়েন ২০০৪ সালের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে। তিনটি শতরান-সহ সেই টুর্নামেন্টে ৫০৫ রান করেছিলেন। বীরেন্দ্র শেহওয়াগ, গৌতম গম্ভীরদের সঙ্গে দিল্লি দলের হয়ে খেলেছেন। অফ-সাইডে শক্তিশালী শিখরের কভার ড্রাইভ, কাট শট মুগ্ধ করেছে ক্রিকেটপ্রেমীদের।
শিখরকে বলা হয় মিস্টার আইসিসি। তার কারণ, ৫০ ওভারের ফরম্যাটে আইসিসি ইভেন্টে যাঁদের অন্তত ১ হাজার রান রয়েছে তাঁদের মধ্যে শিখর ছাড়া আর কারও ব্যাটিং গড় ৬৫-র উপরে নেই। ভারতীয় দলকে নেতৃত্বও দিয়েছেন শিখর ধাওয়ান।
২০১৩ সালে মোহালিতে টেস্ট অভিষেকে ১৭৪ বলে ১৮৭ রান শিখরের কেরিয়ারের অন্যতম সেরা। টেস্ট অভিষেকে দ্রুততম শতরান, ম্যাচের সেরা হওয়া এই ইনিংসের সৌজন্যেই। এই সিরিজের প্রথম দুটি টেস্টে শেহওয়াগ ব্যর্থ হন, তাঁর জায়গায় মোহালি টেস্টে একাদশে আসেন শিখর।
পিটার সিডল, মিচেল স্টার্ক-সমৃদ্ধ অস্ট্রেলিয়ার শক্তিশালী বোলিং অ্যাটাকের বিরুদ্ধে শিখরের ওই বিস্ফোরক ইনিংসের পর তাঁকে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে গল টেস্টে ১৬৮ বলে ১৯০ রান করেন ধাওয়ান। অভিনব মুকুন্দের ব্যর্থতা ঢেকে শিখর মূল্যবান পার্টনারশিপ গড়েন চেতেশ্বর পূজারার সঙ্গে।
২০১৫ সালে বিশ্বকাপে মেলবোর্নে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ধাওয়ানের ১৪৬ বলে ১৩৭ রানের ইনিংসটিও অনবদ্য। সেই ম্য়াচেও সেরার পুরস্কার পান ধাওয়ান। ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে ৯৪ বলে ১১৪ রানের ইনিংস ভারতীয় ওডিআই দলে শিখরের জায়গা পাকা করতে ইতিবাচক ভূমিকা নেয়।
২০১৪ সালে এজবাস্টনে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শিখরের ৮১ বলে ৯৭ রানের ইনিংসটিও অন্যতম সেরা। জেমস অ্যান্ডারসন, ক্রিস ওকসদের সামলে অজিঙ্ক রাহানের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ জুটি বাঁধেন শিখর। তাঁর এই ইনিংস ভারতকে ওডিআই সিরিজ জেতাতে বড় ভূমিকা নিয়েছিল।
এদিন, সোশ্যাল মাধ্যমে ধাওয়াল লিখেছেন, “আন্তর্জাতিক এবং ঘরোয়া, আমার ক্রিকেট-যাত্রা শেষ হল। যে ভালবাসা এবং সমর্থন পেয়েছি, তার জন্য ধন্যবাদ। জয় হিন্দ।’’
এরপরই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড, দিল্লি ক্রিকেট সংস্থা এবং সমর্থকদেরও প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ধাওয়ান লিখেছেন, “নিজেকে বলতে চাই, দেশের হয়ে খেলতে পারবে না বলে দুঃখ পাওয়ার দরকার নেই, বরং এটা ভেবে আনন্দ পাওয়া উচিত যে আমি দেশের হয়ে খেলতে পেরেছি। আর দেশের হয়ে এই খেলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বিসিসিআই, ডিডিসিএ জানায় আমার কৃতজ্ঞতা। সমর্থকদের নিস্বার্থ ভালবাসা না থাকলে এই জার্নিটা সম্ভব হত না।”
তাঁর এই সফরের জন্য পরিবার, ছোটবেলার কোচ তারক সিং এবং মদন শর্মার প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে ভারতের এই বাঁহাতি ওপেনার। ভিডিও বার্তায় ধাওয়ান বলেছেন, “এঁদের প্রশিক্ষণেই আমি ক্রিকেট শিখেছি। ধন্যবাদ দেব আমার গোটা দলকে যাদের সঙ্গে আমি খেলেছি, আর একটা পরিবার পেয়েছি। সবার ভালবাসা আর সমর্থন পেয়েছি।”
উল্লেখ্য, ধাওয়ান দেশের হয়ে ৩৪টি টেস্ট, ১৬৭টি এক দিনের ম্যাচ এবং ৬৮টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। টেস্টে সাতটি শতরান-সহ মোট ২৩১৫ রান করেছেন। এক দিনের ক্রিকেটে ধাওয়ান করেছেন ৬৭৯৩ রান করা। এর মধ্যে রয়েছে ১৭টি শতরান।
Be the first to comment