অংশুমান চক্রবর্তী
আমার কাছে ঋষি কাপুর মানে ‘ববি’ নয়। আটের দশকের শুরুতে, যখন আমি হাফপ্যান্ট, তখন মা-কাকিমাদের সঙ্গে কয়েকবার সিনেমা হলে গেলেও অমিতাভ-মিঠুনের বাইরে কাউকে দেখা বা চেনার সুযোগ হয়নি। ঋষিকে প্রথম দেখা আটের দশকের শেষে। নয়ের দশকে এসে পুরোদস্তর জানা।
সময়টা সুপারহিট মুকাবিলার। নাদিম-শ্রাবণের মহাকাব্যিক সুরে কুমার শানুর গলায় ঋষির অনবদ্য লিপ, বুকের বাঁদিকে মোচড় দিয়ে যেতো। তখন মধ্যগগনে তিন খান। তবু কোনোভাবেই অস্বীকার করা যেত না ঋষিকে। রঙবেরঙের সোয়েটারে তিনি পর্দায় এলেই এপ্রিলের গরমেও ডিসেম্বরের আমেজ। অন্য নায়কদের মতো ঋষি সবজান্তা ছিলেন না, পারতেনও না সবকিছু। ভিলেন পেটানো তো দূর, বেশিরভাগ সময় নিজেই মার খেয়ে রক্তাক্ত হয়ে যেতেন। তাঁকে বাঁচানোর জন্য অবতীর্ণ হতেন কোনো না কোনো ম্যাচো সহ-নায়ক।
এই দুনিয়ায় দুষ্টু লোকেদের যিনি মারেন তিনিই নায়ক। যিনি মার খান, তিনি নায়ক হন কী করে? তাঁকে কীভাবে ভালোবাসতে পারেন দর্শকরা? ঋষির ক্ষেত্রে ঘটেছিল ঠিক উল্টোটাই। দিস্তা দিস্তা নায়কোচিত সাফল্যের ভিড়ে তাঁর আটপৌরে ব্যর্থতার সঙ্গে খুব সহজেই নিজেদের মেলাতে পেরেছিল আমার মতো কিছু আপাত ব্যর্থ মধ্যবিত্ত মানসিকতার দর্শক। ঋষির মধ্যে এ যেন পর্দায় নিজেকেই দেখা।
প্রেক্ষাগৃহের বাইরে ঋষির কাট আউটে গাঁদার মালার দৃশ্য স্মৃতিতে নেই। তাঁর জন্য তুমুল হইহল্লা, এমন কথাও খুব বেশি কানে আসেনি। তবু আজ, বহু সিনেমায় ভিলেনের হাতে মার খাওয়া আপাত ব্যর্থ নায়ক, অগণিত মানুষের দুফোঁটা চোখের জলের কারণ হয়ে রইলেন।
এখানেই হয়তো অনেককে মেরে বেরিয়ে গেলেন ঋষি…
Be the first to comment