ছবি দেখছিলেন বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে। খবরের কাগজের পাতায়। কেরলের বন্যার ছবি। কিন্তু নিজের ছেলে কোথায় কী ভাবে আছেন, জানতে পারছিলেন না। রবিবার হৃদরোগে আক্রান্ত হন । এ দিনই মৃত্যু হয় সবং এর বাসিন্দা ছবি মাজির।
বাড়িতে অভাব। তাই সংসারের হাল ফেরাতে বছরখানেক আগে কেরলে গিয়েছিলেন গৌতম মাঝি। ভয়াবহ বন্যা শুরুর পরেই বাড়ির লোকেদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাঁর। গৌতমের দাদা বিশ্বজিৎ জানান, চারদিন ধরে কোনও খবর পাওয়া যায়নি তাঁর ভাইয়ের। তাই তাঁদের মা খুবই অস্থির হয়ে পড়েছিলেন। রবিবার সন্ধের পর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। বুকে ব্যথা হচ্ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়। আজ তার শেষকৃত্য করা হয়। বিশ্বজিৎ বলেন, “ভাইকে জানাতেও পারিনি, মা নেই। মায়ের শেষকৃত্যেও থাকা হল না ওর।”
চন্দ্রকোনা রোডের শান্তিনগরের বাসিন্দা সুজিত দাসের জন্যেও একরাশ উদ্বেগ নিয়ে অপেক্ষা করছেন তাঁর বৃদ্ধ বাবা-মা। বাবা বিশু দাস বাজারে গামছা বিক্রি করে সংসার চালাতেন। তাই কাজের সুযোগ আছে খবর পেয়ে ছেলে সুজিতকে কেরলে পাঠিয়েছিলেন। গত দু’বছর ধরে কোচিতে টাওয়ারের কাজ করতেন সুজিত। তাঁর রোজগারের টাকায় এখন সংসারে স্বাচ্ছন্দ এসেছে। কিন্তু বাঁধ সাধলো বন্যা। সরকারের কাছে কাতর আবেদন করেছেন মা অঞ্জু দাস। তাঁর ছেলেকে ফিরিয়ে আনা হোক।
১২ বছর ধরে কেরালার কুনামমাভু জেলায় একটি পোশাকের দোকানে কাজ করছিলেন গোয়ালতোড়ের মহারাজপুরের বাসিন্দা নৈমুদ্দিন মোল্লা। স্ত্রী-কন্যাকে সঙ্গে নিয়েই থাকতেন সেখানে। তিনদিন আগে বাড়ির লোকেদের সঙ্গে শেষবার ফোনে কথা হয়েছিল তাঁর। তারপর থেকেই যোগাযোগ সম্পুর্ণ বিচ্ছিন্ন। সেইসময় জানিয়েছিলেন তাঁরা একটি ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন, কিন্তু খাবার নেই। জলেরও অভাব। তারপরেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন নৈমুদ্দিনের পরিবার। কবে ফিরে আসবেন তাদের প্রিয়জনেরা, সেদিকেই এখন তাকিয়ে রয়েছেন তাঁরা।
Be the first to comment