সুপ্রিম কোর্ট রায় ঘোষণা করার দু’দিন পর খুললো শবরীমালা মন্দিরের দরজা। বার্ষিক মন্ডলা পুজো উপলক্ষ্যে শনিবার বিকেল পাঁচটায় দর্শনার্থীদের জন্য আয়াপ্পা মন্দিরের দরজা খুলে দেওয়া হলো। কিন্তু সুপ্রিম রায়ের পরও মহিলাদের প্রবেশাধিকারে ‘না’ শবরীমালায়। প্রবেশাধিকার পেলেন না অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে আসা ১০ জন মহিলা। ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সি ওই দশজন মহিলাকে আয়াপ্পা দর্শনের অনুমতি না দিয়ে তাঁদের ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে পুলিশ, এমনটাই খবর সংবাদসংস্থা এএনআই সূত্রে।
প্রসঙ্গত, এদিন মন্দিরে প্রবেশে ইচ্ছুক মহিলা পূণ্যার্থীদের জন্য বাড়তি কোনও সুরক্ষার আয়োজন করেনি কেরালা সরকার। রাজ্যের এক মন্ত্রীর কথায়, ‘মন্দির কোনও আন্দোলনের জায়গা নয়।’ ২০১৮ সালে শীর্ষ আদালত মহিলাদের মন্দিরে প্রবেশের ছাড়পত্র দেয়। ওই রায়ের পুনর্বিবেচনায় মামলাটি সাত সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠানো হয়েছে। তবে, আগের রায়ের উপর স্থগিতাদেশ জারি করা হয়নি অর্থাৎ, ইচ্ছুক মহিলাদের আয়াপ্পার মন্দিরে প্রবেশ কোনও বাধা নেই। তবে কেন কেরালা সরকার কোনও পদক্ষেপ করলো না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
বাম নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার শুক্রবারই তাদের অনিচ্ছার বিষয়টি স্পষ্ট করেছিল। জানানো হয়, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে অনেকগুলি বিষয় স্পষ্ট নয়। তাই কোনও মহিলাকে নিয়ে মন্দিরের দিকে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বহুলচর্চিত শবরীমালা রায় বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় দেশের শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের তরফে বলা হয়, মসজিদে মুসলিম মহিলাদের প্রবেশ, পার্সি মহিলাদের মামলা এবং দাউদি বোরা মামলার বিষয়ও একই। সেই মর্মেই শবরীমালায় মহিলাদের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞার মামলাটিকে বৃহত্তর বেঞ্চে স্থানান্তকরণের সিদ্ধান্ত নেয় সুপ্রিম কোর্ট। পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সহমত না হওয়ায় কার্যত অমিমাংসিত থেকে গেল মেয়েদের মন্দিরে প্রবেশের বিষয়টি।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর দেশের তৎকালীন বিচারপতি দীপক মিশ্র নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চের তরফে কেরালার শবরীমালার মন্দিরে ঋতুমতী মহিলাদের আয়াপ্পা দর্শনের অনুমতি দেওয়া হয়। বিচারপতিরা বলেছিলেন, ৫০ বছরের কম বয়সী মহিলাদের মন্দিরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাকে, ধর্মীয় আচার বলে মেনে নেওয়া যায় না। এর পরে ওই মন্দির নিয়ে উত্তাল হয়েছে কেরল-সহ গোটা দেশ। ক্ষোভে ফেটে পড়েন মন্দিরের পুরোহিতরা। মন্দির পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ট্রাভানকোর দেবস্বম বোর্ড শীর্ষ আদালতের রায় নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে মন্দিরের দরজা একাধিকবার খুললেও ভক্তদের বাধায় একজনও ৫০-এর কমবয়সী মহিলা সেখানে ঢুকতে পারেননি সেখানে।
দেবস্বমের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী কাডাকাম্পাল্লি সুরেন্দ্রন পরিষ্কার করে জানিয়ে দেন, ‘শবরীমালা মন্দির অন্দোলনকারীদের আন্দোলনের জায়গা নয়। প্রচারের জন্য কোনও মহিলা মন্দিরে প্রবেশ করতে চাইলে রাজ্য সরকারের তাতে সায় নেই। এরপরও যারা মন্দিরে যেতে চান তাদের কোর্টের অনুমতি নিশ্চিত করতে হবে।’
Be the first to comment