সোমা মুখার্জি : সু্ন্দরী তিলোত্তমা আমাদের আরও সুন্দরী হয়ে ওঠে এই শরৎ ঋতুতে। কারণ, মা দুর্গার আগমন কলকাতার রূপকে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করে তোলে। ভারতীয় সভ্যতার এক উন্নত জাতি বাঙালি জাতি। ১৬৯৮ সালে ইংরেজরা কলকাতায় এলে বাঙালি জমিদার পরিবার সাবর্ণ রায়চৌধুরীরা ইংরেজদের লিজে জমি দিয়েছিলেন ব্যবসা স্থাপন করতে। তারপর ইতিহাসের পাতায় মর্মান্তিক ঘটনাগুলি লেখা হয়ে গেছে।
এই সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার ৩৮৫ বছর ধরে দেবীশক্তি মা দুর্গার আরাধনা করে আসছেন। কলকাতার বরিশা, বিরাটি, নিমতা, উত্তরপাড়া, হালিশহরে সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের সদস্যরা বাস করেন।
একচালা দেবীমূর্তির সাবেকি রূপ এই পরিবারের মা দুর্গার। ঠাকুর দালান বিরাটি সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের জমিদারির ছাপ রেখে গেছে। মা দুর্গা পুজোর দিনগুলিতে সোনার গয়নায় সেজে ওঠেন। বাড়ির মেয়ে-বউ-রা মাকে সাজান নিজের হাতে। বিসর্জনের দিন বাড়ির বিবাহিত মহিলারা দেবীকে সাতবার প্রদক্ষিণ করে সিন্দুর খেলে বিদায় দেন। নবমীর দিন কুমারী পুজোর রীতি আছে এই বিরাটির সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের। পুজোর কটা দিন পরিবারের সকল সদস্যরা মিলিত হন ঠাকুর দালানে। দেশে-বিদেশে যেখানেই থাকুন এই পরিবারের সদস্যরা, সবাই মায়ের আরাধনায় মেতে ওঠেন। ধুনুচি নাচ, একসাথে খাওয়া-দাওয়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিবারের সদস্যদের যোগদান মাতৃ আরাধনাকে এক আলাদা মাত্রা এনে দেয়।
পশ্চিমবঙ্গের বহু বাঙালি চাকরিসূত্রে বিদেশে বা স্বদেশের অন্য জায়গায় থাকেন। তবে দেবী দুর্গার পুজো মায়ের কোলে যেন সন্তানকে আবার কিছুদিনের জন্য ফিরিয়ে দেন। বাঙালির দুর্গাপুজো যে বাঙালির এক মিলনক্ষেত্র তা বিরাটির সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারে এলে বোঝা যায়।
Be the first to comment