কোচবিহারে ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনায় কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করল তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। বহিষ্কার করা হলো অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি সাবির সাহা চৌধুরীকে। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় রবিবার এ কথা ঘোষণা করেন।
এ দিন পার্থ বাবু বলেন, কোচবিহারে ছাত্র সংঘর্ষের ফলে মৃত ছাত্র নিতাই দাসের পরিবারের প্রতি সমবেদনা রইল। এই ঘটনায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি সাবির সাহা চৌধুরীর দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছিল। তাই সাবিরকে ছাত্র পরিষদ থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, সেইসঙ্গে নতুন করে গঠন করা হয়েছে কোচবিহারের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। নতুন সভাপতির হাতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এই নতুন সংগঠনের।
কোনও রকমের বিশৃঙ্খলা যে দল বরদাস্ত করবে না, তাও এ দিন জানিয়ে দেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছেন ছাত্র, যুব বা তৃণমূল কর্মী যেই হোন না কেন, তৃণমূলের পতাকা হাতে নিয়ে কেউ যদি বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেন, দল তা বরদাস্ত করবে না। পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলেছেন মানুষের উন্নয়নই তৃণমূলের লক্ষ্য, একতা এই দলের শপথ। কিন্তু মাঝেমধ্যেই দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই কথা অমান্য করা হচ্ছে।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন কড়া ভাষায় জানিয়ে দেন, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কোনও ছাত্র, কোনও নেতা যদি দলের ভারসাম্য নষ্ট করেন তাহলে দলে তাঁর কোনও জায়গা নেই।
বৃহস্পতিবার দিনহাটা শহরের উপকণ্ঠে কলেজপাড়ায় দিনহাটা কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র নিতাই দাসকে সাবির সাহা চৌধুরীর ছেলেরা মারধর করে বলে অভিযোগ। এর পাল্টা আক্রমণে জখম হন অভিজিৎ সরকার নামে দিনহাটা কলেজেরই এক ছাত্র। দুজনকেই দিনহাটা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে নিতাইকে স্থানান্তরিত করা হয় কোচবিহারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। তিন দিন ধরে সেখানেই ভেন্টিলেশনে রেখে চিকিৎসা চলছিল তাঁর। শনিবার বেলা ১২.২৫ মিনিটে মৃত্যু হয় নিতাইয়ের।
এই ঘটনায় দিনহাটা পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর জয় ঘোষ ও জেলার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি সাবির সাহা চৌধুরী সহ আরও বেশ কয়েকজনের নামে দিনহাটা থানায় অভিযোগ দায়ের করে ছাত্রটির পরিবার। ইতি মধ্যেই এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে এখনও অধরা কাউন্সিলর জয় ঘোষ ও সাবির সাহা চৌধুরী।
অভিযুক্ত সাবির সাহা চৌধুরী তৃণমূল নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও উদয়ন গুহ’র ঘনিষ্ট বলে তাঁকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন মৃত ছাত্রের পরিবার। কিন্তু এ দিন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এই বক্তব্যের পর সাবিরের গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কা বাড়ল বলা যেতে পারে।
বেশ কয়েকদিন ধরে কোচবিহারে যুব-মাদারের সংঘর্ষে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। গোষ্ঠী সংঘর্ষে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। কয়েকদিন আগেই পঞ্চায়েত উপপ্রধানের স্বামী তথা তৃণমূল নেতা নরেশ দেবনাথের হাতে কার্বাইন দেখা গেছিল। বিরোধীদের বক্তব্য, এই জেলায় তৃণমূলের মূল প্রতিপক্ষ তৃণমূল নিজেই। তাই কি জেলায় দলের রাশ ধরে রাখতে মরিয়া তৃণমূল নেতৃত্ব? প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা।
Be the first to comment