করোনায় আক্রান্ত রোগীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটল পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে ৷ সেখানকার কোভিড হাসপাতালের ছাদ থেকে ওই রোগী নিচে লাফ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন বলে অভিযোগ ৷ শুক্রবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটে ৷ মৃতের নাম চিত্তরঞ্জন বেরা (বয়স ৫৬) ৷
হাসপাতাল সূত্রে খবর, তাঁকে রাত ১টা-দেড়টা থেকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তন্নতন্ন করে খুঁজে না পেয়ে শালবনি থানায় যোগাযোগ করা হয় ৷ শনিবার ভোরে ওই ব্যক্তির মৃতদেহ হাসপাতালের পিছনের দিক থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ইতিমধ্যে ঘাটাল মহকুমার দাসপুরে তাঁর বাড়িতে খবর দেওয়া হয়েছে।
তবে শালবনি কোভিড হাসপাতালে এই ধরনের ঘটনা এই প্রথম নয় ৷ এর আগে ২০২০ সালের ২১ অগস্ট এই ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছিল ৷ ফলে সেই ভয়াবহ স্মৃতি আবার ফিরে আসায় হাসপাতালে শোরগোল পড়েছে ৷ পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ৷
এই ঘটনায় জেলা স্বাস্থ্য ভবন এবং হাসপাতালের তরফে এখনও অবধি মুখ খোলা হয়নি ৷ তবে বিভিন্ন সূত্র ধরে জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তি ২-৩ দিন আগে শালবনি কোভিড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন । শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন ৷ বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে ৫০ ঊর্ধ্বদের ক্ষেত্রে এটিও কোভিডের অন্যতম লক্ষণ।
মৃতের ছেলে অভিষেক বেরার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি ৷ তবে পরিবারের তরফে পরোক্ষে স্বীকার করা হয়েছে যে করোনা পরীক্ষার ফলাফল আসার আগে স্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো ওষুধ খেয়েছিলেন চিত্তরঞ্জনবাবু ৷ সেই সময় থেকেই তিনি কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলেন ! তারপর রিপোর্ট পজিটিভ আসার পর তাঁকে শালবনি কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
এদিকে হাসপাতালের কয়েকজন কর্মী জানিয়েছেন, উনি প্রায়ই নিজের শয্যা ছেড়ে এদিক ওদিক চলে যাওয়ার চেষ্টা করতেন। প্রতিবারই ধরে আনা হয়েছে। কিন্তু গতকাল গভীর রাতে ডিউটিতে থাকা কর্মীদের নজর এড়িয়ে কোনওভাবে ছাদে চলে যান । কেউ টের পাননি ! রাত ২ টো থেকে তাঁকে খোঁজা হয় সর্বত্র ৷ কিন্তু পাওয়া যায়নি । অবশেষে পুলিশ এসে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে ।
এদিকে এই ঘটনায় নজরদারির অভাবের অভিযোগ তোলা হয়েছে স্থানীয়দের তরফে । ওই হাসপাতালে চিকিৎসক নার্স ছাড়াও ১৫০ জন চুক্তিভিত্তিক কর্মী আছেন । করোনা যোদ্ধা ৬ জন এবং আরও ৫ জন চুক্তিভিত্তিক কর্মী রোগী সহায়তা কেন্দ্রের দায়িত্বে আছেন ৷ তা সত্বেও ৬০ জন ( গতকাল ৫৯ জন ভর্তি ছিলেন বলে জানা গিয়েছে । আজ সকালের জেলা স্বাস্থ্য দফতরের হিসেবে ৫১ জন ভর্তি আছেন ৷ ) রোগীকে কেন পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়া গেল না, সেই অভিযোগ তোলা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে।
প্রসঙ্গত, গতবছর 21 অগস্ট হাসপাতালের ছোট্ট একটি কেবিনে ঢুকে বছর 55-র গোপাল ঘোড়ই ( বাড়ি সুলতানপুর, খড়্গপুর গ্রামীণ ) আত্মহত্যা করেছিলেন গলায় নিজের গামছার ফাঁস লাগিয়ে । তিনিও অবসাদগ্রস্ত হয়ে এই কাজ করেছিলেন বলে জানা গিয়েছিল । তৎকালীন রাজ্যের কোভিড ওএসডি ড. গোপালকৃষ্ণ ঢালি মেদিনীপুরে এসে স্বীকার করেছিলেন কোভিড আক্রান্তরা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন । তাঁদের সাহস দেওয়া ও পাশে থাকা প্রয়োজন । স্বভাবতই এই ঘটনার পর প্রতিটি হাসপাতালে আবারও একজন করে কাউন্সিলর বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিযুক্ত করার দাবিও উঠছে ।
শালবনির এক সমাজকর্মী সন্দীপ সিংহ বললেন, ‘‘হাসপাতালের পরিকাঠামো এবং কর্মী এই মুহূর্তে যথেষ্ট । তাই অবিলম্বে 200 জনকে সুচিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ করুক প্রশাসন ।’’
এই ঘটনায় জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র বললেন, “অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ও হৃদয় বিদারক ঘটনা । প্রতিটি ক্ষেত্রে আরও যত্নবান হওয়া প্রয়োজন ।”
Be the first to comment