বঙ্গ বিজেপির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ জানিয়ে দিল্লি দরবারে চিঠি পাঠালেন বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু। এই ‘পত্রবোমা’ তিনি পাঠিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাকে। পত্রবোমায় সরাসরি তিনি অভিযোগের আঙুল তুলেছেন দলবদলু নব্য বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্বের দিকে। তীব্র আক্রমণ করে সায়ন্তন লিখছেন, বঙ্গ বিজেপিটা দলবদলু সিন্ডিকেটে ভরে গিয়েছে। ইডি-সিবিআই থেকে বাঁচতে যাঁরা বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন, তাঁরাই দলবদলু সিন্ডিকেট চালাচ্ছেন। যে কথা ওই নেতারা বাংলার বিজেপির সম্পর্কে প্রচার করতে চাইছেন, সেটা গ্রাউন্ড রিয়েলিটি নয়।
আর কী কী লিখলেন সায়ন্তন?
” নমস্কার নাড্ডাজি, শুভ দীপাবলি। আমার রাজ্যে বিজেপির পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এই চিঠি লিখছি। এই চিঠি অত্যন্ত দ্বিধা ও দুঃখের সঙ্গে লিখছি। ১৯৮০ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ কার্যকর্তার মাধ্যমে যে দল গড়ে উঠেছিল তা এখন ৫-৬ জন নব্যদের সিন্ডিকেটে পরিণত হয়েছে। এই নব্যরা ২০১৯ অথবা ২০-তে দলে এসেছে।
এই নেতারা ২০১৯ থেকে ২১-র মধ্যে বিজেপিতে যোগ দিয়েছে। ২০২১-এ এই নব্যদের নিরাপদ আসন দেওয়া হয়েছে, এক্ষেত্রে দলের পুরনো কর্মীদের দাবিকে অবহেলা করা হয়েছে। ফলস্বরূপ আমরা বেশিরভাগ নিশ্চিত আসনে হেরেছি। এগুলির মধ্যে আছে দুর্গাপুর পূর্ব, বিধাননগর, পানিহাটি, বারাকপুর, সিঙ্গুর, সিউড়ি, জলপাইগুড়ি, সপ্তগ্রাম, কালনা এবং ভবানীপুর। আমার আশা এইসব ভুল সত্ত্বেও আমরা নিজেদের সংশোধন করতে পারব। দুর্ভাগ্যবশত আগামী পঞ্চায়েত ভোটে হয়ত আমরা রাজ্যে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ব।
তৃণমূল বিপুলভাবে তাদের জমি হারাচ্ছে। তাদের কার্যকলাপ ও দুর্নীতি কারণে সাধারণ মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে। সিপিআইএম এই শাসক বিরোধিতাকে কাজে লাগাচ্ছে। সম্প্রতি তারা একটাও ট্রেন বা গাড়ি ভাড়া না করেই কলকাতায় ৩৫ হাজার যুবকর্মীদের নিয়ে জমায়েত করেছে।
দল সামাজিক মাধ্যমে ভীষণভাবে সক্রিয়। ফেসবুক ইউটিউব-এর মাধ্যমে একটা ভ্রান্ত ধারণা কয়েকজন নেতা ছড়িয়ে চলেছেন। এইসব ফেসবুক প্রোফাইল ও ইউটিউব চ্যানেলকে নিজেদের কব্জায় নিয়ে তাঁরা নিজেদের ঢাক পেটাচ্ছেন। এই ধরনের কাজ আমাদের স্বার্থকে বিঘ্নিত করছে। এই ধরনের কাজ এভাবে চলতে থাকলে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে আবার লড়াইটা টিএমসি এবং সিপিআইএমের মধ্যেই হবে।
বর্তমানে এই নব্যরা বেশিরভাগ জেলা কমিটির সভাপতি হয়েছেন এবং তাদের লোকেরাই সিংহভাগ কমিটিতে রয়েছেন। আমি নব্যদের বিরোধী নই কিন্তু তাদের কোনও দায়িত্ব দেওয়ার আগে তাদেরও কিছু সময় দিতে হবে। বিরোধী দলনেতা এবং দলের কয়েকজন সাংসদ এমন মন্তব্য তৃণমূল নেতাদের সম্পর্কে করছেন যাতে সাধারণ মানুষের মনে হচ্ছে এটা দুই তৃণমূলের মধ্যে ঝগড়া। আমার স্বনির্বন্ধ অনুরোধ, এইসব নেতাদের দলের আদর্শগত দিক সামনে রেখে ইস্যু তৈরি করতে বলা হোক।
শুধু আমাদের মূল জাতীয় ইস্যুগুলোই এখন বিজেপিকে সমর্থন দিতে পারে। এই ধারণা আবার তৈরি হয়েছে যে, ইডি-সিবিআই থেকে বাঁচতেই অনেক দলবদলু বিজেপিতে এসে জুটেছে। এই ধারণাও তৈরি হয়েছে, যে রাজ্যে বিজেপি তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। এটা দলবদলু তৃণমূল নেতাদের সংগঠনে পরিণত হয়েছে। আমরা আবার একমাত্র বিকল্প হয়ে উঠতে পারি যদি ২০১৯ এর সাংগঠনিক কৌশল ফিরিয়ে আনি।
আশা করি আপনি আপনার সুচিন্তিত ভাবনা দিয়ে সঠিক পদক্ষেপ করবেন।”
Be the first to comment