স্কুল খোলার বিরুদ্ধে মামলা খারিজ হাইকোর্টে, ১৬ নভেম্বর থেকেই খুলছে স্কুল

Spread the love

স্কুল-মামলা খারিজ হয়ে গেল কলকাতা হাইকোর্টে। আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়লেন মামলাকারী। স্কুল খোলার বিষয়ে আপাতত হস্তক্ষেপ করতে নারাজ হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার জনস্বার্থ মামলার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব। অভিযোগ থাকলে অভিভাবকরাই আদালতে আসবেন, মন্তব্য প্রধান বিচারপতির।

মামলাকারী আইনজীবী বললেন, আমাদের তরফ থেকে বক্তব্য ছিল, অনেক অভিভাবকই স্কুল খোলার বিষয়ে সদিচ্ছা প্রকাশ করছেন না কারণ তাঁদের অনেকেরই সন্তানের ভ্যাকসিনেশন সম্পূর্ণ হয়নি। টিচিং ও নন টিচিং স্টাফ এরকম অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা সাড়ে ৯টার মধ্যে স্কুলে পৌঁছতে পারবেন না। এই জায়গাটা আদালত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেছে। রাজ্যের তরফ থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে, যদি কোনও ছাত্রছাত্রী কিংবা স্টাফের অসুবিধা হয়, সমস্যায় পড়তে হয়, তাঁদের দিকটা সহানুভূতির সঙ্গে দেখা হবে।

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, যাঁরা স্কুল করতে ইচ্ছুক, তাঁরা স্কুলে আসতে পারেন। কিন্তু যাঁদের অসুবিধা রয়েছে, তাঁরা স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাবেন। তাঁর বক্তব্য, স্কুল কর্তৃপক্ষ সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করবে। এজি বলছে, স্কুলে অতিরিক্ত সময় কোভিড প্রোটোকলের জন্য ধার্য করা হয়েছে। আদালতে এজি জানান, আন্তর্জাতিক অর্গানাইজেশন বলেছে মানসিক স্বাস্থ্য নষ্ট হচ্ছে অনলাইন পড়াশোনায়। বাংলা দেশের সবচেয়ে শেষে স্কুলে খুলছে।

রাজ্যের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সকাল সাড়ে ন’টা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত নবম ও একাদশ শ্রেণি, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণিকে ১০.৩০ থেকে বিকেল ৪ টে পর্যন্ত করোনা বিধি মেনে প্রতিদিন স্কুল করতে হবে। অথচ মামলাকারীর বক্তব্য, এমন অনেক পড়ুয়াই আছে, যাদের ভ্যাকসিন ডোজ সম্পূর্ণ হয়নি। এতে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়বে। অতিরিক্ত সময় স্কুল থাকার ক্ষেত্রেও একই সমস্যা দেখা দেবে।

মামলাকারী সুদীপ ঘোষ চৌধুরীর আদালতে সওয়াল করেন, বিশেষজ্ঞদের দিয়ে একটি কমিটি করা হোক। সেই কমিটি সময় কমিয়ে কীভাবে স্কুল চালু রাখা যায়, তার সুপারিশ করা প্রয়োজন। তাঁর বক্তব্য ছিল, রাজ্যের বিজ্ঞপ্তিতে একাধিক জায়গায় বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।

এজি এদিন আদালতে জানান,  অতিরিক্ত সময় নেওয়া হয়েছে কারণ ১০ মিনিট প্রতিদিন করোনা সচেতনতার ক্লাস করানো হবে। সব কোভিড গাইডলাইন মানা হচ্ছে। ছাত্ররা স্কুলে যেতে চাইছে। সিবিএসই ইতিমধ্যেই জানিয়েছে অফলাইন পরীক্ষা হবে। শুধু কি রাজ্যের স্কুলের ক্ষেত্রে সমস্যা? দুবছর এর পর আর কতদিন বসে থাকবো? গ্রাম বাংলায় অধিকাংশ শিক্ষক স্কুলের কাছেই থাকেন। ভ্যাকসিনেশনের ক্ষেত্রেও এজি স্পষ্ট করেন, ৪ শতাংশের কম পড়ুয়ার ভ্যাকসিনেশন হয়নি।

তবে তা খারিজ করে দেয় আদালত। মামলাকারীর বক্তব্যে সন্তুষ্ট হয় না আদালত। তাঁর দায়ের করা জনস্বার্থ মামলা খারিজ হয়ে যায়। অর্থাৎ ১৬ নভেম্বর থেকে খুলবে স্কুলের দরজা। আপাতত নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা স্কুলে যাবে। এরপর ধাপে ধাপে বাকিদেরও ক্লাস চালু হবে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়েই রাজ্যের শিক্ষা দফতর জেলাগুলিতে নির্দেশিকা পাঠিয়েছে কী ভাবে স্কুল খুলতে হবে।

পাশাপাশি শিক্ষক শিক্ষিকাদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণেরও উল্লেখ রয়েছে এই স্কুল রিওপেন বুকলেটে। যাতে কারও জ্বর এলে বা অসুস্থ হলে প্রাথমিক ভাবে তা সামাল দিতে পারেন স্কুলে স্যার, দিদিমণিরা। আরও একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েরও উল্লেখ রয়েছে এই গাইডলাইন বুকে। বার বার শিক্ষাবিদ বা চিকিৎসকরা যেটা বলছিলেন, সম্ভব হলে দুই শিফটে ক্লাস হোক। এখানেও বলা হয়েছে, পরিস্থিতি ও পরিকাঠামোর দিকে নজর রেখে প্রয়োজনে স্কুল দুই শিফট অর্থাৎ মর্নিং ও ডে’তে ক্লাস করাতে পারে।

করোনার বিষয়ে অভিভাবক ও পড়ুয়াদের সতর্ক করার দায়িত্বও স্কুলকেই দিয়েছে রাজ্য। করোনা সম্পর্কে অবহিত হতে হবে। কী করা যাবে এবং কী করা যাবে না সে বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। ‘ডু অ্যান্ড ডোন্টস’-এরও একটি তালিকা রয়েছে বিকাশ ভবনের স্কুল রিওপেন বুকলেটে। সেখানে বলা হয়েছে, জ্বর হলে কোনও অভিভাবক যেন পড়ুয়াকে স্কুলে না পাঠান। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, ক্লাস চলাকালীন একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর পর ক্লাসরুম, ল্যাব বা অন্যান্য ঘরগুলি স্যানিটাইজ করতে হবে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*