অণুগল্প – শেষ মুহূর্ত

Spread the love

দীপক আঢ্য –

চলে যাচ্ছে শ্রুতিধর। শ্রুতিধর মুখোপাধ্যায় কবি ও গল্পকার। দীর্ঘ রোগভোগের পর। যদিও এখনো প্রাণ আছে। ভেন্টিলেটর এ। দূর থেকে দেখা ছাড়া কারও উপায় নেই কিছু। নিকটাত্মীয়রা এসেছেন। এসেছেন কবি- সাহিত্যিক বন্ধুরাও।সকলের মুখে একটাই কথা, প্রার্থনা করো। যদি সকলের প্রার্থনায় ফিরে আসে এ যাত্রায়।

সন্তানতুল্য ভাইঝি কিঙ্কিণী সকাল থেকে ঠাকুরঘরের সামনে। কাকু-ই তার জীবনের একমাত্র সহায় — অবলম্বন। কবে সে নিজের বাবা-মাকে হারিয়েছে মনেও পড়েনা। আজ যেন দ্বিতীয়বার অনাথ হতে চলেছে সে। চোখেমুখে ক্লান্তি আর কষ্টের প্রতিচ্ছবি। ভাবনায় উদাসীন।
মনিপিসি এগিয়ে যায় কিঙ্কিণীর কাছে। মনিপিসি কাকুর সহপাঠিনী। ডাক্তার।সে ইতিপূর্বে তার কাছ থেকেও জেনেছে কাকুর ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব। মনিপিসির স্নেহের হাতের স্পর্শে সম্বিত ফেরে কিঙ্কিণীর।

— ভাবিস নে। আমরা তো সব আছি। ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস রাখ।

কিঙ্কিণীর দৃষ্টি খর। গলায় অস্বাভাবিক স্পষ্টতা। “তাইতো প্রার্থনা করছি, এবার মানুষটাকে তুলে নাও। পিম্পি আর আন্টি যে অপেক্ষা করছে দীর্ঘ দিন ধরে। কাকু আর কতদিন ওদের ছেড়ে থাকবে বলতে পার পিসিমনি?”

কিঙ্কিণীর কথায় থতমত মনিপিসি। মুহূর্তে মনে পড়ল, ঠিক দুবছর আগে এমনি বৈশাখের নিদাঘকালে দুর্ঘটনায় শ্রুতিধর চিরকালীন হারিয়েছে তার একমাত্র ছোট্ট পাঁচ বছরের মেয়ে পিম্পির সাথে সাথে তার মাকেও।

কিঙ্কিণীর কথায় পুরনো স্মৃতিগুলো ফ্লাশব্যাকের মতো ভেসে উঠতেই চোখদুটো যেন ঝাপসা হয়ে আসে মনিপিসির।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*