মহারাষ্ট্র নাটকে নতুন মাত্রা যোগ করল এনসিপি নেতা অজিত পাওয়ারের টুইট। রবিবার বিকেলে একটি টুইট করে তিনি লেখেন ‘আমি এনসিপির সঙ্গে ছিলাম এবং পরবর্তী সময়েও থাকব। শরদ পাওয়ারই আমার নেতা। আমাদের বিজেপি-এনসিপি জোট আগামী পাঁচ বছর মহারাষ্ট্রের জনগণকে সুন্দর এবং সুস্থ সরকার দেবে।’ আর এই টুইট ঘিরেই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জল্পনা।
গতকালই সাংবাদিক বৈঠকে এনসিপির তরফ থেকে অজিত পাওয়ারকে দল বিরোধী কাজের জন্য বহিষ্কারের কথা জানানো হয়। সূত্রের খবর দলের এই সিদ্ধান্তে সায় দেন এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ারও। তার ঠিক ২৪ ঘণ্টা পরে অজিতের এহেন টুইট ঘিরে তৈরি হয়েছে রহস্য। এই টুইটের আগেই অজিত পাওয়ার আরও একটি টুইট করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ জানান। আর এরপরেই শরদ পাওয়ারকে ‘নিজের নেতা’ বলে টুইটকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে আস্থা ভোট আজ নয় বরং এই বিষয়ে আগামীকাল সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। দেবেন্দ্র ফড়ণবীসকে স্বস্তি দিয়ে রবিবারের বদলে আস্থা ভোটের সম্ভাবনা আগামীকাল। রাজ্যপাল ভগত সিং কোশিয়ারি সরকার গঠনের যে সম্মতিপত্র দিয়েছিলেন কেন্দ্রকে আগামীকাল তাও পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত।
রবিবার শুনানি শুরু হতেই বিজেপির তরফ থেকে পিটিশনের জবাব দেওয়ার জন্য দুই থেকে তিন দিনের সময় চাওয়া হয়। এই আবেদনে সাড়া দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানায় মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামীকাল সকাল ১১:৩০ থেকে।
শনিবার অমিত শাহের মাস্টারস্ট্রোকে বিপাকে পড়ে কংগ্রেস-এনসিপি-শিবসেনা তিন দলই। শনিবার সকালে কাউকে না জানিয়েই অজিত পাওয়ারকে পাশে নিয়ে শপথ নিয়ে নেন দেবেন্দ্র ফড়ণবীস। বিজেপির সরকার গঠন অবৈধ বলে এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে তাঁরা। সরকার গঠনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দ্রুত সংখ্যা গরিষ্ঠতার প্রমাণ দিক দেবেন্দ্র ফড়ণবীস এবং অজিত পাওয়ার। সরকার গঠনের ক্ষেত্রে তাঁদের সংখ্যা গরিষ্ঠতা নেই বলে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দেবেন্দ্র ফড়ণবীসের শপথগ্রহণ বাতিলের জন্য সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন কংগ্রেস এবং এনসিপি।
এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি বিচারপতি এনভি রামান্না, বিচারপতি অশোক ভূষণ এবং বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার বেঞ্চ। মামলাকারীদের পক্ষে আদালতে সওয়াল করার কথা দুই বর্ষীয়ান আইনজীবী তথা কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি ও কপিল সিব্বলের। অন্য দিকে থাকবেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। এই শপথগ্রহণ অবৈধ বলে বাতিল ঘোষণা করার পাশাপাশি বিজেপিকে দ্রুত সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দেওয়ার জন্য দিন নির্ধারণের আর্জিও জানানো হয়েছে এই মামলায়।
শনিবার ভোর রাতে বিজেপির ‘তুরুপের তাসে’ মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের প্রক্রিয়া আচমকাই নাটকীয় মোড় নেয়। উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বে শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস যখন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে ফেলেছে, তখনই বিরোধীদের ‘সুখনিদ্রা’ ছিনিয়ে নেয় বিজেপি হাইকম্যান্ড। এনসিপির অজিত পাওয়ারকে সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার মধ্যরাতেই রাজভবনে হাজির হন মহারাষ্ট্রের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়ণবীস। শনিবার সাত সকালে কার্যত চুপিসাড়ে রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়ে ফেলেন দেবেন্দ্র ফডণবীস। উপমুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন অজিত পওয়ার । রাজ্যপালের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শনিবারই সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করে জরুরি ভিত্তিতে শুনানির আর্জি জানিয়েছিল বিরোধী শিবির। শনিবারই মামলা নথিভুক্ত করে আজ বেলা সাড়ে ১১টায় শুনানির সময় নির্ধারিত করে শীর্ষ আদালত।
তিন দলের ঠিক কী অভিযোগ? বিরোধীদের দাবি, চুপিসাড়ে সরকার গঠনের বিষয়টি ভীষণ ‘অস্পষ্ট’ এবং রাজনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী। সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ১৪৫ জন বিধায়কের সমর্থন নেই দেবেন্দ্র ফডণবীসের কাছে। তার পরেও তিনি কী ভাবে মুখ্যমন্ত্রী এবং উপমুখ্যমন্ত্রীপদে শপথ নিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। রাজ্যপালের এই সিদ্ধান্ত স্বেচ্ছাচারী। সম্পূর্ণ ‘অসৎ উদ্দেশ্যে’ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজভবন। তাই ওই শপথগ্রহণ বাতিলের আর্জি জানিয়েছে বিরোধী শিবির।
বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দেওয়ার দিন দেরি হলে বিধায়ক কেনাবেচার আশঙ্কা করছে বিরোধী শিবির। অর্থাৎ হাতে সময় পেলেই টাকার বিনিময়ে অন্য দলের বিধায়কদের কেনার সুযোগ পাবে বিজেপি। তাই মামলায় এও দাবি করা হয়েছে, দ্রুত সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দেওয়ার দিন নির্ধারণ করুন রাজ্যপাল। শনিবার মামলা গ্রহণ এবং শুনানির সময় নির্ধারণ করে ভারতের শীর্ষ আদালত। এই প্রসঙ্গে কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সূরজেওয়ালা বলেন, ‘আমরা দ্রুত সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দেওয়ার জন্য আর্জি জানিয়েছি। আদালতের রেজিস্ট্রার আমাদের মামলা গ্রহণ করেছেন এবং রবিবার সকাল সাড়ে ১১টায় শুনানির সময় নির্ধারিত করেছেন। আমরা আশাবাদী, গণতন্ত্র ও আইনের জয় হবে।’
রবিবার এই মামলার শুনানিতে প্রাথমিকভাবে ‘ফ্লোর টেস্ট’ বা ‘আস্থা ভোটের’ ক্ষেত্রে এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নেয় নি সুপ্রিম কোর্ট।
অজিত পাওয়ারের টুইট-
দেখুন শরদ পাওয়ারের টুইট-
Be the first to comment