সিকিম-বাংলা রেলপথ প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে দুই রাজ্যের সরকার এবং পাশাপাশি GTA উদ্যোগী হয়েছে। দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এগোচ্ছে রেল মন্ত্রক। কিন্তু, প্রকল্পের জেরে তাঁদের উচ্ছেদ করা হবে, এই আশঙ্কায় বনবস্তির বাসিন্দারা আন্দোলন শুরু করেছেন। এনিয়ে বনবস্তির বাসিন্দাদের পক্ষ নিয়ে আন্দোলন করছে একটি সংগঠন। সেই আন্দোলনে যোগ দিয়ে শাস্তির মুখে পড়েছেন এক শিক্ষিক।
নবস্তি শ্রমজীবী মঞ্চ নামে আন্দোলনকারী ওই সংগঠনের বক্তব্য, প্রকল্পের এলাকায় ২৪টি বনবস্তির ৪০ হাজার বাসিন্দার বসবাস। ওই প্রকল্প রূপায়িত হলে তাঁদের উচ্ছেদ করা হবে বলে আশঙ্কায় ভুগছেন তাঁরা। মঞ্চের দাবি, বনবস্তির বাসিন্দাদের জন্য নির্দিষ্ট আইন আছে। আইন অনুসারে ২০০৫ সালের আগে পর্যন্ত যাঁরা বনবস্তিতে বসবাস করেছেন তাঁদের নিয়ে গ্রামসভা গঠন করার কথা। বনবস্তির বাসিন্দাদের জমির অধিকার পাওয়ার কথা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করলেও জমির অধিকার মেলেনি এই এলাকার বনবস্তিবাসীদের। ফলে পুনর্বাসনের সুবিধা থেকে তাঁরা বঞ্চিত হবেন বলে আশঙ্কা করছেন।
মঞ্চের তরফে সৌমিত্র ঘোষ বলেন, “রেলকে এলাকায় প্রকল্প করতে হলে বাসিন্দাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। তবে তার আগে বন দপ্তরের উচিত গ্রামসভাকে স্বীকৃতি দিয়ে বনবস্তিবাসীদের জমির অধিকার দেওয়া। দাবি না মিটলে আন্দোলন হবে। মঞ্চের এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন কুমলাই হাই স্কুলের শিক্ষক লীলা কুমার গুরুং। এজন্য তাঁকে আচমকা মেদিনীপুরে বদলি করা হয়েছে।”
শিলিগুড়িতে আজ সাংবাদিক বৈঠকে বনবস্তির বাসিন্দারা বলেন, “২০০৯ সালে প্রকল্পের শিলান্যাস হয়েছে। আমরা তখন থেকেই একই দাবি তুলেছিলাম। সে কারণেই GTA-র তৎকালীন চেয়ারম্যান বিমল গুরুং প্রকল্পের নো অবজেকশন সার্টিফিকেট আটকে দিয়েছিলেন। কিন্তু, এখন শুনছি GTA-র প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনয় তামাং প্রকল্পে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট দিতে আগ্রহী হয়েছেন। আন্দোলনকারীদের দেশদ্রোহী, বিচ্ছিন্নতাবাদী বলা হচ্ছে। অথচ আমরা জমির ন্যায্য অধিকারের পক্ষে লড়ছি। এই লড়াই আমাদের অধিকার। এই জমির মালিক GTA নয়। তাই তাদের দেওয়া সার্টিফিকেট নিয়ে রেলকর্তারা কাজে এলে বিরোধ বাড়বে।”
বনবস্তিবাসীরা আরও বলেন, “আইন অনুসারে জমির অধিকার পাওয়ার কথা বনবস্তিবাসীদের। এলাকায় বন সংক্রান্ত কাজ ছাড়া অন্য কাজের ক্ষেত্রে স্থানীয় গ্রামসভার অনুমতি নেওয়া আইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলক। রাজ্য সরকার আমাদের জমির দখলদার হিসেবে না দেখিয়ে, বনবস্তির বাসিন্দা হিসেবে স্বীকৃতি দিলে আমরা প্রথমে জমির অধিকার পাব। জমির অধিকার পেলে রেলের সঙ্গে আলোচনায় বসে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন চাইতে পারব। ইতিমধ্যেই জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে বহু বনবস্তিতেই জমির অধিকার দিতে পদক্ষেপ করেছে বন দপ্তর। সিকিম-বাংলা রেলপথ প্রকল্পের কাজ চালুর আগে প্রকল্প এলাকাতেও আমাদের জমির আইনি অধিকার দিতে হবে, না হলে লড়াই হবেই।”
শিক্ষকের বদলি সম্পর্কে সাংবাদিক বৈঠকে বনবস্তির বাসিন্দারা বলেন, “আন্দোলনে প্রথম থেকেই আমাদের সঙ্গে রয়েছেন লীলা কুমার গুরুং। কিন্তু হঠাৎ জেলাশাসকের প্রস্তাবে বদলি করা হয়েছে তাঁকে। তাঁকে মেদিনীপুরে পাঠিয়ে দিয়ে এই আন্দোলন ভাঙার চেষ্টা হচ্ছে।”
জেলাশাসক জয়শী দাশগুপ্ত বলেন, “ওই শিক্ষিকের বদলি রুটিন। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। ওরা (বনবস্তিবাসী) যথাযথ কাগজপত্র দেখাতে না পারলে (জমির) অধিকার পাবেন কেমন করে ? আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি। আলাপ আলোচনাতেই সমস্যা মিটবে।”
Be the first to comment