ব্রততী ঘোষ
অ্যালার্জি হল পরিবেশের কতকগুলো বস্তু যা শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগপ্রতিরোধ তন্ত্রের অতিসংবেদনশীলতার ফলে তৈরি হওয়া অবস্থা, যা অধিকাংশ ব্যক্তির ক্ষেত্রে সাধারণত কোনো সমস্যা তৈরি করে না। এই অবস্থাগুলোকে একত্রে অ্যালার্জিক ডিজিজ বা অ্যালার্জি জনিত রোগ বলে। সচরাচর কোনো জিনিস যদি শরীরে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তবে তাকে অ্যালার্জি বলা হয়। যেসব দ্রব্য অ্যালার্জি সৃষ্টি করে তাকে বলা হয় অ্যালারজেন বা অ্যান্টিজেন এবং এসব দ্রব্য দেহে প্রবেশের ফলে দেহের অভ্যন্তরে যে দ্রব্য সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় অ্যান্টিবডি। অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি পরস্পর মিলিত হলে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় অ্যান্টিজেন-অ্যান্টিবডি বিক্রিয়া।
হাঁপানির সাথে অ্যালার্জির গভীর সংযোগ আছে। ফুলের পরাগ, দূষিত বাতাস, ধোঁয়া, কাঁচা রঙের গন্ধ, চুনকাম, ঘরের ধুলো, পুরনো ফাইলের ধুলো দেহে অ্যালার্জিক বিক্রিয়া করে হাঁপানি রোগের সৃষ্টি করে। কাজেই যারা হাঁপানিতে ভুগছেন তাদের এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
ছত্রাক দেহে অ্যালার্জি তথা হাঁপানি সৃষ্টি করে। ছত্রাক হচ্ছে অতি ক্ষুদ্র সরল উদ্ভিদ। ছত্রাক ২০০ সে.গ্রে. থেকে ৩২০ সে. গ্রে. উত্তাপে জন্মায়। ভেজা বা স্যাঁতস্যাঁতে পদার্থে ছত্রাক জন্মাতে দেখা যায়। আবার কোনো কোনো খাদ্য ছত্রাক দ্বারা দূষিত হয়ে থাকে। পনির ছত্রাক মিশিয়ে তৈরি করা হয়। কোনো কোনো পাউরুটি এবং কেক তৈরি করতেও Yeast জাতীয় ছত্রাক ব্যবহার করা হয়। আলু, পেঁয়াজও ছত্রাক দ্বারা দূষিত হয়। এই ছত্রাক অ্যালার্জি তথা হাঁপানির একটি অন্যতম কারণ।
ঘরের ধুলো হাঁপানিজনিত অ্যালার্জির জন্য একটি অন্যতম কারণ। ঘরের ধুলোতে একটি ক্ষুদ্র জীবাণু থাকে যা কিনা ‘মাইট’ নামেই পরিচিত। এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শতকরা প্রায় ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে অ্যালার্জি সৃষ্টির জন্য এই ‘মাইট’ দায়ী। সে জন্য যারা হাঁপানিজনিত অ্যালার্জিক সমস্যায় ভোগেন তারা ঘরের ধুলো সব সময় এড়িয়ে চলবেন। বিশেষ করে যখন ঘর ঝাড়ু দেবে তখন সেখান থেকে দূরে সরে থাকতে হবে। ঘরের আসবাবপত্র যেমন- কম্বল, পর্দা, তোশক, বালিশ প্রভৃতিতে যে ধুলো জমে থাকে তা পরিষ্কার করার সময় দূরে সরে থাকতে হবে।
খাবারেও প্রচুর অ্যালার্জির সম্ভাবনা থাকে। যেমন- দুধে অ্যালার্জি বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে গরুর দুধে খুব বেশি অ্যালার্জি হতে দেখা যায়। গরুর দুধে বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে গায়ে চুলকানি, হাঁপানি ইত্যাদি হতে দেখা যায়। এ ছাড়া গম, ডিম, মাছে অ্যালার্জি হতে দেখা যায়। বাদাম, কলা, আপেল, আঙ্গুর, ব্যাঙের ছাতা, পেঁয়াজ, রসুন, চকোলেট, এমনকি ঠাণ্ডা পানীয় কোনো কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে অ্যালার্জি সৃষ্টি করে।
পোকার কামড়ে গায়ে চুলকানি, ফুলে যাওয়া এমনকি হাঁপানি পর্যন্তও হতে দেখা যায়। মশা, বেলেমাছি, মৌমাছি, বোলতা, ভীমরুল প্রভৃতি পোকার কামড়ে দেহে অ্যালার্জির সৃষ্টি হয়। এছাড়াও রোমশ, পালকবিশিষ্ট জীবজন্তু যেমন-বিড়াল, কুকুর, ঘোড়া প্রভৃতি গৃহপালিত পশু অনেক সময় অ্যালার্জি সৃষ্টির জন্য বিশেষভাবে দায়ী। এ ছাড়া একটি চর্মরোগ আছে যাকে বলা হয় আর্টিকোরিয়া। বাংলায়, কেউ কেউ আমবাতও বলে থাকেন। এ ক্ষেত্রে ত্বক চাকা চাকা হয়। আর ফুলে উঠে চুলকাইয়। এটিও হল অ্যালার্জির অন্যতম প্রকাশ। বেশির ভাগ লোকের জীবনেই কোনো না কোনো সময় এই রোগ হতে দেখা যায়। এই আর্টিকোরিয়া শরীরের কোনো একটা অংশে থাকতে পারে অথবা সারা শরীর ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাতে বিভিন্ন আকারের লালচে চাকা চাকা ফোলা দাগ হতে দেখা যায় এবং সেই সাথে থাকে প্রচণ্ড চুলকানি। অনেক কারণের মধ্যে খাদ্য অ্যালার্জি থেকেও এ রোগ হতে পারে। যেমন- বাদাম, ডাল, মাংস, ডিম ইত্যাদি। এ ছাড়া এই অ্যালার্জি পোকা থেকেও হতে পারে যেমন- বোলতা, মৌমাছি, ভীমরুল, মাকড়সা প্রভৃতির কামড়ে এই অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া ওষুধে অ্যালার্জি হতে পারে। অনেক ওষুধই অ্যালার্জি সৃষ্টির জন্য দায়ী। এর মধ্যে পেনিসিলিন আর এসপিরিন অন্যতম। মোট কথা অ্যালার্জি একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। আপনি অ্যালার্জিতে ভুগলে লক্ষ করবেন কোনো খাবারে আপনার অ্যালার্জি হয় কিনা? যদি খাবারের সাথে সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়, তবে সেই খাবার অবশ্যই পরিহার করতে হবে। মোট কথা, যে কারণে আপনার অ্যালার্জি হয় সেই কারণ এড়িয়ে চলতে হবে।
Be the first to comment