ঘুম যখন ‘অভিশাপ’

Spread the love

দিনের শেষে ঘুমটাই আসল বিশ্রাম। দিনে আট ঘণ্টা ঘুম সুস্থ শরীরের লক্ষণ। কিন্তু, এই ঘুম যদি যখন তখন চলে আসে। ধরা যাক আপনি বাইক চালাচ্ছেন, হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়লেন। বা বাসে উঠছেন, সেই সময়ই ঘুম এসে গেল।তাহলে ?
শুনতে আজগুবি মনে হলেও বছরের পর বছর এইভাবেই ঘুমিয়ে পড়ছেন কাজাকাস্তানের কালাচি গ্রামের মানুষ। এই গ্রামে ঘুম যেন রহস্যে মোড়া। ২০১৩ সাল থেকে কালাচি গ্রামের মানুষের উপর চলছে ঘুমের অত্যাচার। যার কারণ এখনও খুঁজে বার করতে পারেননি ডাক্তার বা বৈজ্ঞানিকরা।

জানা যাচ্ছে, এই ঘুম আসে হঠাৎ। যে কোনও সময়। কখনও একদিন কখনও বা টানা সাত দিন কালাচির মানুষের চোখ জাপটে থাকে এই ঘুম। যা মানুষের শরীরকে শুধু দুর্বলই করে না, বাড়িয়ে দেয়  রক্তচাপও।
এরকম বেশ কয়েকটি ঘটনা শুনলে আঁতকে উঠতে হয়-
জানা গেল ভিক্টরের কথা। ২৮ অগস্ট কালাচি থেকে বাইক নিয়ে বেরিয়েছিলেন তিনি। শহরের পথে ছিলেন। হঠাৎ তাঁর চোখে-মুখে অন্ধকার নেমে আসে। তারপর ভিক্টরের কিছু মনে নেই। ২ সেপ্টেম্বর কাজাকাস্তানের একটি হাসপাতালের বেডে তিনি জেগে ওঠেন। বুঝতে পারেন তাঁর চোখে ভয়ানক সেই ঘুম এসেছিল। এরপর থেকে আর সুস্থ হননি ভিক্টর। গত কয়েক মাসে তাঁর রক্তচাপ মারাত্মক ভাবে ওঠা-নামা করছে। মাথা, হাত, পায়ের ব্যথায় কাবু তিনি।

২০১৩ সালে কালাচির  ১২০ জন গ্রামবাসী এভাবেই যখন তখন ঘুমিয়ে পড়তে শুরু করেন। গত কয়েক বছরে সংখ্যাটা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। যাঁরাই হঠাৎ ঘুমোচ্ছেন তাঁরা আর সুস্থ হচ্ছেন না। অনেকেই স্মৃতি শক্তি হারাচ্ছেন, কারণ ছাড়াই ওজনও কমছে। তবে, বেশিরভাগ গ্রামবাসীই মানসিক অবসাদে ভুগছেন বলে জানাচ্ছেন ডাক্তাররা। চলতি বছরেই ১৫২ জন এই ঘুমের শিকার হয়েছেন।

অনেক চেষ্টা করেও এই ঘুম প্রতিরোধের ওষুধ বের করতে পারছেন না ডাক্তাররা। তবে, কারণ হিসেবে ইউরেনিয়াম খনিকে দায়ী করা হচ্ছে। পরমাণু শক্তি বাড়াতে কাজাখস্তানের ইউরেনিয়াম খনিকেই কাজে লাগায় রাশিয়া। ক্রাসনোগরস্কি নামে ওই খনি থেকে কালাচির দূরত্ব মাত্র কয়েক হাত। ১৯৯০ সালে খনি বন্ধ হলেও সেই তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব পড়েছে গ্রামে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, এখনও বিষয়টিতে নিশ্চিত নন ডাক্তাররা।

আপাতত, এই ঘুম থেকে মুক্তি পেতে চান কালাচির মানুষ। এখনও পর্যন্ত এই ঘুমের কারণে কোনওরকম অপরাধমূলক কাজ গ্রামে ঘটেনি। গ্রামের মানুষ একে অন্যের পাশে দাঁড়িয়েই অভিশপ্ত এই ঘুমের মোকাবিলা করেন।তবে যত দিন যাচ্ছে ক্রমশই ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন তাঁরা। ঘুম যেন এই গ্রামের অভিশাপ।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*