নয়াদিল্লি: ২০২১-এর বাংলা বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্য নেতৃত্ব নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে দল। খোলনলচে পাল্টে ফেলা যেতে পারে রাজ্য বিজেপির কাঠামো। আর সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির মুখও বদলে যেতে পারে। দলীয় সূত্রে খবর, রাজ্যে বিজেপির নতুন মুখ হিসেবে ভাবা হচ্ছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির নাম। তবে এই ব্যাপারে এখনও বিজেপির তরফে অফিসিয়াল কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে দলের অন্দরের খবর, আগামী দিনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধী শক্তি হিসেবে স্মৃতিকেই বাংলায় পাঠাতে পারে কেন্দ্রীয় দল।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন নিজেকে ‘বাংলার মেয়ে’-এর তকমা দিয়ে ভোটে বাজিমাত করেছিলেন তেমনই স্মৃতিকেও সেই জায়গায় গ্রামবাংলার ঘরের মেয়ে রূপেই প্রতিষ্ঠিত করতে চায় পদ্ম শিবির। দিল্লিতে জন্ম হলেও স্মৃতির ‘বঙ্গ যোগ’ খুবই জোড়ালো। স্মৃতির বাবা পাঞ্জাবি-মহারাষ্ট্রীয় হলেও মা বাঙালি। পুরো দস্তুর বাঙালি মহিলা শিবানী বাগচীর মেয়ে স্মৃতি। তাই তাঁর ধমনীতে বাঙালি রক্তও বইছে। সুতরাং জন্মসূত্রেই প্রভৃতি বাংলার মেয়ে। ছোটোবেলায় পড়াশোনা করেছেন নয়াদিল্লির হোলি চাইল্ড অক্সিলিয়াম স্কুলে। তারপরে উচ্চশিক্ষা সেরেছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
জীবনের প্রথমে স্মৃতি কেরিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন অভিনয়ের জগতকে। প্রথমে চেষ্টা করেছিলেন মডেলিং দুনিয়াতেও। তবে ১৯৯৮ সালে মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগীতাতে কোনোভাবেই নজর কাড়তে পারেননি। তারপর থেকে প্রচুর টেলিভিশন সিরিয়ালে কাজ করেছেন স্মৃতি। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়েছিলেন ২০০৭ সালে একতা কাপুরের সিরিয়াল ‘কিউঁকি সাস ভি কবি বহু থি’-এর মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করে। তবে ছোটোবেলা থেকেই তার রাজনীতিতে ঝোঁক ছিল। পিতামহের মতাদর্শে বড় হয়ে ওঠা স্মৃতি ছোট্টবেলা থেকেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সদস্য ছিলেন। তাঁর মা-ও ‘জন সংঘ’-এর সদস্য ছিলেন দীর্ঘকাল। ২০০৩ সালে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দিয়ে পরের বছর স্মৃতি প্রথমবার দিল্লির চাঁদনি চক থেকে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন।
২০১০ সালে স্মৃতি ভারতীয় জনতা পার্টির জাতীয় সম্পাদক নির্বাচিত হন। তাকে ওই সময়েই বিজেপির মহিলা মোর্চার সর্বভারতীয় সভানেত্রী নিযুক্ত করা হয়। ২০১১ সালে স্মৃতি রাজ্যসভার সদস্য মনোনীত হন। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের আমেঠি থেকে তৎকালীন কংগ্রেস প্রধান রাহুল গান্ধীর কাছে হেরেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রীসভায় জায়গা করে নেন। পরের নির্বাচনে আমেঠি থেকে জয়ীও হ্ন। বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার নারী ও শিশুকল্যান দফতরের মন্ত্রী। তাঁর দায়িত্বে রয়েছে টেক্সটাইল মন্ত্রীত্বও। এমন একজন নেত্রীকে বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধ মুখ হিসেবে নিয়ে আসাটা বিজেপির জন্য এক বিরাট বড় সাহসী পদক্ষেপ হতে পারে। তবে এই বদলি এখনও চিন্তাভাবনার পর্যায়েই রয়েছে বলে সূত্রে জানা গিয়েছে।
Be the first to comment